তবে আবাদ তালিকায় এনেছেন ব্যাপক পরিবর্তন। বাজার দরের কারণে পাট চাষের জমির আওতা বারবার কমাতে বাধ্য হয়েছেন চাষিরা।
বগুড়ার ১২টি উপজেলায় এবার বিভিন্ন জাতের প্রায় ১২ হাজার ২৮১ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করেছিলেন চাষিরা। এর মধ্যে জেলার যমুনা বেষ্টিত সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলায় বেশির ভাগ জমিতে পাট চাষ করা হয় বলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকের কার্যালয় সূত্র জানা যায়।
কিন্তু উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও বর্ষণের কারণে যমুনাতে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেওয়ায় এই তিন উপজেলার বেশির ভাগ জমির পাট ক্ষেত বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। এতে প্রায় ছয় হাজার হেক্টর জমির পাটের ক্ষতি হয়েছে।
তবে জেলার গাবতলী, শাজাহানপুর, শেরপুর, নন্দীগ্রামসহ অন্য উপজেলায় লাগানো পাটের কোনো ক্ষতি হয়নি। এসব উপজেলায় রীতিমতো পাট কর্তনে চরম ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। কিন্তু পাটের দাম নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তারাও। কারণ শুরুতে পাটের দাম মোটামোটি ভালো পাওয়া গেলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দর কমতে শুরু করে।
বর্তমানে প্রকৃতিতে চলছে রোদ-বৃষ্টির খেলা। রোদ মানেই যেনো প্রখর। প্রচণ্ড তাপদাহ ছড়ায়। তখন ভরদুপুর। তপ্ত রোদ এসে পড়ছিল কাজে ব্যস্ত চাষিদের মাথায়। এতে শরীর থেকে অবিরত ঘাম পড়ছিল। কিন্তু সেদিকে খেয়াল ছিল না কারও। সবাই পাটকাঠি থেকে আঁশ পৃথক করার কাজে ভীষণ ব্যস্ত।
গাবতলী উপজেলার পাট চাষি আমেদ আলী বাংলানিউজকে বলেন, প্রায় তিন বিঘা জমিতে পাট লাগিয়েছিলেন তিনি। পুরো জমির পাট কেটে পানিতে জাগ দিয়ে রেখেছিলেন। তবে শুরুতে পানির সমস্যা হলেও বর্তমানে পানির কোনো সমস্যা নেই। এতে খুব সহজেই পাটকাঠি থেকে আঁশ ছাড়ানো, পাট শুকানো, পাটকাঠি শুকানো যাচ্ছে।
আব্দুল জব্বার নামে আরেক পাট চাষি বাংলানিউজকে বলেন, বাঙালি নদীর পানি গাবতলী উপজেলায় ঢুকতে শুরু করেছে। ফলে দ্রুত জাগ দেওয়া পাট ঘরে তোলার জন্য ভোর থেকে শুরু করে সন্ধ্যা নাগাদ আমার মতো পাট চাষিদের ব্যস্ত সময় পার করতে হচ্ছে। এ কাজে নারীরাও সহযোগিতা করছেন যোগ করেন এই পাট চাষি।
চাষি শহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিবিঘা জমিতে পাট লাগানো থেকে শুরু করে কর্তন পর্যন্ত ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা করে ব্যয় করতে হয়েছে। আবার কারও কারও এর চেয়ে বেশিও ব্যয় হয়েছে। আবার অনেকের ব্যয় কিছুটা কমও হয়েছে। এছাড়া পাটের ফলনও মন্দ হয়নি। সবকিছু ঠিকঠাক মতো ঘরে তুলতে পারলে, ভাল দামেই পাট বিক্রি করা যাবে। তাতে এবার পাটে লাভের আশা করছেন চাষি শহিদুল ইসলাম।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকের কার্যালয়ের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, জেলায় দেশীয় ফাল্গুনিসহ ভারতীয় বেশ কয়েকটি জাতের পাট চাষ করা হয়েছে। পাটের ফলনও ভালো হয়েছে।
তাহলে পাট চাষে চাষির লোকসান গুনতে হয় কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে এই কর্মকর্তা বলেন, অন্য সব পণ্যের মতো পাট কেনার জন্য সাধারণ কোনো ভোক্তা নেই। পাটের ক্রেতা নির্দিষ্ট। তাদের কাছে চাষিরা পাট বিক্রি করতে বাধ্য হন। এ কারণে অনেক সময় পাট বিক্রি করতে গিয়ে চাষিদের লোকসান গুনতে হয় বলে মত দেন কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০১৯
এমবিএইচ/টিএ