তিনি প্রতি বছরের তিন মৌসুম জমিতে ধান লাগিয়ে থাকেন। বোরো, রোপা আউশ ও রোপা আমন মৌসুমে গেলো বছর পর্যন্ত মৌসুমভিত্তিক ধান চাষ করেছেন।
কৃষি বিভাগের হিসাব মতে, পহেলা জুলাই থেকে রোপা আমন মৌসুম শুরু হয়েছে। অবশ্য বিভিন্ন এলাকার কৃষক গেলো কয়েক সপ্তাহ আগ থেকেই জমিতে নেমেছেন। কিন্তু কৃষক ইকবাল হোসেন জমিতে ধান লাগানোর বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি। তবে বীজতলা তৈরি করে রেখেছেন।
শহিদুল ইসলাম নামে আরেক কৃষক একই সুরে বাংলানিউজকে বলেন, জমিতে পা ফেলার আগ থেকেই ব্যয়ের টাকা রাখতে হয়। এরপর মাথার ঘাম পা ফেলে নানা প্রতিকূল অবস্থা পারি দিয়ে ফসল ফলাতে হয়। এতে কষ্টের ফসল বাজারে নিলে দাম পাওয়া যায় না। লোকসানে বিক্রি করতে হয়। মূলধন গায়েব হয়ে যায়। তাহলে বলেন জমিতে ধান লাগানোর সাহস আসে কি করে? প্রশ্ন রাখেন এই কৃষক। বোরো মৌসুমে ধানের দাম না পাওয়ায় লোকসান গুণতে গিয়ে কোমর ভেঙে গেছে কৃষকদের। এরপরও কৃষক বলে কথা। কী বা করার আছে তাদের। অন্য পেশায়ও জানা নেই। নেই বাড়তি পুঁজি বাট্টা। যে হুট করে কৃষি পেশা ছেড়ে অন্য কোনো ব্যবসা বা কাজে নেমে যাবেন। সেটাও তাদের মতো কৃষকদের পক্ষে সম্ভব না। তাই আপতত জমি চাষের কোনো বিকল্প নেই।
তবে অনেক কৃষকই এবার পুরো জমিতে ধান চাষ করবেন না। অনেকেই পরিবারের চাহিদা অনুযায়ী জমিতে ধান চাষ করবেন। বাকি জমিতে অন্য ফসল চাষ করার চিন্তা ভাবনা করছেন তারা। আবার কেউ কেউ লোকসান স্বীকার করে লাভের আশায় বুক বেঁধে পুরো জমিতে ধান লাগাবেন।
খোদ কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারাও চলতি মৌসুমের রোপা আমন চাষ নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন। লোকসানের কারণে তারাও কৃষকদের মধ্যে ধান চাষ নিয়ে এখনো তেমন একটা আগ্রহ দেখতে পাচ্ছেন না। অনেক কৃষক এখনো বীজতলা তৈরি করছেন।
শনিবার (০৬ জুলাই) পর্যন্ত প্রায় ৭ হাজার হেক্টর জমিতে রোপা আমন বীজতলা তৈরি হয়েছে। এখনো চার থেকে সাড়ে চার হাজার হেক্টর জমিতে বোরো বীজতলা তৈরির কাজ চলছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে উত্তরাঞ্চলের শস্যভান্ডারখ্যাত বগুড়ার ১২ উপজেলার চলতি খরিপ-২ রোপা আমন মৌসুমের ধান চাষ সম্পর্কে এমন তথ্য ওঠে আসে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সদর উপজেলাসহ জেলার সবগুলো উপজেলায় সীমিত আকারে কৃষক জমিতে ধান লাগানোর কাজ শুরু করেছেন। অথচ বিগত বছরগুলোয় এ সময়ের মধ্যে অনেক জমিতে ধান লাগানো শেষ হয়ে যায়। এবার সেই গতি অনেক কম। এরপরও রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে বলে আশাবাদি সংশ্লিষ্টরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি খরিপ-২ রোপা আমন মৌসুমে ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৮৭ হাজার ৫০০ হেক্টর। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৪৫ হাজার মেট্রিক টন। তবে শনিবার নাগাদ চলতি মৌসুমের ধান লাগানোর হিসাব আসেনি এই অধিদফতরে।
জেলা কৃষি অধিদফতরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, পহেলা জুলাই থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত এ মৌসুমের ধান লাগানো হয়। সে হিসাবে সবেমাত্র মৌসুম শুরু হয়েছে। তবে সচেতন কৃষকরা তাদের জমিতে ধান লাগানো নিয়ে অনেক হিসাব নিকাশ কষতে শুরু করেছেন বলে যোগ করেন এই কর্মকর্তা।
ফরিদুর রহমান বলেন, গেলো বোরো মৌসুমে বেশিরভাগ কৃষকেই ধান চাষ করে কমবেশি লোকসান গুণতে হয়েছে। এ কারণে চলতি মৌসুমে ধান চাষের ব্যাপারে অনেক হিসাব নিকেষ করছেন তারা। অনেক কৃষকই নিজেদের চাহিদা মতো জমিতে ধান লাগানোর কথা জানিয়েছেন তাদের। বাকি জমিতে অন্য ফসল চাষ করার চিন্তা ভাবনা করছেন। তবে সরকারিভাবে ধান কেনার জন্য কৃষকদের সঙ্গে অগ্রিম চুক্তি করলে এ সমস্যা অনেকটা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। কেননা কৃষকদের পক্ষ থেকে এমন পরামর্শ তাদের কাছে আসছে। সবমিলে সময় একটু বেশি লাগলেও শেষ অবধি চলতি মৌসুমে রোপা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে বলেও আশাবাদি কৃষি বিভাগের এই কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ১২২৬ ঘণ্টা, জুলাই ০৬, ২০১৯
এমবিএইচ/এএটি