মঙ্গলবার (২৮ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ‘ধানসহ কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য, চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপে বক্তারা এ দাবি জানান।
খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ ও পিকেএসএফ এর চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংলাপে খাদ্য অধিকার বাংলাদেশের ভাইস চেয়ারম্যান খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ, সাবেক কৃষি সচিব আনোয়ার ফারুক, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাবেক গবেষণা পরিচালক ড. মো. আসাদুজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সায়েমা হক বিদিশা সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
আয়োজকদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন একশনএইড এর পরিচালক আসগর আলী সাবরী। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সাহানোয়ার সাইদ শাহীন।
এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত কৃষক প্রতিনিধিদের মধ্যে জামালপুরের আনজুমান আরা, নরসিংদীর মুন্নী বেগম, হবিগঞ্জের হরবল্লভ চৌধুরী এবং নাগরিক সামাজের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বক্তারা বলেন, উৎপাদনে সফল হলেও গত কয়েক বছর ধরেই কৃষকের ন্যায্য দাম দিতে অনেকটাই ব্যর্থ হয়েছে। বাড়তি উৎপাদন হলেই কৃষক ও খামারিরা ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। যা কৃষি খাতের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়েছে। ফলে নীতি ও পরিকল্পনার দুর্বলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। এজন্য একটি মূল্য কমিশন গঠনসহ পর্যাপ্ত গুদাম তৈরি এবং কৃষি, খাদ্য ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় স্থাপন করতে হবে।
খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ বলেন, পশ্চিমা উন্নত দেশগুলোতেও সরকার খাদ্য উৎপাদনে ব্যাপক ভর্তুকি দিয়ে থাকে। আমাদের সরকারও এ ক্ষেত্রে ভর্তুকি দেয় কিন্তু এর সুফল আমাদের কৃষকরা সেভাবে পান না মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে। এর একটা বড় কারণ কৃষকরা এদেশে অসংগঠিত। তাদের সংঘঠিত হয়ে রাজনীতিতে আসতে হবে। এজন্য স্থানীয় পর্যায়ে কয়েকটি গ্রাম নিয়ে সমবায় সমিতি করতে হবে। এভাবে আস্তে আস্তে রাজনীতিতে প্রবেশ করতে পারলে বাজার অর্থনীতির ব্যবস্থা কৃষকদের হাতে থাকবে। সরকার শুধু দায়িত্ব পালন করবে।
আনোয়ার ফারুক বলেন, আমাদের কৃষিপণ্য পরিবহন ও বাজার ব্যবস্থাপনায় সমস্যা রয়েছে। বোরো ধানের উৎপাদন বৃদ্ধির কারণেই আমরা আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ বলে দাবি করে থাকি। কৃষি ক্ষেত্রে যাই ঘটুক আমাদের প্রেক্ষাপটে ধান চাষ অব্যাহত থাকবেই। বর্তমানে শ্রমিকের মজুরি গত বছরের তুলনায় ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর বিপরীতে সরকারের ধান ক্রয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণে দীর্ঘসূত্রিতা কৃষককে সংকটে ফেলে দিয়েছে। এ মুহূর্তে কৃষককে তিন চার মাসের জন্য সুদবিহীন ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের স্থানভেদে বিকল্প কৃষি উৎপাদনের দিকে মনোযোগী হতে হবে৷
ড. মো. আসাদুজ্জামান বলেন, আমরা অনেক সুপারিশ করি, কিন্তু কীভাবে তা বাস্তবায়ন করা হবে তা গুরুত্বপূর্ণ। ধান ও চালের বাজারের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে, বিশেষত ক্রেতা ও বিক্রেতার সংখ্যায়। কৃষকদের প্রতিনিধিত্বশীল রাজনৈতিক কণ্ঠস্বরের অভাব রয়েছে দেশে। সাম্প্রতিক সংকট সমাধানে সরকারকে সংবেদনশীল মনে হয়নি। সরকার মাঠ থেকে দ্রুত প্রকৃত তথ্য নেওয়ার চেষ্টা করতে পারত। সরকারের সামর্থ্য না থাকলে গৃহস্থের ঘরেই ধান মজুত রাখার উদ্যোগ নিতে পারত সরকার।
ড. সায়েমা হক বিদিশা বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে মূল্য কমিশনের বেঁধে দেওয়া সুনির্দিষ্ট মূল্যে সরকারিভাবে অনেক পরিমাণে ধান ক্রয় করা হয়। আমাদের দেশেও এ কমিশন গঠন করে সুফল পেতে পারি। ধান আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক কমানো বাড়ানোর তাৎক্ষণিক সুফল কৃষকরা পায় না। এক্ষেত্রে গবেষণা ও মূল্যায়নের প্রয়োজন রয়েছে, যার প্রেক্ষিতে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা সম্ভব।
আসহর আলী সাবরী বলেন, ধান নিয়ে আজকে কৃষকের এ সংকট সৃষ্টি হয়েছে সমন্বয়ের অভাবে। একদিকে বাম্পার ফলন, অন্যদিকে ব্যাপক আমদানি। আবার সরকারের কৃষি খাদ্য ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে রয়েছে সমন্বয়হীনতা। সর্বোপরি রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব। বর্তমানে কৃষক সংগঠনের দুর্বলতা একটি বড় কারণ।
সভাপতির বক্তব্যে ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য কৃষির যান্ত্রিকীকরণের পাশাপাশি কৃষকের কথাও আমাদের চিন্তা করতে হবে। ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হলে স্থায়ী মূল্য কমিশন গঠন করা দরকার। আরো দরকার শক্তিশালী কৃষক সংগঠন।
মূল প্রবন্ধে সাহানোয়ার সাঈদ শাহীন বলেন, দেশে ভূমিহীন কৃষকের সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। কৃষককে বাজারের সাথে সম্পৃক্ত করতে না পারা আমাদের একটি বড় ব্যর্থতা। এক্ষেত্রে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। উৎপাদিত ধানের মাত্র ছয় শতাংশ মজুদের ক্ষমতা সরকারের রয়েছে। কৃষির যান্ত্রিকীকরণ ও উপকরণ ব্যবহারে অদক্ষতা ও প্রতারণার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষক। কৃষিখাতে ভর্তুকি ব্যবহারে রয়েছে ভারসাম্যহীনতা।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৫ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০১৯
জিসিজি/এমজেএফ