জানা যায়, করোনায় কারণে অঘোষিত লকডাউনের কারণে এ বছর ব্যবসায়ীরা আনারস সংগ্রহ করতে আসেনি। আর যেসব ব্যবসায়ীরা আনারস কিনেছেন তারা সবাই স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী।
চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নানিয়ারচরসহ জেলার বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় আনারসের ব্যাপক চাষাবাদ হয়েছে। উৎপাদিত আনারস বর্তমানে জেলা সদর, রাজধানী ঢাকা, শরীতপুর ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন বাজারে বেচাকেনা হচ্ছে। স্থানীয় বাজার ছাড়িয়ে রাঙামাটির আনারস যাচ্ছে বিভিন্ন জেলায়। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় আনারসের চাহিদা থাকলেও করোনা ভাইরাসের কারণে অনেকটাই কমে গেছে। তবে বাগানে আনারস পেকে যাওয়ায় এবং পচে যাওয়ায় কম দামে বিক্রি করে দিচ্ছে চাষিরা।
আনারস চাষি আবুল হাসেম বাংলানিউজকে বলেন, অন্য বছরের তুলনায় এ বছর ফলন ভাল হয়েছে। মনে করেছিলাম লাভের মুখ বেশি দেখবো। কিন্তু করোনায় আমাদের সবকিছু পাল্টে দিয়েছে। বর্তমানে আনারস প্রতি পিস ১০-১৫ টাকা বিক্রি করার কথা। কিন্তু ভাইরাসের কারণে তা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করতে হচ্ছে ৩-৫ টাকা দরে। এ বছর বাগান করতে যা খরচ হয়েছে তার অর্ধেক টাকাও উঠবে না।
সরেজমিনে কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, রাঙামাটি পুরো শহরে আনারসের হাট বসেছে। পাকা আনারসের গন্ধ বাজারজুড়ে। হাতের নাগালে দাম থাকলেও স্থানীয়রা ঘর থেকে বের না হওয়ায় হাট-বাজারগুলোতে বিক্রি তেমন নেই। প্রতি হাজার আনারস পাইকারি দরে বিক্রি হচ্ছে মাত্র ২-৩ হাজার টাকায়। যা গত বছর ১৫-২০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়েছিল। সময় মতো বিক্রি না হওয়ায় বর্তমানে বেশিরভাগ আনারস পচে যাচ্ছে। যে কারণে স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা তেমন ভাল নেই।
জেলা শহরের বনরুপা বাজারের সমতাঘাটে পাইকারি আনারস ব্যবসায়ী বশির মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, আমি এখান থেকে আনারস কিনছি। প্রতি পিস আনারস আমার ৭-৮ টাকা করে খরচ পড়েছে। চট্টগ্রাম পর্যন্ত নিয়ে যেতে গাড়ি ভাড়াসহ আমার প্রতিটি আনারসের মূল্য ১২-১৫ টাকা পর্যন্ত পড়ে যায়। এরমধ্যে অনেক আনারস পচে নষ্ট হয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে এখন তো মানুষ নাই, বেচাকেনাও কম। এখন লাভ-লোকসান সমান সমান বলা যায়। অনেক সময় লোকসানের ভারটা বেশি হয়।
একই স্থানের পাইকারি ব্যবসায়ী সান্তা চাকমা বাংলানিউজকে জানান, প্রতি বছর আনারস বিক্রি করে অনেক লাভবান হলেও এ বছর করোনা ভাইরাসের কারণে বেশি লাভবান হওয়া যাচ্ছে না। কারণ আগে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় আনারস বিক্রি হতো এবং ন্যায্য দামও পাওয়া যেত। এখন বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা এই পরিস্থিতির কারণে খুব কমই আনারস ক্রয় করছেন। ফলে কাঁচামাল হওয়ায় তাদের কাছে কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
আনারস ব্যবসায়ী আল আমিন বাংলানিউজকে বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে বেচাকেনার অবস্থা খুব খারাপ। লাভের চেয়ে লোকসান হবে বেশি।
ব্যবসায়ী আবু হানিফ এবং নুর আলম বাংলানিউজকে জানান, এ বছর আমরা আনারসের ব্যবসা করে তেমন লাভ করতে পারবো না। কারণ মানুষের যাতায়াত বন্ধ, মানুষ চলাফেরা করতে পারছেনা সেজন্য আনারসের বিক্রি কম।
রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক পবন কান্তি চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, আনারস উৎপাদনের জন্য সারাদেশে নানিয়ারচর উপজেলার বেশ পরিচিতি রয়েছে। আনারসের উৎপাদন হয় সাধারণত বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে। কিন্তু বর্তমানে যে আগাম আনারসের উৎপাদন হচ্ছে, সেগুলো বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তিতে হরমোন জাতীয় রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহারে করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এই বছর দুই হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে আনারস চাষ হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর চাষ বেশি হওয়ায় বাম্পার ফলনও বেশি হয়েছে। তবে করোনা ভাইরাসের কারণে আনারস কম বিক্রি হওয়ায় ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না চাষিরা। সেক্ষেত্রে তাদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, বর্তমানে কৃষি সম্প্রসারণের ব্যবস্থাপনায় রাঙামাটিতে কৃষকদের জন্য চার হাজার বিঘা জমিতে আউশ বিজ ধানের প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। যদি কোনো আনারস চাষি আউশ ধানের চাষ করতে চাই তাকেও প্রণোদনার আওয়তায় আনা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০২ ঘণ্টা, মে ০৮, ২০২০
এনটি