ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

সাড়ে ৬ শতাংশে শ্রমিকের মজুরি ২৫০ টাকা!

এম আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০১৯
সাড়ে ৬ শতাংশে শ্রমিকের মজুরি ২৫০ টাকা! ধানের চারা রোপণ করে একজন শ্রমিক

ফুলবাড়িয়া (ময়মনসিংহ) থেকে: সাড়ে ৬ শতাংশ জমিতে ধানের চারা রোপণ করে একজন শ্রমিক পাচ্ছেন সাকুল্যে ২৫০ টাকা। জমিতে পর্যাপ্ত পানি থাকায় বীজতলা তৈরির পর ধানের চারা রোপণে সকাল-সন্ধ্যা ব্যস্ত সময় কাটছে শ্রমিকদের। চিত্রটি আমন চাষের।

অথচ গত বোরো মৌসুমে শ্রমিক সঙ্কটে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন কৃষকরা। এক মণ ধানের দামেও একজন শ্রমিকের মজুরি হয়নি।

রোপা আমনের মতো সমপরিমাণ জমিতে ধানের চারা রোপণ করে শ্রমিকরা পেয়েছেন দ্বিগুণ টাকা। এখানে জমি চাষের পাশাপাশি চারা রোপণের কর্মযজ্ঞ চলছে পুরোদমে।

মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে জেলার ফুলবাড়িয়া উপজেলার জোরবাড়িয়া, কালাকান্দা, চক রাধাকানাইসহ বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা মিলেছে এমন চিত্রের।

ময়মনসিংহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এবার ময়মনসিংহের ১৩ উপজেলায় ২ লাখ ৭১ হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বন্যা না হলে আমনে কোনো ক্ষতির সম্ভাবনা নেই।

ফুলবাড়িয়া উপজেলায় মূলত বোরোর পর কেবলমাত্র আমন চাষ করেন এখনকার চাষিরা। পহেলা শ্রাবণের পর থেকে এখানে শুরু হয় আমন চাষ। বৃষ্টিপাত হওয়ায় আগাম চাষের জন্য কোনো সেচ মেশিনে খরচের প্রয়োজন পড়ে না। ফলে সামান্য খরচেই আমন চাষ করতে পারেন চাষিরা।

উপজেলার জোরবাড়িয়া উত্তরপাড়া গ্রামের মাঠগুলোতে এখন চাষিদের ব্যস্ততা। যেদিকে তাকানো যায় ধানের চারা রোপণের অভূতপূর্ব এক দৃশ্য। এখানেই আলাপ হয়েছে সুরুজ মণ্ডলের (৪৫) সঙ্গে। অন্যের জমিতে আমন ধানের চারা রোপণ করছেন। সঙ্গে নিজের স্কুলপড়ুয়া সন্তান সোহান মণ্ডল (১২)।

বোরো মৌসুমের চেয়ে আমন মৌসুমে ধানের চারা রোপণে শ্রমিক খরচ অর্ধেক বলে জানান শ্রমিক সুরুজ মণ্ডল। আঞ্চলিক ভাষায় বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘বোরোত কামলাগর মজুরি বেশি আছিল। অহন তো পুরা হস্তা (সস্তা)। পেট চালাইবার লেইগ্যা (জন্য) পোলারে লইয়া (ছেলেকে নিয়ে) লাইগ্যা (লেগে) পড়েছি। ’

তিনি জানান, বোরোতে সাড়ে ৬ শতাংশ জমিতে ধানের চারা রোপণ করে একজন শ্রমিক পেতেন ৫শ’ থেকে সাড়ে ৫শ’ টাকা। আর আমনে সমপরিমাণ জমিতে ধানের চারা রোপণ করে একজন কৃষক পাচ্ছেন মাত্র ২৫০ টাকা। ধানের চারা রোপণ করে একজন শ্রমিকঈদের ছুটিতে স্কুল বন্ধ থাকায় মূলত বাবাকে কাজে সহযোগিতা করতেই মাঠে সক্রিয় রয়েছেন এ কিশোর। তিনি বলেন, একজন শ্রমিক একদিনে সর্বোচ্চ ১৩ শতাংশ জমিতে ধানের চারা রোপণ করতে পারেন। বাবা-ছেলে দু’জনে মিলে দৈনিক হাজার টাকা আয় করছেন।

একই গ্রামের তারা ক্যাশিয়ার নামে এক অবস্থা সম্পন্ন কৃষক ১০৪ শতাংশ (১৬ কাঠা) জমিতে ধানের চারা রোপণ করছেন। তিনি নিজে রোপণ কাজ না করে এজন্য দু’জন শ্রমিক নিয়োগ দিয়েছেন। তাদেরই একজন কালু মিয়া (৪০)।

এ শ্রমিক বাংলানিউজকে জানান, ভোর ৬টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা মাঠে থেকে একজন শ্রমিক ১৩ শতাংশ জমি চাষ করতে পারেন। কিন্তু শ্রমিক মজুরি সামান্যই।

ময়মনসিংহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুল মাজেদ বাংলানিউজকে জানান, চলতি মৌসুমে আমন চাষে আগের চেয়ে কৃষকের ঝোঁক বেড়েছে বেশি। জেলার ১৩ উপজেলায় বীজতলার মাধ্যমে ধানের চারা উৎপাদন শেষ হয়েছে বেশ আগে।

এখন পুরোদমে চলছে জমিতে রোপা আমনের চারা রোপণের কাজ। এবার আমনে পুরো লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে বলে আশা করছি।

বাংলাদেশ সময়: ০৮২২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০১৯
এমএএএম/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।