পুষ্টিহীনতার অভাব ও মানসম্মত খাবার না পাওয়ায় বিভিন্ন রোগে অনেক মুরগি ইতোমধ্যে মারা গেছে।
ক্রেতা সংকটের কারণে খামারে নিয়মিত উৎপাদিত ডিমের দাম কমে যাচ্ছে।
এতে খামার মালিকরা যেমন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তেমনি এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত কয়েক হাজার শ্রমিক চরম অর্থকষ্টে দিন অতিবাহিত করছে। খামার মালিকদের দাবি তাদের এ দূর অবস্থা কাটাতে এই সেক্টরে সরকারিভাবে বিশেষ উদ্যোগে ও আর্থিক সহাতায় পাওয়া গেলে এই শিল্প ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হবে।
জেলা প্রাণিসম্পদ সূত্রে জানা যায়, জেলায় বিভিন্ন উপজেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে লেয়ার এবং পোল্ট্রির এক হাজারের মত খামার রয়েছে। প্রায় দশ হাজার শ্রমিক কর্মরত আছেন এ শিল্পে। এ শিল্পকে পুঁজি করে অনেকেই আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন। অনেক শ্রমিকের বেকারত্ব দূর হয়েছে।
সরেজমিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার চুন্টা গ্রামে কৃষিভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠান হাজী এস এ এগ্রো কমপ্লেক্স লিমিটেড খামারে গিয়ে দেখা যায়, ১৩ কানি জায়গার অধিকাংশ জুড়ে কয়েকটি শেডে গড়ে তোলা হয়েছে লেয়ার মুরগির খামার। প্রায় ৩০ হাজার মুরগি পালন করে এখানে প্রতিদিন ৩০ হাজার ডিম উৎপাদন করা হয়। কিন্তু করোনা সংকটের কারণে খামারের সেই চাকা থমকে গেছে। সেইসঙ্গে পরিচর্যার অভাবে মোরগও মারা যাচ্ছে। এতে ডিমের উৎপাদনও কমে এসেছে। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আড়তদাররা ডিম নিতে এলেও এখন তা অনেকটাই বন্ধ।
কথা হয় ওই খামারের শ্রমিক মনির মিয়ার সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, করোনার কারণে আমাদের কাজকর্ম তেমন হচ্ছে না। বেতনও পেতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আমাদের খামারের ডিম শুধু ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে নয় অন্যান্য জেলাতে সরবরাহ করা হত। কিন্তু এখন সরবরাহ অনেকটা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমাদের মহাজনও কষ্টে আছেন।
নারী শ্রমিক বেদেনা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, এই খামারে বেতন দিয়ে আমার সংসার চলে। এখন ঠিকমত বেতন না পাওয়াতে পরিবার নিয়ে অনেকটা কষ্টে আছি। মালিকও আছেন বেকায়দায়। তিনি বাঁচলে তো আমরা বাঁচতাম।
আরো কয়েকজন খামার শ্রমিক বাংলানিউজকে বলেন, আমরা তো মালিকদের সহযোগিতায় খেয়ে পড়ে আছি। হাতে টাকা পয়সা না থাকায় গ্রামের বাড়িতে পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্টে দিনপার করছি। স্বাভাবিক সময়ে কর্ম ব্যস্ততার মধ্যে দিন শুরু হলেও এখন বেশিরভাগ অলস সময় কাটছে। কে জানে কবে করোনা দূর হয়।
খামারের চেয়ারম্যান মো. লৎফুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ১৪ বছর ধরে ব্যবসাটিকে নিজ অর্থায়ন ও ব্যাংকের ঋণের মাধ্যমে পরিচালনা করে আসছি। করোনার মহামারিতে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। এমন ক্ষতির সম্মুখীন কখনও হইনি। আমরা নিরুপায়।
এস এ এগ্রো কমপ্লেক্স লিমিটেড খামারের মালিক আবু শামীম মো. আরিফ বাংলানিউজকে বলেন, আমার খামারের প্রায় পাঁচ হাজার মুরগি মারা গেছে। উৎপাদিত ডিম আমাদের কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। তাতে আমাদের উৎপাদন খরচই উঠছে না। এতে করে শ্রমিকদের বেতন পরিশোধসহ আনুসাঙ্গিক খরচ মিটানো কঠিন হয়ে পড়েছে। এখন পর্যন্ত খামারে অর্ধকোটি টাকার লোকসান গুনতে হয়েছে। সামনের দিনগুলি নিয়ে শঙ্কায় আছি। সরকার যদি আমাদের বিশেষ প্রণোদনার আওতায় এনে সহযোগিতা করে তাহলে এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে পারব।
আবাবিল দেশি চিক অ্যান্ড হ্যাচারির মালিক হাসান শুভ বাংলানিউজকে বলেন, আমার খামারে চার হাজার বয়লার মুরগি ছিল। করোনার কারণে ৯৫ টাকা কেজিদরের মুরগি বিক্রি করতে হয়েছে ৬৫ টাকায়। প্রতি কেজিতে লোকসান হয়েছে ৩০ টাকা। এছাড়া জায়গার ভাড়া, শ্রমিক খরচ মিটিয়ে দেড় মাসে প্রায় এক লাখ ৭১ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে।
ঈশা পোল্ট্রি অ্যান্ড হেচারির মালিক ফারুক মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, আমার খামারে ৩০ হাজার মুরগি ছিল। খাবারের অভাবে কিছু বিক্রি করে দিয়েছি। তবে অনেক মুরগি বিভিন্ন অসুখে মারা গেছে। ৩০ জন শ্রমিক বেকার অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। করোনায় আমার প্রায় অর্ধকোটি টাকা লোকসান হয়েছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এ. বি. এম সাইফুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, করোনা সংকটে খামারিদের কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। প্রথম দিকে লকডাউনের ধাক্কায় পরিবহনের কিছু সমস্যার কারণে খাদ্য সংকট কিছুটা ছিল। পরবর্তীকালে সরকারের আন্তরিকতায় আমরা প্রাণিসম্পদ বিভাগ জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে এই সেক্টরের পরিবহন যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় আমরা সেই ব্যবস্থা নিয়েছি। সরকার এ ব্যাপারে পাঁচ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনার ঘোষণা দিয়েছে। সেটা পেলে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেব। ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কৃর্তপক্ষকে জানিয়েছি।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৯ ঘণ্টা, মে ১৩. ২০২০
আরএ