মূলত রপ্তানির লক্ষ্যেই নিরাপদ ও বালাইমুক্ত আম উৎপাদনে গত মৌসুমের পর থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে বাগান পরিচর্যায় নিয়োজিত ছিলেন চাষিরা। কিন্তু আম রপ্তানির সেই স্বপ্ন কি ভঙ্গ হতে বসেছে? এমন প্রশ্ন ও অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে চাষিদের।
কারণ চলতি মৌসুমে এখনো বায়ারদের (বাইরের আম ক্রেতা ) দেখা মেলেনি। কৃষি বিভাগ কিংবা আম রপ্তানির মধ্যস্থতাকারী বেসরকারি সংস্থাও এখনো কোনো সুখবর দিতে পারেনি চাষিদের। ফলে বিগত চার বছর ধরে আম রপ্তানির এ ধারায় এবার ছেদ পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এজন্য আম রপ্তানির বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদনকারী চাষিরা।
রপ্তানির জন্য এখনো দেখা মেলেনি কোনো বায়ারের কারণ কি ‘২২ মে’ হিমসাগর আম ভাঙার সময় বেধে দেওয়া। এ প্রশ্ন তুলেছেন খোদ চাষিরাই।
গত চার বছর আম রপ্তানির ধারা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহীকে ছাড়িয়ে দেশে প্রথমবারের মতো সাতক্ষীরা থেকে আম রপ্তানির মূল কারণ ছিল আবহাওয়া ও প্রকৃতিগত কারণে। অন্যান্য জেলার তুলনায় সাতক্ষীরার আম অন্তত ১৫ দিন আগে পাকে। একই সঙ্গে খেতেও সুস্বাদু । শুধুমাত্র আগে পাকার এ সুযোগ নিয়েই সাতক্ষীরা থেকে আম রপ্তানির সম্ভাবনা তৈরি হয়। কিন্তু চলতি মৌসুমে সরকার হিমসাগর আম ভাঙা শুরু সময় ২২ মে বেধে দেওয়ায় এখনো কোনো বায়ার সাতক্ষীরার আম রপ্তানির ব্যাপারে আগ্রহ দেখায়নি।
ফলে দেশের বাইরে আম রপ্তানির জন্য যেসব বাগান প্রস্তুত করা হয়েছিলো, সেসব চাষিরা এখন চরম হতাশায় দিন অতিবাহিত করছেন। কবে নাগাদ আম রপ্তানি শুরু হবে তা জানায় অধীর অপেক্ষায় রয়েছেন তারা। কেউ কেউ আবার লোকসানের ভয়ে কম দামে হলেও দেশীয় বাজারে আম বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
সদর উপজেলার ব্রহ্মরাজপুরের আম ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, স্যারেরা বলছেন- এখনো নাকি বিদেশ থেকে আমের ক্রেতারা আসেনি। তারা নাকি কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। এদিকে আমাদের তো আম বাজারে তোলার সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। এতো কষ্ট করে আম বাগান পরিচর্যা করে এখন এ রকম অবস্থার সম্মুখীন হতে হবে কখনো ধারণায় ছিল না। না জানি এবার কতো টাকা লোকসানের সম্মুখীন হতে হবে?
এদিকে, আম রপ্তানি কার্যক্রম অনিশ্চয়তার মুখে থাকায় দেশীয় বাজারেই আম বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন চাষিরা। জেলা থেকে প্রতিদিন কয়েক হাজার মণ আম ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুষ্টিয়া, বরিশাল, সিলেট ও কুমিল্লাতে চলে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আম রপ্তানি হবে কি না তা নিয়ে সন্দিহান, তাই যে দাম পাচ্ছি তাতেই লোকসান হলেও ছেড়ে দিচ্ছি।
আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা গ্রামের আম ব্যবসায়ী বুলবুল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, যেহেতু এখনো বিদেশে আম পাঠানোর কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি, সেহেতু আমরা দেশীয় বাজারেই আম ছেড়ে দিচ্ছি। তা না হলে আম বাগানে ঝরে পড়ছে।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, সাতক্ষীরা থেকে ২০১৭ সালে ৩১.৮৩ মেট্রিক টন এবং ২০১৮ সালে ২৭ মেট্রিক টন নিরাপদ ও বালাই মুক্ত আম ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়।
গত বছরও ইসলাম এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড, এন আর ইন্টারন্যাশনাল, এন এইচবি করপোরেশনসহ ১৪টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ফ্রান্স, ইতালি, যুক্তরাজ্য, স্পেনসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বিষমুক্ত এসব আম রপ্তানি করে। কিন্তু চলতি মৌসুমে তাদের দেখা মিলছে না।
জানা যায়, আম রপ্তানির পরিমাণ বাড়াতে সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া ও উত্তরণ সফল প্রকল্পের আওতায় জেলার ৫০০ কৃষককে প্রশিক্ষণ দেয়। এসব কৃষক তাদের নিজস্ব ও বর্গা নেওয়া জমিতে নিরাপদ ও বালাই মুক্ত আম উৎপাদনে কঠোর পরিশ্রম করেন।
কলারোয়ার আম চাষি ডব্লিউ বাংলানিউজকে বলেন, এ বছর আমের উৎপাদন ভালো হয়েছে। মাঝে ঝড়-বৃষ্টিতে বেশ ক্ষতি হয়েছে। তবুও সে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যেত বিদেশে আম রপ্তানি করে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত দেশের বাইরে আম পাঠানোর কোনো সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি না।
সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়ার এসসিও মুস্তাফিজুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, ২০১৫ সাল থেকে কৃষকদের সঙ্গে থেকে সাতক্ষীরার আম রপ্তানিতে কাজ করে যাচ্ছে সলিডারিডাড। এ বছর যাতে আরও বেশি বিষমুক্ত আম রপ্তানি হয় সেজন্য বেশি পরিমাণে কৃষককে প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হয়েছে। কিন্তু এক অজানা কারণে এখন পর্যন্ত আম দেশের বাইরে পাঠানোর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে আছে।
এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক অরবিন্দ বিশ্বাস বাংলানিউজকে বলেন, আম রপ্তানির বিষয়ে আমি তেমন কিছু জানি না। আমি বাইরে আছি। খোঁজখবর নিয়ে বলতে পারবো।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩২ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৯
এনটি