ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

ধানক্ষেতে পোকার আক্রমণ, কৃষকের মাথায় হাত

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০১৯
ধানক্ষেতে পোকার আক্রমণ, কৃষকের মাথায় হাত

মাগুরা: চলতি আমন মৌসুমে মাগুরায় মাঠে মাঠে এখন রোপা-আমন ধান পাকতে শুরু করেছে। সবুজ খেতের মধ্যে ঝিলিক দিয়ে হাসছে সোনা রং। তবে ধান পাকার শেষ মুহূর্তে কারেন্ট পোকার (বাদামি গাছ ফড়িংয়) আক্রমণে মরে শুকিয়ে যাচ্ছে ক্ষেতের এ ফসল। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে জেলার অন্তত দুই হাজার কৃষকের মাথায় হাত। 

জেলার সদর উপজেলার মঘি, শত্রুজিৎপুর, কাটাখালী, সত্যপুর, তিতার খা পাড়া, শেখপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিটি মাঠে কমপক্ষে ৪০ শতাংশ ধানক্ষেতে কারেন্ট পোকার উপদ্রব হয়েছে।

বুধবার (১৩ নভেম্বর) মঘি ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের দু’পাশে বিস্তৃত সবুজ ধানের ক্ষেত।

সবুজ ক্ষেতের মাঝে মাঝে সোনালি হতে শুরু করেছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে এমন সবুজ-সোনালি ধানের মাঠ চোখে পড়েছে।

মঘি গ্রামের কৃষক আনোয়ারুর ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমার চার বিঘা জমির ধানগাছ পুরোটাই কারেন্ট পোকার উপদ্রবের কারণে বিনষ্ট হয়েছে। যা ছিল আমার সারা বছরের খোরাকি। পোকার কারণে ফসল বিনষ্ট হওয়ায় কীভাবে সংসার চলবে সে চিন্তাতেই এখন ঘুম নাই।

একই গ্রামের কৃষক ইউসুফ আলী শিকদার বলেন, আমার দুই বিঘা জমির পুরো ধানই পোকার কারণে মাঠেই নষ্ট হয়ে গেছে।


পার্শ্ববর্তী মাঠের কৃষক মান্নান জোর্য়াদ্দার বাংলানিউজকে বলেন, আমার এক একর আমন ধানের ৭৫ শতাংশই পোকার উপদ্রবে বিনষ্ট হয়েছে। ফলে দিশেহারা হয়ে মাথা হাত এখন প্রায় সব আমন চাষিদেরই।  

কৃষকরা বাংলানিউজকে জানান, কারেন্ট পোকার উপদ্রবের সবচেয়ে ভয়াবহ দিক হচ্ছে, এটির আক্রমণে একদিনের মধ্যেই সমস্ত ধান বিনষ্ট হয়ে যায়। ঘরে তোলার মতো এক ছটাক ধান পযর্ন্ত থাকে না।  

এছাড়াও তাদের অভিযোগ, কৃষি বিভাগের কাজ ছিল কোনো এলাকায় ফসলে পোকার উপদ্রব হলে গোটা জেলায় সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখা। কিন্তু মাঠ পর্যায়ের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সেরকম কোনো ব্যবস্থা নেননি। ফলে পোকার উপদ্রব এক এলাকা থেকে ছড়াতে ছড়াতে এটি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে সহজেই। সাধারণত অতি উষ্ণতায় এটির আক্রমণ হয়।
 
মাগুরা সদর উপজেলার আলমখালী এলাকার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মনির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আমার এলাকায় মাত্র পাঁচ শতক জমিতে কারেন্ট পোকার আক্রমণ হয়েছিল। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে ধান কেটে ফেলায় এটির বিস্তার হয়নি। লাইন সুইং পদ্ধতিতে ধানের চারা রোপণ করলে ভেতরে আলো-বাতাস প্রবেশ করে। সেক্ষেত্রে কারেন্ট পোকার আক্রমণের সম্ভাবনা কম থাকে। কিন্তু অধিকাংশ কৃষক সনাতন পদ্ধতিতে ধানের চারা রোপণ করায় আগাছা হয়, যার কারণে ভেতরে আলো ঢুকতে পারেনা। আর পোকার উপদ্রব হবার সঙ্গে সঙ্গে সুনির্দিষ্ট ওষুধ আছে যেগুলো স্প্রে করতে হবে।  
 
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মাগুরার তথ্যমতে, জেলায় এ বছর আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬১ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমি। মাগুরা সদর উপজেলা আবাদ হয়েছে ২৩ হাজার ৫৫৫ হেক্টর; শ্রীপুরে ১১ হাজার ৫১০ হেক্টর; শালিখায় ১৪ হাজার ১৮৫ হেক্টর ও মহম্মদপুরে ১২ হাজার ৩২০ হেক্টর জমি। জেলায় মোট উৎপাদন লক্ষ্যমাত্র নিধারণ করা হয়েছে এক লাখ ৭৫ হাজার ৭১৬ মেট্রিক টন (চাল)।
 
এ বিষয়ে মাগুরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণের উপ-পরিচালক জাহিদুল আমিন বাংলানিউজকে বলেন, জেলায় কম-বেশি কারেন্ট পোকার আক্রমণ হয়েছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জেলার অন্তত দুই হাজার কৃষক। ক্ষতি নিরূপণের চেষ্টা চলছে। তবে পোকার উপদ্রবটি ফসল ঘরে ওঠার সময় হওয়ায় খুব বেশি ক্ষতি হয়নি।  

বাংলাদেশ সময়: ১০০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০১৯
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।