এ বয়সেও দুই হাঁটু ভাজ করে গেড়ে বসেছেন জমিতে। হাতে তুলে নিয়েছেন পাচুন।
সামান্য জমির মালিক আব্বাস। সেই জমির আয়ে চলে তার সংসার। এ কারণে সবসময় জমিতে ভেবে চিন্তে ফসল ফলাতে হয়। বাড়তি আয়ের আশায় অনেক সময় ঝুঁকিও নিতে হয়। যেমন ঝুঁকি নিয়েই শীতের আগাম সবজি হিসেবে বিঘাখানেক জমিতে মুলা লাগিয়েছেন এবার।
তার ভাষ্য, ‘যেকোনো আগামজাতের ফসল চাষে ফলন কম হয়। তবে ঠিকঠাক মত ফসল ঘরে তুলতে পারলে বাজারে ভাল দাম পাওয়া যায়। তবে অন্য ফসল চাষের চেয়ে শীতকালীন আগাম সবজি চাষে ঝুঁকি অনেকটা বেশি। ’
কারণ হিসেবে আব্বাস বলেন, ‘আবহাওয়া একটু হেরফের হলে সবজির ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বাড়তি বৃষ্টি হলে সমস্যা। ঘন কুয়াশা হলে সমস্যা। শ্রম দিতে হয় অনেক বেশি। ব্যয় তুলনামূলক বেশি। সবশেষ ভাগ্য বলেও একটা কথা আছে। কপালে থাকলে স্বল্প জমির শীতের আগাম সবজিতেই ভাগ্য লাল। ’
তার মতো অনেক কৃষকই বাড়তি লাভের আশায় এখন শীতকালীন আগাম সবজি চাষে মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন। মুলা, শিম, বেগুন, ফুলকপি, বাধাকপি, লালশাক, পালংশাক, করলা, লাউ, কাঁচা মরিচ, ঢেঁড়স, গাজর, টমেটোসহ নানা জাতের সবজি চাষ করছেন কৃষকরা।
বগুড়ার ১২টি উপজেলার মধ্যে সদর, শাজাহানপুর, শেরপুর, শিবগঞ্জ সবজিখ্যাত উপজেলা হিসেবে পরিচিত। এসব উপজেলায় বছরের বারো মাসই রকমারি সবজি ফলান কৃষকরা। এরমধ্যে শেরপুর ও শাজাহানপুর উপজেলায় বছরজুড়ে নানাজাতের সবজি চারা তৈরি করা হয়। এছাড়া অন্যান্য উপজেলায়ও কমবেশি সবজি চাষ করা হয়ে থাকে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালকের কার্যালয় সূত্র জানায়, খরিপ-১ মৌসুমের কিছু সবজি এখনো মাঠে রয়েছে। বর্তমানে রবি মৌসুমের শীতকালীন আগাম সবজি চাষ করা হচ্ছে। অক্টোবর পর্যন্ত চলে রবি মৌসুম। তবে ফেব্রুয়ারি অবধি কিছু কিছু সবজি চাষ করে থাকেন কৃষকরা। শুক্রবার (২৩ আগস্ট) পর্যন্ত জেলায় ৩ হাজার হেক্টর জমিতে শীতকালীন আগাম সবজি চাষ করা হয়েছে। আর পুরো রবি মৌসুমে এ জেলায় কমপক্ষে ১২ হাজার হেক্টর জমিতে রকমারি সবজি চাষ হয়ে থাকে।
সরেজমিনে দেখা যায়, কেউ সবজি লাগাতে জমি প্রস্তুত করছেন। কেউ জাতভেদে সবজির বীজ বা চারা রোপণ করছেন। কেউবা সবজি ক্ষেতের আগাছা পরিষ্কার করছেন। আবার কেউবা কীটনাশক স্প্রে করছেন। এক কথায় বাড়তি লাভের আশায় শীতকালীন রকমারি সবজি চাষে মাঠে মাঠে চলছে একধরনের কর্মযজ্ঞতা।
কৃষক আবু হানিফ বাংলানিউজকে জানান, অল্প পরিমাণ জমিতেই সবজি চাষ করা যায়। জাতভেদে সপ্তাহে কমপক্ষে দু’বার সবজি বিক্রি করা যায়। পরিবারের চাহিদা মেটানো যায়। সবজি চাষ করলে হাতে কমবেশি সবসময়ই নগদ টাকাও থাকে। যা অন্য ফসল চাষ করে সম্ভব না।
কৃষক মমতাজ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, শীতকালীন আগামজাতের সবজি চাষে কমবেশি লাভ থাকেই। যা অন্য সময় করলে নাও থাকতে পারে। তবে আগামজাতের সবজি চাষে ঝুঁকি থাকে। আর বাড়তি লাভ করতে চাইলে প্রত্যেক সবজি চাষিকে সামান্য ঝুঁকি নিতেই হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালকের কার্যালয়ের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, শীতকালীন সবজি সাধারণত তিন ভাগে চাষ হয়ে থাকে। যেসব কৃষক বাড়তি ঝুঁকি নিয়ে শীতকালীন আগাম সবজি প্রথমে চাষ করেন তারা সবজি বিক্রি করে অনেক বেশি লাভবান হন।
দ্বিতীয় ধাপের কৃষকরাও লাভবান হন। তবে তুলনামূলকভাবে কম। কিন্তু তৃতীয় ধাপে গিয়ে বাজারে প্রচুর সবজির আমদানি হয়ে থাকে। তখন লাভের চেয়ে লোকসানের ঝুঁকিটা অনেক বেশি থাকে। এছাড়া বছরের বারো মাসই সবজি চাষ হয়ে থাকে। এ জেলার প্রায় সাত লাখ কৃষক পরিবার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সবজি চাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলেও জানান এ কৃষি কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০১ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১৯
এমবিএইচ/আরবি/