অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ২৭১ হেক্টর বেশি জমিতে পাট চাষ হয়েছে। এছাড়া গত মৌসুমে চাষ হয়েছিল ১২ হাজার ৮২৫ হেক্টর জমিতে।
চলতি মৌসুমে পাটের বাম্পার ফলনের পর লাভের আশা করছেন চাষিরা। এরইমধ্যে বিভিন্ন উপজেলায় সোনালি আঁশ আহরণ শুরু হয়ে গেছে। পুরো জেলাজুড়েই চলছে পাট কাটা, জাগ দেওয়া, আঁশ ছাড়ানো ও শুকানোর কাজ। সোনালি আঁশ নিয়েই কর্মব্যস্ত দিন কাটছে চাষিদের।
এদিকে, চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে ভালো বৃষ্টিপাত হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ভাদ্র মাসেও দফায় দফায় বৃষ্টি হচ্ছে। এর কারণে চাষিদের পাট জাগ দেওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতে হচ্ছে না। এর সুপ্রভাব পড়েছে আবাদেও।
আবহাওয়া অনুকূলে পেয়ে এবার গত বছরের তুলনায় বেশি পাট চাষ করেছেন কৃষকরা। গত বছরের চেয়ে পাটের আবাদ বেড়েছে কয়েকশ হেক্টর। তবে মৌসুমের শুরুর দিকে বৃষ্টি হওয়ায় অনেকটা দেরিতে কৃষকরা পাট বপন করেন। ফলে দেশের অন্যান্য স্থানে বাজারে পাট উঠলেও রাজশাহীতে নতুন পাট পেতে আরো কয়েকদিন সময় লাগবে বলে জানা গেছে। রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, এবার জেলার বিভিন্ন উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রার বেশি জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৩ হাজার ৫৭৫ হেক্টর। চাষ হয়েছে ১৩ হাজার ৮৪৬ হেক্টর। ফলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৭১ হেক্টর বেশি জমিতে পাট হয়েছে। যেখান থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ৬০ হাজার ৫৭৭ বেল (১ বেল সমান প্রায় ৫ মণ বা প্রায় ১৮৭ কেজি)। রাজশাহীতে গতবার চাষ হয়েছিল ১২ হাজার ৮২৫ হেক্টর।
পাট চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অন্যান্য বছরের তুলনায় রাজশাহীতে বৃষ্টিপাত, ভালো বীজের সহজলভ্যতা ও সার সংকট না থাকা, পাটের ভালো দাম ও চাহিদা বাড়ায় পাট চাষে কৃষকেরা আগ্রহী হয়েছেন।
গত মৌসুমে পাটের দাম অনেকটাই ভালো ছিল। এবার বৃষ্টিপাতের কারণে পাট জাগ দেওয়ার সমস্যা দূর হওয়ার পাশাপাশি বাড়তি খরচ গুণতে হচ্ছে না চাষিদের। এসব কারণে রাজশাহীতে এবার পাটের আবাদ বেড়েছে।
রাজশাহীর পবা ও বাগমারাসহ আশপাশের উপজেলা এলাকায় এখন পাটকাটা, জাগ দেওয়া, আঁশ ছাড়ানো এবং শুকানো নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা যাচ্ছে চাষিদের। কেউ ক্ষেতে পাট গাছ কাটছেন, কেউ জাগ দেওয়ার জন্য পাটের আঁটি সংরক্ষণ করছেন। আবার কেউ আঁশ ছাড়াচ্ছেন। আর গৃহবধূরা পাট শুকানোর কাজ করছেন।
তবে পাটের বাম্পার ফলনের পরও কৃষকের মনে সুখ নেই! নায্যদাম নিয়ে এখনই শঙ্কিত হয়ে উঠছেন তারা। মধ্যসত্ত্বভোগী ও ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে পাটের দাম কমে গেলে তাদের চরম ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে এবার।
কৃষকরা বলছেন, সিন্ডিকেটের কারণে ধানের নায্যদাম নিয়ে সারাদেশে কৃষকদের বিপাকে পড়তে হয়েছে। পাটের আবাদ করতে বিঘায় সব মিলিয়ে প্রায় ১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। পাট উৎপাদন হয়েছে বিঘায় ৮ থেকে ১২ মণ। সিন্ডিকেটের কারণে বাজারে পাটের দাম কমে গেলে তাদের সীমাহীন ক্ষতি হবে। গত মৌসুমের শুরু থেকে পাটের দাম ভালো থাকলেও, সিন্ডিকেটের কারণে মৌসুমের শেষের দিকে দাম তেমন বাড়েনি। তাই চাষিরা পাটের নায্যমূল্য প্রাপ্তিতে চলতি মৌসুমে দর নির্ধারণে সরকারের হস্তক্ষেপ চান।
রাজশাহীর পবা উপজেলার বাকসারা গ্রামের পাট চাষি সাজিদ হোসেন বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার দুই বিঘা বেশি জমিতে পাট চাষ করেছেন তিনি। এরইমধ্যে তিন বিঘা জমির পাট কেটে জাগ দেওয়া হয়েছে। এবার বৃষ্টি হওয়ায় কাটা পাট জাগ দিতে সমস্যা হচ্ছে না।
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, এখন পর্যন্ত পাটের দাম ভালো রয়েছে। এই দাম থাকলে হয়তো কৃষকরা এবার কিছুটা লাভের মুখ দেখবেন।
রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার ভবানিগঞ্জ এলাকার পাটচাষি শামসুল আলম বলেন, গতবার ফলন ভালো হওয়ায় এবার তিনি চার বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। এবারও ফলন ভালো হয়েছে। তবে দাম নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। পাট বাজারে ওঠার পরে দাম কমে যায়। তখন শ্রমিকের টাকা দেওয়ার জন্য পাট বিক্রি করেও দাম পাওয়া যায় না। তাই বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন এই চাষি।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফরের উপ-পরিচালক সামছুল হক বলেন, পাট চাষের অনুকূল আবহাওয়া বিরাজ করায় এবার আবাদ ভালো হয়েছে। উৎপাদনও ভালো হবে বলে আশা করছি। এখন বাজারদর ঠিক থাকলে কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হবেন। আর দাম ভালো পেলে আবারও সোনালি আঁশের সুদিন ফিরবে। আগামীতে আরও বেশি জমিতে পাটের আবাদ হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৯
এসএস/জেডএস