রেজাউল করিম বাংলানিউজকে জানান, ছয়মাস আগে দু’লাখ চার হাজার টাকায় তিনটি শাহীওয়াল জাতের গরু কিনে ঘরে তুলেন। ঘরেই চলে গরুগুলোর খাওয়া ও গোসল।
রেজাউল করিম আরও জানান, চার লাখে বিক্রি হলেও খাবার খরচের এক লাখ টাকা বাদ দিলেও এক লাখ টাকা মুনাফা আসে তার। মাত্র ৬ মাসে লাখ টাকা আয় করার মতো অন্য কোনো পেশা নেই। গরুর পেছনে সারাদিন শ্রম দিতে হয়নি। পেশায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হলেও ব্যবসার ফাঁকে গরুর যত্ন নিতেন তিনি। গত চার বছর ধরে ঈদের কোরবানির গরু লালন-পালন করেন তিনি। প্রতিবছর ঈদের ছয় থেকে সাতমাস আগে ঘরে গরু তোলেন তিনি। কোরবানির উপযুক্ত করেই বিক্রি করেন। এতে যা লাভ হয় তা দিয়ে বন্ধক রাখা জমি ছাড়ান ও জমি কিনেন তিনি। এভাবেই চলছে তার সংসার। ওই ক্ষুদ্র খামারি জানান, গতবার গরুর চাহিদা বেশি থাকায় বেশ মুনাফা হয়েছিল। এবার ভারতীয় গরুতে বাজার ভরে যাওয়ায় দেশি গরুর চাহিদা কম। তাই মুনাফাও কম। তবুও তিন গরুতে লাখ টাকার ওপরে মুনাফা এসেছে।
একই গ্রামের বাদল চন্দ্র একটি গরু বিক্রি করেছিলেন এক লাখ ৪৫ হাজার টাকা দিয়ে। তিনিও গরুটি থেকে প্রায় ৬০ হাজার টাকা আয় করেছেন। তালুক দুলালি পাগলা চওড়া গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই রয়েছে গরুর ক্ষুদ্র খামার। গরু পালন করেই স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছে গ্রামবাসী। সারাদেশের পাইকারাও গরুর জন্য গ্রামটিকে ভালোভাবেই চিনেন। তাই ঈদের বাজার ধরতে বড় গরুর খোঁজে পাইকাররা ছুটে আসেন এ গ্রামে।
ওই গ্রামের স্কুলশিক্ষক বাদশা আলম বাংলানিউজকে জানান, আমাদের গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই রয়েছে ক্ষুদ্র খামার। বড় বড় গরু কিনলে এ গ্রামে আসতে হয়। তাই ঈদের আগে প্রায় প্রতিদিন ট্রাক বা নছিমনে করে সারাদেশের বাজারে যাচ্ছে এ গ্রামের গরু। গ্রামের অশিক্ষিত বেকার যুবকরা তাদের ভাগ্যন্নয়নে গরু পালনে ঝুঁকে পড়েছেন। গ্রাম্য পল্লী পশু চিকিৎসকরাই এসব খামারির পশু চিকিৎসক।
প্রাণিসম্পদ বিভাগের আদিতমারী উপজেলা পশু হাসপাতাল থাকলেও সেখানে মেলে না কাঙ্ক্ষিত সেবা। তাই বাধ্য হয়েই পল্লী চিকিৎসকই তাদের ভরসা। প্রাণিসম্পদ বিভাগ খামারিদের খোঁজ-খবর ও প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দিলে এ উপজেলায় প্রাণিসম্পদের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটতো। কমে আসতো বেকারত্বের হার। এমনটা দাবি স্থানীয়দের।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের পাশের ক্ষুদ্র খামারি ফারুক মিয়া বাংলানিউজকে জানান, সিমেন (বীজ) সরকারি ফিস ৩০ টাকা হলেও আদায় করেন ৫০ থেকে ৬০ টাকা। খামারে ডাকলে ৫শ থেকে হাজার টাকা ভিজিট দিতে হয়। অফিসে নিয়মিত নয় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ফলে বিকেল হলেই হাসপাতাল চত্বরে বসে গাঁজার আসর। দেখার কেউ নেই। প্রতিবাদ করলে প্রাণিসম্পদ সচিবের আত্মীয় পরিচয় দিয়ে হয়রানি করে। তাই কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। বিষয়টি দেখার জন্য সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোশারাফ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, সিমেনে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। অনেকেই চিকিৎসার পর খুশি হয়ে ভিজিট দেন। যা পারিশ্রমিক হিসেবে নেওয়ার বৈধতা রয়েছে। এ অঞ্চলে গবাদি পশু সম্পদের উন্নয়ন ঘটানোর ব্যাপক সম্ভবনা রয়েছে। তাই বেশ কিছু উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৮ ঘণ্টা, আগস্ট ০৭, ২০১৯
এএটি