ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

কৃষি

মিষ্টি কুমড়া আবাদ করে লাখপতি মজিরণ দম্পতি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০২ ঘণ্টা, মার্চ ১, ২০২০
মিষ্টি কুমড়া আবাদ করে লাখপতি মজিরণ দম্পতি

মানিকগঞ্জ: যে রাঁধে, সে চুলও বাঁধে ঠিক তেমনি মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের শেখরী নগরের কৃষক আব্দুল খালেকের স্ত্রী মজিরণ বিবি (৫০)। ৩০-৩৫ বছর ধরে কৃষি কাজে স্বামীকে সাহায্য করে সংসার জীবনে অর্থনৈতিক সচ্ছলতা এনেছেন এই দম্পতি।

চলতি বছর ৫০ শতাংশ জমিতে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করেছেন মজিরণ দম্পতি। ফলনও আশানুরূপ ভালো হয়েছে।

খুচরা ও পাইকারি বাজারে এ বছর মিষ্টি কুমড়ার কদরও রয়েছে প্রচুর। উর্বর মাটি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সারি সারি মিষ্টি কুমড়া ঝুলছে মজিরণ বিবির (জাংলা) মাচাতে। এ মৌসুমে প্রায় দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার মিষ্টি কুমড়া বিক্রি করবে এমনটাই প্রত্যাশা করছে মজিরণ দম্পতি আর তাদের অনুসরণ করে আশ-পাশের অনেকেই মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করেছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, ভোর থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত মিষ্টি কুমড়ার ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায় মজিরণ বিবিকে। স্বামী আব্দুল খালেককে সাহায্য করতে নিজেই (মজিরণ) মিষ্টি কুমড়ার মাচা থেকে সারি সারি ঝুলন্ত কুমড়া কাচি দিয়ে কেটে স্বামীকে দিচ্ছে এবং তা ঝাঁকাতে করে একটি নির্দিষ্ট স্থানে জমাট করে রাখছেন। কাটা শেষ হলে ভ্যানে করে গোলড়া পাইকারি বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে যায় মজিরণের স্বামী আব্দুল খালেক। প্রতিটি কুমড়া পাইকারি বাজারে ৩০-৩৫ টাকা করে বিক্রি করছে এবং খুচরা বাজারে ওই কুমড়া আকার ভেদে ৫০-৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

মজিরণ বিবির স্বামী আব্দুল খালেক বাংলানিউজকে বলেন, আমি এ বছর ৫০ শতাংশ জমিতে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করেছি। সার বীজ থেকে শুরু করে মাচা (জাংলা) দেওয়া পর্যন্ত ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এ পর্যন্ত আমার মিষ্টি কুমড়ার ক্ষেত খেকে ৭০ হাজার টাকার কুমড়া বিক্রয় করেছি আরও দেড় লাখ টাকার কুমড়া বিক্রি করতে পারবো। মিষ্টি কুমড়া চাষে খরচ কম তবে লাভের পরিমাণ বেশি যে কারণে প্রতি বছর আমি মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করি। আমার মিষ্টি কুমড়ার আবাদ দেখে অনেকেই এ বছর আবাদ করেছে।

মজিরণ বিবি বাংলানিউজকে বলেন, সংসারে অভাবের তাড়নায় আধাপেট খেয়ে অনেক দিন পার করেছি। কিভাবে ৩ মেয়েকে বড় করবো তাদের বিয়া দিবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। বাধ্য হয়ে স্বামীর কাজে সাহায্য করতে শুরু করলাম, বছর ঘুরতে না ঘুরতে আমাগো সংসারে অভাব ঘুচতে শুরু করলো। তারপর থেকে প্রতি বছর মিষ্টি কুমড়াসহ বিভিন্ন সবজির আবাদ করতে শুরু করি। প্রতি বছর মিষ্টি কুমড়া বিক্রি করে প্রায় দেড় থেকে পৌনে দুই লাখ টাকা লাভ থাকে আমাদের এবং এ বছরও এ রকমই থাকবে।

মজিবুর রহমান নামের আরো এক মিষ্টি কুমড়ার চাষি বাংলানিউজকে বলেন, আমি এ মৌসুমে সরিষা, ভুট্টা আবাদ করি তবে খালেক ভাইকে দেখে এ বছর ৪০ শতাংশ জমিতে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করেছি। আমার এ পর্যন্ত ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে এবং মিষ্টি কুমড়ার ফলনও ভালো হয়েছে। বর্তমানে যে দরে কুমড়া পাইকারি বাজারে বিক্রি করছি এ রকম দাম থাকলে লক্ষাধিক টাকা লাভ থাকবে।

সাটুরিয়া উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা খলিলুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, মিষ্টি কুমড়া কৃষি খাতে এক নতুন দিগন্তর সূচনার সৃষ্টি করেছে। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মিষ্টি কুমড়ার ফলন ভালো হয়েছে। সাটুরিয়ার সদর ইউনিয়নের শেখরি নগরের মজিরণ দম্পতির খেতে মিষ্টি কুমড়া বাম্পার ফলন হয়েছে এবং যে দাম পাইকারি বাজারে আছে এই দর থাকলে মজিরণ দম্পতি এক থেকে দেড় লাখ টাকা লাভের মুখ দেখবেন। এছাড়া আমরা কৃষি বিভাগ থেকে প্রতিনিয়ত মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৯ ঘণ্টা, মার্চ ০১, ২০২০
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।