ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

কুষ্টিয়ায় লাউয়ে ‘গামি স্টেম ব্লাইট’, তৎপর কৃষি অফিস

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৯
কুষ্টিয়ায় লাউয়ে ‘গামি স্টেম ব্লাইট’, তৎপর কৃষি অফিস ‘গামি স্টেম ব্লাইট’ রোগে আক্রন্ত গাছ। ছবি: বাংলানিউজ

কুষ্টিয়া: লাউ চাষ করে বিগত কয়েক বছরই লাভবান হয়েছেন কুষ্টিয়ার মিরপুরের কৃষকরা। খরচ তুলনামূলক কম এবং সব্জি হিসেবে লাউয়ের কদর থাকায় কৃষকরা লাউ চাষে আগ্রহ দেখিয়েছেন। 

এ বছর কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলায় ফুলবাড়ীয়া ইউনিয়নের বেশকিছু লাউ ক্ষেতে দেখা দিয়েছে ‘গামি স্টেম ব্লাইট’ নামক রোগ। এ রোগের কারণে বাড়ন্ত লাও গাছ মরে যাচ্ছে।

এতে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। রোগটি শনাক্ত করে দমনের চেষ্টা করছে কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা। কৃষকরা বলছেন দ্রুত দমন না করা গেলে লাউয়ের অনেক ক্ষতি হবে।  

মিরপুর উপজেলার মাধবপুর এলাকার সব্জি চাষি আব্দুর জব্বার বাংলানিউজকে বলেন, অনান্য সব্জির পাশাপাশি ১০ কাঠা জমিতে লাউ চাষ করেছিলাম। গত বছর এই ১০ কাঠা জমিতে লাউ চাষ করে ৭০ হাজার টাকা লাভ করেছিলাম। তবে এবার চাষের শুরুতেই গাছ মরে যাচ্ছে।

চাষি আব্দুর জব্বার বাংলানিজকে জানান, লাউয়ের গাছ ১০-১২ হাত হওয়ার পরে তার লতা হঠাৎ করে মারা যাচ্ছে। গাছের লতা কাটলে কিছু বোঝা যাচ্ছে না। এটা কি কারণে হয়েছে তা আমরা বুঝতে পারছি না। স্থানীয় চাষিদের কাছ থেকে এর পরামর্শ নিয়ে কোনো কাজ হয়নি। এ সমস্যা সম্পর্কে কৃষি অফিসকে জানানোর পরে তারা মাঠ পরিদর্শন করে দমনের উপায় বলে দিয়েছেন। দেখি এখন ঠিক হয় কি না। না হলে তো পুরোটাই লস হবে।  

লাউ ক্ষেত পরিদর্শনে কৃষি কর্মকর্তা ।  ছবি: বাংলানিউজ

আরেকজন লাউ চাষি হাবল আলী মালিথা বাংলানিউজকে জানান, প্রতিবছরের মতো এবছরও লাউ চাষ করেছি। তবে লাউয়ের গাছ মরে যাচ্ছে বলে খুব চিন্তায় আছি। গাছ সবেমাত্র মাচাই উঠছে। মাচাই উঠতেই নেতিয়ে যাচ্ছে। গাছের লতা ফেটে যাচ্ছে। এ রোগ যদি দমন করতে না পারি তাহলে ১০ কাঠা জমিতে ৫০ হাজার টাকা লোকসান হবে।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ পারভেজ বাংলানিউজকে বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে জানার পর লাউয়ের ক্ষেত পরিদর্শন করি এবং প্রাথমিক ব্যবস্থাপত্র দেয়। এবং উপজেলা কৃষি অফিসারকে বিষয়টি জানায়।  

মিরপুর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রমেশ চন্দ্র ঘোষ বাংলানিউজকে বলেন, ক্ষেতগুলো পরিদর্শন করেছি। সেখানে প্রায় ১০ বিঘা জমিতে লাউ চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে কিছু কিছু জমিতে ‘গামি স্টেম ব্লাইট’ রোগ দেখা দিয়েছে। এটি ‘ডিডাইমেলা ব্রায়োনি’ নামক ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়ে থাকে। মাঝারি তাপমাত্রা ও উচ্চ আর্দ্রতা এই রোগ বৃদ্ধির সহায়ক। আক্রান্ত গাছ হতে বৃষ্টির ঝাপটা ও কৃষি কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির মাধ্যমে এ রোগের জীবাণু সহজেই বিস্তার লাভ করে। এ রোগে কাণ্ড ফেটে লালচে আঠা বের হয়। লাউ গাছের বাড়ন্ত অবস্থায় এটি বেশি দেখা যায়। প্রাথমিক অবস্থায় রোগটি দমন করা সম্ভব কিন্তু বেশি আক্রান্ত হলে গাছ মারা যায়।  

রমেশ বলেন, এই এলাকার লাউ ক্ষেত এখনো প্রাথমিক অবস্থায় আছে। খুব শিগগিরই রোগটি দমন করা সম্ভব হবে। চাষিদের চুন ও তুতের বোর্দ মিক্সার ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। প্রতিরোধ হিসাবে রোগমুক্ত চারা ব্যবহরারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সার্বক্ষণিক আমরা আক্রান্ত ক্ষেত মনিটরিং করছি।  

তিনি আরো বলেন, এ বছর মিরপুর উপজেলায় ৪৫ হেক্টর জমিতে লাউ চাষ করা হয়েছে। কৃষি অফিসের পরামর্শে তারা মাছি পোকা দমনে সেক্স ফেরামন ট্র্যাপ ব্যবহার করছেন। লাউয়ের দাম ভালো পাওয়ায় বেশ লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০১৯
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।