নয়ন বাংলানিউজকে বলেন, অর্কিড এক প্রকার ফুল। যার নান্দনিক সৌন্দর্য সৃষ্টিকর্তার মহিমা ছাড়া আর কিছুই না।
তিনি বলেন, প্রতিদিনই অর্কিড প্রেমীরা আমার বাগানটি দেখতে ভিড় জমায়। ঘুরে দেখার পর কিনে নিয়ে যান অর্কিড গাছ। আমার দেখাদেখি অনেকে বাড়ির আঙিনায় ও ছাদে অর্কিডের চাষ করতে আগ্রহী হয়েছেন।
আমির হোসেন নয়ন বলেন, জুম চাষ, বনাঞ্চল উজাড়সহ পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকাণ্ডের কারণে হারিয়ে যাচ্ছে মূল্যবান অর্কিড। পাহাড়ের মানুষেরা অর্কিড সম্পর্কে সচেতন নন। পরগাছা আর আগাছা ভেবে মূল্যবান অর্কিডগুলো নষ্ট করে ফেলছ। অর্কিডের প্রতি দুর্বলতা থেকে কর্মস্থল থেকে ফেরার পথে বিভিন্ন জায়গা থেকে অর্কিড সংগ্রহ করে নিয়ে আসতাম। পরে বাড়ির আঙিনায় টবে লাগিয়ে পরিচর্যা করতাম। আমার স্ত্রী ও দুই সন্তান অর্কিড সংরক্ষণে আমায় সহযোগিতা করে। মূলত তাদের সহযোগিতায় ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকেই অর্কিড বাগানটি সমৃদ্ধশালী হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি আরও বলেন, চাহিদা তৈরি হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে অর্কিড চাষের সম্ভাবনাও বেড়েছে পাহাড়ে। এখন দেশেও অর্কিড ফুলগাছ সংগ্রহ ও রফতানি করা হচ্ছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমার বাগনের গাছের ছবি এবং ফুল দেখে অর্কিড সংগ্রহে যোগাযোগ করছে বিদেশি অর্কিড চাষিরাও। আমি নিজেও মিয়ানমার ও ভারতের মিজোরাম থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে অর্কিড গাছ সংগ্রহ করেছি। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে কুরিয়ারের মাধ্যেমে অর্কিড ফুলগাছ কেনেন অনেকে। এ পর্যন্ত প্রায় তিন লাখ টাকার গাছ বিক্রি করেছি। অর্কিড চাষের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং গাছ ও ফুল বিদেশে রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেরও ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য প্রয়োজন সরকারি সাহায্য-সহযোগিতা।
তার স্ত্রী মনোয়ারা রুবি বাংলানিউজকে বলেন, মাত্র ৬ শতক জমিতে স্বামীর প্রচেষ্টায় ছোট্ট পরিসরে অর্কিড বাগান গড়ে তুলি। তিনি সরকারি স্কুলের শিক্ষক হওয়ায় শুক্রবার ছাড়া বাকি দিন বাগানে সময় দিতে পারেন না। তাকে সহযোগিতা করতে করতে আমারও বাগানের প্রতি ভালোলাগা জন্মায়। গাছে নিয়মিত পানি দেওয়া ও স্প্রে করাসহ রক্ষণাবেক্ষণের কাজগুলো আমিই করি।
তিনি আরও বলে, প্রথম পর্যায়ে অর্কিড গাছগুলো দেখলে আমার বিরক্ত লাগতো। স্বামীর এইসব অর্কিড চাষের কাজ দেখলে মনে হতো চলে যায়। কিন্তু যখন দেখলাম গাছে ফুল ফুটছে তখন মন ভরে যেতো। এরপর থেকে আমারও বাগানের প্রতি ভালোবাসা জন্মায়।
কৃষি বিভাগ ও অর্কিড বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের আবহাওয়া অর্কিড চাষের জন্য বেশ উপযোগী। দেশের মধ্যে বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি তিন পার্বত্য জেলায় এবং সিলেটের পাহাড়ি অঞ্চলে অর্কিড পাওয়া যায়। তবে পাহাড়ে অপরিকল্পিত জুম চাষ, বনাঞ্চল উজাড় ও পরিবেশ ধংসের কারণে ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে মূল্যবান অর্কিড।
বান্দরবান সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা ওমর ফারুক বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমানে বিশ্বে কয়েক হাজার কোটি ডলারের অর্কিড বাণিজ্য হয়। এরমধ্যে সিংহভাগ দখল করে আছে থাইল্যান্ড। এজন্য থাইল্যান্ডকে অর্কিডের রানী বলা হয়। জাতভেদে সারা বছরই অর্কিডের ফুল ফোটে। তবে মার্চ ও মে মাসে দেশীয় অর্কিড সর্বাধিক পাওয়া যায়। আবার কিছু কিছু অর্কিড বছরে দু-তিনবার ফোটে। প্রতিটি গাছে জাতভেদে দু-চারটি স্টিক পাওয়া যায়। দেশের মধ্যে পাহাড়ে অর্কিড চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। শিক্ষক নয়নের মতো আরও অনেকে এগিয়ে এসেছে অর্কিড চাষে। বাণিজ্যিকভাবে অর্কিড চাষ করা গেলে এ অঞ্চলে কর্মসংস্থান তৈরি হবে। এছাড়া বিদেশে অর্কিড রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রাও আয় করা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১৯
এনটি