বৃহত আকারে কুঁচিয়া চাষের এ উপজেলা থেকে রপ্তানি বন্ধ থাকায় অনেকটা ভরা মৌসুমেও কর্মহীন হয়ে পড়েছেন চাষাবাদ, সংগ্রহ ও রপ্তানির কাজের সঙ্গে জড়িতরা। সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসাটিতেও ধস নামার শঙ্কা দেখছেন অনেকে।
জানা গেছে, বিশ্বের অনেক দেশে কুঁচিয়া জনপ্রিয় খাদ্য, তবে চীনের নাগরিকদের কাছে এর চাহিদা ও জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। তবে দেশটিতে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে অনেক লোকের মৃত্যু হওয়ায় চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি থেকে চীনে কুঁচিয়া রপ্তানি সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বিপাকে পড়েছেন আগৈলঝাড়া উপজেলার কুঁচিয়া সংগ্রহ ও রপ্তানির কাজের সঙ্গে জড়িত কয়েকশ পরিবার। কিছুদিন আগেও রপ্তানিযোগ্য কুঁচিয়া সংগ্রহ ও রপ্তানির কাজে যে আড়তগুলোতে ছিল কর্মচাঞ্চল্যতা সেখানেই এখন অলস সময় কাটাচ্ছেন শ্রমিকরা।
আড়তের শ্রমিকদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, নভেম্বর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত কুঁচিয়ার মৌসুম থাকলেও জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিই হলো কুঁচিয়ার ভরা মৌসুম। কিন্তু ভরা মৌসুমের শুরুতেই করোনা ভাইরাসের ধাক্কায় পুরোপুরি ধস নেমে এসেছে এ ব্যবসায়। বন্ধ হওয়ার আগে এখান থেকে সপ্তাহে ২/৩ গাড়ি অথবা ৭ থেকে ১৫ টন কুঁচিয়া রপ্তানি হত। আর মোট রপ্তানির ৯০ শতাংশের মতো কুঁচিয়া চীনে রপ্তানি হত। বাকি ১০ শতাংশের মতো কুঁচিয়া রপ্তানি হয় হংকং, তাইওয়ানসহ বিশ্বের কয়েকটি দেশে। তবে করোনা ভাইরাসের প্রভাবে চীনে কুঁচিয়া রপ্তানি বন্ধ হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন খামারিদের কাছ থেকে দাদন নেওয়া কুঁচিয়া সংগ্রহকারী জেলে বা শিকারিরা। তারা জানান, আড়তদারদের কাছ থেকে দাদন নিয়ে পুকুর, ডোবা-নালা, খাল-বিল অর্থাৎ বিভিন্ন জলাশয় থেকে কুঁচিয়া ধরে আনতেন তারা। কিন্তু বর্তমানে করোনা ভাইরাসের কারণে রপ্তানি বন্ধ থাকায় আড়তদাররাও কুঁচিয়া কিনছেন না। ফলে আগে যেখানে সারাদিন খেটে দুই থেকে তিন কেজি কুঁচিয়া সংগ্রহ করে প্রায় হাজার টাকা আয় করা যেত, সেখান এখন আয় তো দূরের কথা সংসার চালানোটাই দায়।
অপরদিকে রপ্তানি না থাকায় ব্যাংক ও এনজিওর ঋণসহ ব্যবসায় ধসের শঙ্কায় দুঃচিন্তায় পড়েছেন কুঁচিয়া আড়তদারসহ রপ্তানির কাজের সঙ্গে জড়িতরা।
তাদের তথ্যানুযায়ী, করোনা ভাইরাসের প্রভাবে চীনে কুঁচিয়া রপ্তানি বন্ধ থাকায় সবকিছু শেষের পথে। যে কুঁচিয়াগুলো আগে ধরা ছিল, সেগুলো মরে গিয়ে লোকসান সৃষ্টি করছে, তেমনি কুঁচিয়া ধরা বন্ধ থাকায় শিকারিদের রোজগার বন্ধ রয়েছে।
আড়তদারদের মতে, অল্পসময়ের মধ্যে চীনে রপ্তানি কার্যক্রম পুনঃরায় শুরু না হলে তাদের সঙ্গে সঙ্গে দরিদ্র সংগ্রহকারী জেলে বা শিকারিরাও পথে বসবেন।
উপজেলার সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা রোজিনা আকতার বলেন, উপজেলায় যেমন অনেক কুঁচিয়া ব্যবসায়ী রয়েছেন, তেমনি এর সঙ্গে না হলেও কমপক্ষে ৫শ পরিবার জড়িত রয়েছেন। এসব কুঁচিয়া বিদেশে বিভিন্ন জায়গায় রপ্তানি হয়, এর মধ্যে শুধু চীনেই ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ রপ্তানি হয়। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে চীন কুঁচিয়া মাস আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে। এখন স্থানীয় বাজারেও কুঁচিয়া বেচাকেনা বন্ধ রয়েছে। এ মুহূর্তে কুঁচিয়া সংশ্লিষ্ট সংগ্রহকারী জেলে, খামারি ও আড়তদারদের সঠিক পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি। আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) চৌধুরী রওশন ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, করোনো ভাইরাসের প্রভাবে চীন সরকার কুঁচিয়া আমদানি সাময়িকভাবে বন্ধ রেখেছে। ফলে ব্যবসায়ীদের সাময়িকভাবে লোকসান হচ্ছে, কিন্তু উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই। কারণ আমদানি শুরু হলে সমস্যার সমাধান হবে।
অপরদিকে দেশীয় বাজারে কুঁচিয়া মাছের চাহিদা রয়েছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য বিশেষজ্ঞরা। সেক্ষেত্রে বাজারগুলোকে খুঁজে বের করতে পারলে সাময়িক এসব সমস্যা কিছুটা হলেও দূর করা সম্ভব।
যদিও চীনে করোনা সংক্রমণের প্রকোপ না কমলে চলতি বছরের কুঁচিয়া রপ্তানিতে কোনো আশা দেখছেন না এখানকার কুঁচিয়া ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২০
এমএস/এএটি