ঢাকা, শুক্রবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

কৃষি

বৃষ্টির পানিতে ডুবলো ধান, অসহায় কৃষক

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২১৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৪, ২০২০
বৃষ্টির পানিতে ডুবলো ধান, অসহায় কৃষক বৃষ্টিতে ডুবলো পাকা ধানের ক্ষেত। ছবি: বাংলানিউজ

খুলনা: কারেন্ট পোহে (পোকে) প্রথমে কিছু ধান নষ্ট হরছে (করছে)। বাকিঢা নষ্ট হরলো বৃষ্টিতে। এহন (এখন) কী করমু। সজ্ঞলের (সবার) একই অবস্থা। শুক্রবারের বৃষ্টিতে ধান আর বাড়ি আনা সম্ভব হয়নি। ধানগাছ পচে যাচ্ছে।

শনিবার (৪ জানুয়ারি) বিকেলে খুলনার বটিয়াঘাটার বুনারাবাদ গ্রামের কৃষক রামকৃষ্ণ মণ্ডল আক্ষেপ করে এসব কথা বলেন।

তিনি জানান, এবার ১৫ বিঘা জমিতে আমন ধানের আবাদ করেছিলেন।

৫ বিঘার ধান ঘরে তুলেছেন। ১০ বিঘার পাকা ধান কেটে ক্ষেতেই রোদে শুকাতে দিয়েছিলেন। কিন্তু শুক্রবার শুরু হলো বৃষ্টি। এখন ক্ষেতে হাঁটুপানি জমেছে। ভাসছে কাটা ধান। শনিবারও (৪ জানুয়ারি) মেঘলা আকাশ। এমন অবস্থায় শ্রমিকও পাচ্ছেন না তিনি। বৃষ্টিতে ডুবলো পাকা ধানের ক্ষেত।  ছবি: বাংলানিউজএকই এলাকার কৃষক সমরেশ জানান, এখন বিপদে আছেন অনেক কৃষক। অনেকে জমিতে এবার ধান করেছিলো। ধান কাটাও হয়েছে। কিন্তু ধান বাড়িতে আনতে পারেননি। ক্ষেতে পানি জমে কাটা ধান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ ধান ঘরে তুলেছেন কেউ বা তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন এমন সময়ে এ দুর্ভোগে পড়ে হতাশ বটিয়াঘাটা, দাকোপ, পাইকগাছা, কয়রা ও ডুমুরিয়া উপজেলার কৃষকেরা।

বৃষ্টিপাতে তলিয়ে যাওয়া মাঠের ধান নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন কৃষকেরা। পৌষের ঝড়ো বৃষ্টিতে ক্ষেতের ধান গাছ মাটিতে শুয়ে পড়েছে। এরপর আবার ভারী বর্ষণ হওয়ায় ক্ষেতগুলোতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। পানি থেকে ধান কেটে ঘরে তুলতে শ্রমিককে অতিরিক্ত মজুরি দিতে হচ্ছে অনেককে। ভেজা ধান শুকানো নিয়েও রয়েছে বেশ দুর্ভোগ। কয়েক মাস পরিশ্রম আর বিনিয়োগের ফল ঘরে তোলার সময়ে এমন দুর্দশায় পড়তে হয়েছে কৃষকদের। একদিকে শ্রমিক সংকট, অপরদিকে ধান কেটে বাড়ি আনতে তিনগুণ পরিশ্রমের পরও সোনালি ফসল ঘরে তুলতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে হাজারও কৃষককে। বৃষ্টি শুরুর আগেই যাদের ধান কাটা শেষ হয়েছে তাদের অনেকেই ধান শুকাতে পারেনি। ফলে নষ্ট হয়ে গেছে ধান। বৃষ্টিতে ডুবলো পাকা ধানের ক্ষেত।  ছবি: বাংলানিউজদাকোপের আনন্দনগর গ্রামের কৃষক আকবর গাজী বলেন, বৃষ্টিতে বিভিন্ন এলাকার আমন ধান তলিয়ে গেছে। এতে কষ্টের ফলস তোলা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে পাকা ধান।

এই উপজেলার পানখালি ইউনিয়নের হোগলাবুনিয়া গ্রামের কৃষক গোলাম রসুল শেখ জানান, একদিনের বৃষ্টিতে পাকা ধানের ক্ষেত তলিয়ে গেছে। বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা না থাকায় কৃষকেরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। মাছের ঘেরের জমিতে সবচেয়ে বেশি পানি জমে আছে বলেও জানান কৃষকরা।

এদিকে প্রান্তিক চাষিরা তাদের দাদন ব্যবসায়ী মহাজনদের দাদনের ধান ও সুদের চিন্তায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। কারণ, বেশিরভাগ প্রান্তিক চাষি স্থানীয় মহাজনদের কাছ থেকে মৌসুমের শুরুতে দাদন নিয়ে ধান চাষ করেছিলেন। কিন্তু এখন ধান ঘরে তুলতে না পারায় উভয় সংকটে পড়েছেন তারা।

খুলনা জেলা আবহাওয়া কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ শনিবার বিকেলে বাংলানিউজকে বলেন, খুলনায় শুক্রবারে ২৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। রোববার (৫ জানুয়ারি) থেকে আবহাওয়া স্বাভাবিক হতে শুরু করবে। তবে আকাশ মেঘলা থাকতে পারে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর খুলনার উপ-পরিচালক পংকজ কান্তি মজুমদার বাংলানিউজকে বলেন, দাকোপ, পাইকগাছা , কয়রা, বটিয়াঘাটা ও ডুমুরিয়ার নিচু এলাকার ধানক্ষেতে পানি জমেছে। পানি নেমে গেলে ধানের তেমন ক্ষতি হবে না। যে ধান কেটে জমিতে রাখা হয়েছে সেটার বেশি ক্ষতি হবে। আর যেটা কাটা হয়নি সেটার বেশি ক্ষতি হবে না।

খুলনা জেলায় প্রায় ৯২ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে খুলনার ৯০ শতাংশ ধান কাটা শেষ হয়েছে বলে যোগ করে ওই কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৪, ২০২০
এমআরএম/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।