এজন্য তারা প্রয়োজনীয় ভেটেরিনারি সহকারী নিয়োগ এবং তাদের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার বন্ধ করার পরামর্শ দিয়েছেন।
বাজারে থাকা পাস্তুরিত সাতটি এবং খোলা বাজারে থাকা তিনটি দুধের নমুনা সংগ্রহ করে তাতে চার ধরনের অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি রয়েছে বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বায়োমেডিকেল রিসার্চ সেন্টার।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার আর্থিক সহায়তায় পরিচালিত জাতীয় নিরাপদ খাদ্য গবেষণাগারের পরীক্ষায়ও পাওয়া গেছে তরল দুধে মাত্রাতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক উপস্থিতির বিষয়টি। কিন্তু দুধে এই অ্যান্টিবায়োটিক আসছে কীভাবে?
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ঘটনার দায় যার-ই হোক না কেন? এ সমস্যা নিরসনে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকেই। দায়িত্ব নিতে হবে এ খাতে জড়িত সব পক্ষকে।
এ বিষয়ে রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) সহযোগী অধ্যাপক ড. উদয় কুমার মহন্ত বলেন, অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ করা খুবই সহজ। এজন্য প্রতিটি ইউনিয়নে একজন করে পশুচিকিৎসা সহকারী নিয়োগ দিতে হবে। তারা কৃষককে পশুপালন ও দুগ্ধ উৎপাদনে প্রয়োজনীয় সেবা দিতে পারবে। গাভী পালনের ক্ষেত্রে এ বিষয়ে কৃষকদের সচেতন করতে পারবে।
তিনি বলেন, গাভীপালনের জন্য ঘাস উৎপাদন ও গোখাদ্য তৈরির বিষয়ে পরিবেশের বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। তবেই একটি গাভী থেকে থেকে নিরাপদ দুধ পাওয়া সহজ।
বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাহ ইমরান বাংলানিউজকে বলেন, এ সমস্যার সমাধানে সরকার ও খামারিদের এগিয়ে আসতে হবে। খামারিদের সচেতন করতে হবে। কোন জিনিসটা ব্যবহার করতে হবে, কোনটা করা যাবে না-তা তাদের জানাতে হবে। পাশাপাশি এসব ভেজালের সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরও কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
বাংলাদেশ ভেটেরিনারি অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব হাবিবুর রহমান মোল্লা বলেন, গাভীর ক্ষুরা রোগ হলে অক্সিটেট্রা সাইক্লিনসহ আরও কিছু অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়। ভেটেরিনারি প্র্যাকটিশনার ছাড়াও অনেক গ্রাম্য পশুচিকিৎসকও এটি ব্যবহার করে থাকেন। এটি কতদিন ব্যবহার করতে হয় খামারিদের বলেও দিচ্ছেন না তারা। এ সর্ম্পকে তাদের ধারণাও নাই। ফলে যে গাভীটা দুধ দিচ্ছে, সেই গাভীটাকে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করার পরে যে দুধ দিলো তা বাজারে বিক্রি করছে বা নিজেরা খাচ্ছে খামারি। তাহলে সেখানে তো অ্যান্টিবায়োটিক থেকেই যাচ্ছে।
আদালতে জমা দেওয়া বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের প্রতিবেদনে বলা হয়, শুধু অ্যান্টিবায়োটিকই নয়, বিএসটিআই অনুমোদিত ১৪টি কোম্পানির ১১টির পাস্তুরিত দুধে মাত্রাতিরিক্ত সীসা ও ক্যাডমিয়াম পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআরআই) উদরাময় চিকিৎসা কেন্দ্রসহ (আইসিডিডিআরবি) আরও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের গবেষণায়ও মিলেছে একই ধরনের ফল। এর দায় আসলে কার?
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্র্যাকের আড়ং ফুড অ্যান্ড ডেইরির পরিচালক আনিসুর রহমান বলেন, মাটির নিচে, পানিতে ও গরুর খাদ্যে লেড কন্টেন্ট বেশি থাকলে সেখান থেকে আসতে পারে। ফার্ম ও ফার্মার পর্যায়ে এগুলো শনাক্ত করা খুবই কঠিন। কারণ একজন খামারি গরুর খাদ্য উৎপাদনে ক্ষেতে কীটনাশক ব্যবহার না করলেও প্রতিবেশির ক্ষেতে কীটনাশক করা হলে সেখান থেকে চলে আসবে। তাই এসব বিষয়কে মাথায় রেখেই গোখাদ্য উৎপাদন ও তৈরি করতে হবে।
বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাহ ইমরান বলেন, বিদেশ থেকে যে গুঁড়ো দুধ আসে তা একেবারেই নিম্নমানের। গুঁড়ো দুধের দাম কম হওয়ার কারণে আমাদের মধ্যস্থ কারবারি, যারা খামার থেকে দুধ কিনে প্রক্রিয়াজাতকরণকারীদের কাছে পৌঁছে দেয়-তারা কমদামি গুঁড়োদুধ পানিতে ঘুলিয়ে বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করে। এখান থেকেই অনেক ভেজাল তৈরি হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে প্রায় ৯৯ লাখ মেট্রিক টন তরল দুধ উৎপাদন হয় সারাদেশে। যার মাত্র ১০ থেকে ১৫ শতাংশ প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে প্যাকেটজাত হয়ে বাজারে আসে। বাকিটা বিক্রি হয় খোলাবাজারে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৯ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০১৯
এসই/এমএ