থাইল্যান্ডের ফ্লোটিং মার্কেট দেখতে না পেরে যারা আফসোস করেন তারা ভিমরুলি, আটঘর-কুড়িয়ানার ভাসমান বাজারে ঘুরে আসতে পারেন। খালের মোহনায় হওয়ায় তিনদিক থেকে নৌকা আসে এখানে।
আটঘর-কুড়িয়ানায় প্রতি হাটবারে বেচা-কেনা হলেও ভিমরুলিতে পেয়ারার মৌসুমে প্রতিদিনই বসে ভাসমান বাজার। ভরা মৌসুমে প্রতিদিন শত শত মণ পেয়ারা বেচা-কেনা হয়। দূর-দূরান্ত থেকে পাইকাররা আসেন। এখান থেকে পেয়ারা কিনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়ে বিক্রি করেন তারা।
স্থানীয় চাষি সুনিল বাংলানিউজকে বলেন, আটঘর-কুড়িয়ানা ও ভিমরুলির অবস্থান দুই জেলায়। তবে প্রায় কাছাকাছিই এ দুই এলাকার অবস্থান। আটঘর-কুড়িয়ানা ও ভিমরুলির ভাসমান বাজারকে ঘিরে ঝালকাঠি সদর, বরিশালের বানারীপাড়া সদর ও পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলায় কৃষি বিপ্লব ঘটেছে বলা চলে। এসব এলাকায় চাষিরা আধুনিক কৃষি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পেয়ারা, লেবু, আমড়া, সুপারি, বোম্বাই মরিচ, কচু, মিষ্টি কুমড়া, কাঁচা কলাসহ বিভিন্ন সবজি ও ফসলের উৎপাদন করেন বছরজুড়েই। তবে পেয়ারার উৎপাদনটা বেশি হওয়ায় আটঘর-কুড়িয়ানা ও ভিমরুলির ভাসমান বাজারগুলোতে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বেশি জমজমাট থাকে। এ সময়টাতে ভাসমান বাজার দেখতে পর্যটকদের আনাগোনাও থাকে বেশি।
স্থানীয় বাসিন্দা উজ্জল বাংলানিউজকে বলেন, পিরোজপুরের নেছারাবাদ, বরিশালের বানারীপাড়া ও ঝালকাঠির সদর উপজেলার প্রায় ২৬টি গ্রামজুড়ে বহু পেয়ারার বাগান রয়েছে। চাষিরা শুধু পেয়ারা গাছ থেকে তা সংগ্রহের পর বাজারে পাইকারদের কাছে বিক্রি করেন, এখানে পেয়ারা বাগান বাৎসরিক হিসেবেও বিক্রি হয়। অনেক পাইকার বাগানও কিনে রাখেন। এ অঞ্চলের পেয়ারা স্বাদে অনন্য এবং বিখ্যাতও।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, বহু আগে এই অঞ্চলের একজন ভারতের বিহার রাজ্যের গয়ায় যান তীর্থ করতে। সেখানেই এ ফল দেখে বীজ এনে রোপণ করেছিলেন আটঘর-কুড়িয়ানাতে। আর গয়া থেকে আনা বীজরোপণ করে ফল পাওয়ার পর এর নাম রাখা হয়েছিল ‘গয়া’।
কয়েকজন পাইকার ব্যবসায়ী জানান, বরিশাল বিভাগের এই অঞ্চলে দেশের অন্য জায়গার চেয়ে বেশি পেয়ারা পাওয়া যায়। যা পরে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়ে বিক্রি করা হয়। এখান নদী ও খালকেন্দ্রীক ব্যবসার প্রসার ঘটায় মালামাল পরিবহনে খরচ কম। একইসঙ্গে পরিবহন সহজও। তবে ইচ্ছে করলে সড়ক পথেও পণ্য পরিবহন করা সম্ভব, প্রয়োজনীয় রাস্তাঘাটও আছে। তবে সময়, ইতিহাস আর ঐতিহ্যের সঙ্গে নৌকায় যাতায়াত আর যোগাযোগ ব্যবস্থাটা এখানকার মানুষের সঙ্গে মিশে গেছে।
ব্যবসায়ী রেজাউল বাংলানিউজকে বলেন, পেয়ারার বাজার কেবল বসতে শুরু করেছে। আরও কয়েকদিন গেলে বেশ জমজমাট হবে। এখন পেয়ারার পাশাপাশি প্রচুর লেবুও পাওয়া যাচ্ছে বাজারগুলোতে। নৌকায় করে চাষিরা ক্ষেত থেকে ফসল নিয়ে আসছেন, আর পাইকাররা দরদাম করে কিনে নিচ্ছেন। এখানকার বেশিরভাগ ফসল প্রাকৃতিক সার ও আধুনিক কৃষি ব্যবস্থাপনায় করা হয় বিধায় মান খুব ভালো, আর দামও খুব একটা বেশি হয় না। উৎপাদন বেশি হলে পেয়ারার দাম কম থাকে।
এদিকে ভিমরুলিতে বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে আসা ঢাকার কলেজ ছাত্র নিয়াজ বাংলানিউজকে বলেন, ফসল বেচা-কেনার মূল আনন্দটা কৃষক আর ব্যবসায়ীদের মধ্যে। তবে এখান থেকে আমরাও কম দামে পেয়ারা কিনেছি, খেয়েছি। দাম আর স্বাদ দু’টোই অবিশ্বাস্য ছিল আমাদের কাছে। শুধু ভাসমান বাজার নয়, ঘুরেছি বাগানেও। ছোট বা ডিঙ্গি নৌকা নিয়ে বাগানে ঢুকে পেয়ারা পাড়া যায়।
ঝালকাঠির ভিমরুলি গ্রামের খালগুলোতে সপ্তাহের প্রতিদিনই সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে বিকিকিনি। আর শুক্রবারসহ সপ্তাহে দুইদিন আটঘর-কুড়িয়ানায় বসে হাট। তবে আটঘর কুড়িয়ানার হাট ভোর থেকে সকাল ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে শেষ হয়ে যায়।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৭ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০১৯
এমএস/এইচএডি/জেডএস