ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

বগুড়ায় শীতকালীন সবজির দখলে কাঁচা বাজার

কাওছার উল্লাহ আরিফ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০২০
বগুড়ায় শীতকালীন সবজির দখলে কাঁচা বাজার হাটে ভ্যানবোঝাই লাউ। ছবি: বাংলানিউজ

বগুড়া: বগুড়ায় হাট-বাজারগুলো দখল করে নিয়েছে আগাম চাষ করা শীতকালীন সবজি। জেলার সর্ববৃহৎ মহাস্থান কাঁচা বাজারে এখন শীতকালীন সবজির পসরা সাজিয়ে ব্যাপারীদের নজর কাড়তে চলছে কৃষকদের নানান প্রচেষ্টা।

মানভেদে চলছে দরদাম ও বেচা-বিক্রি।

বুধবার (১১ নভেম্ববর) সকালে জেলার বৃহৎ মহাস্থানগড় সবজি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মাঠের বিশাল অংশজুড়ে সাজিয়ে রাখা হয়েছে ফুলকপি ও বাঁধাকপি। একপাশে ডাটা আর অন্য পাশে শোভা পাচ্ছে সারিসারি বাঁধাকপি।

বছরের এ সময়টায় সপ্তাহের শনিবার ও বুধবার হাট ছাড়াও প্রতিদিন সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলাসহ আশ-পাশের এলাকার কৃষকরা এ বাজারে তাদের জমির উৎপাদিত সবজি বিক্রি করতে আসেন। জেলার বিভিন্ন উপজেলাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকাররা এ হাটে সবজি কিনতে আসেন। সরেজমিনে দেখা যায়, ভোর থেকেই জেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষক তাদের উৎপাদিত সবজি ভ্যান, ভটভটি, মিনি ট্রাকেযোগে হাটে তুলতে শুরু করেন। মাঠের বিশাল অংশজুড়ে সাজিয়ে রাখা ফুলকপি। নিচে ডাটা আর ওপরে শোভা পাচ্ছিলো ফুলগুলো। স্তুপ থেকে ঝাঁঝ ছড়াচ্ছিলো কাঁচা মরিচ ও পেঁয়াজের। ভ্যানভর্তি মূলা যেন ফোঁকলা দাঁতের হাসি ঝরাচ্ছিলো অবিরত। বেগুনের তো গুণেরই শেষ নেই! করলা, পেঁপে, লাউ শোভা পাচ্ছিলো সবুজের সমারোহ। সবজিগুলো ক্ষেত থেকে তুলে কৃষক সরাসরি বিক্রি করতে বাজারে নিয়ে এসেছেন। তরতাজা এসব সবজির গায়ে তখনো লেগেছিলো মাটির ঘ্রাণ ও শিশিরকণা। তবে সবজির দাম যেন ক্রেতার নাগালের বাইরে।

সবজিগুলো ক্ষেত থেকে তুলে সরাসরি বিক্রি করতে বাজারে নিয়ে এসেছে কৃষক। ভোর থেকে তাদের এই বিক্রির আয়োজন চলে। ক্ষেত থেকে সবজি তোলার পর ভটভটি, ভ্যান, রিকশা, বাইসাইকেলসহ বিভিন্ন মাধ্যমে সকাল ৭টার মধ্যেই কৃষকরা সবজি নিয়ে এই বাজারে হাজির হয়। বাজারে পা রাখা মাত্র স্থানীয়সহ দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা পাইকাররা ঘিরে ধরে কৃষকদের। যে যার মতো সবজি নিয়ে বাজারের নির্ধারিত স্থানে গিয়ে অবস্থান নেন। পরে পাইকাররা দরদাম কষে সবজি কিনতে শুরু করেন। এভাবেই দিনব্যাপী চলে সবজি কেনা-বেচা। বিকেল হতেই দূর-দূরান্তের পাইকারদের কেনা সবজি পণ্যবাহীতে নিয়ে ছুটে চলেন নিজ এলাকার বাজারগুলোতে। এ কাজে পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরও দেখা যায়। সবজির এ বাজারে আলু, ফুলকপি, বাঁধাকপি, পটল, ঢেঁড়স মূলা, বেগুন, মরিচ, গাঁজর, শিম, পেঁয়াজ, পালং ও লাল শাক, করলা, ঝিঙা, বরবটি, শসা, শোলকপাতা, ধনিয়াপাতা, ছাচি লাউ, মিষ্টি কুমড়া, আদা, রসুনসহ সব ধরনের সবজি পাওয়া যায়।

এরমধ্যে আলু ৩৮ টাকা কেজি, বেগুন ৫০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১৩০ টাকা, শুকনো মরিচ ২৭০ টাকা, মূলা ৪৫ টাকা, গাঁজর ৭০ টাকা, শিম ১২০ টাকা, টমেটো ৪৫০ টাকা, পেঁয়াজ ৭২ টাকা, ফুলকপি ৮০ টাকা, ধনিয়া পাতা ১২০ টাকা, বাধাকপি ৩০ টাকা পিস, পালং শাক ৫০ টাকা, লাল শাক ৬০ টাকা, করলা ৭০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, ঢেঁড়স ৪৫ টাকা, শসা ৫০ টাকা, আদা ৯০ টাকা, রসুন ১২০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ৩৫ টাকা ও ছাচি লাউ ৩০ পিস পাইকারি দরে বেচাবিক্রি হচ্ছে। যা স্থানীয় খুচরা বাজারে এসে কেজিপ্রতি ৫-১৫ টাকা বেড়ে যাচ্ছে।

ইমাম আলী, গোলজার, শাজাহান, ইয়াসিনসহ একাধিক কৃষক বাংলানিউজকে জানান, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকাররা এখানে নিয়মিত আসেন। এছাড়া স্থানীয়ভাবে বড় পাইকাররাও কেনাকাটার জন্য এ মোকামের ওপর নির্ভরশীল। বগুড়া জেলার মধ্যে ঐতিহ্যবাহী মহাস্থানগড় কাঁচা বাজার সবজির সবচেয়ে বড় মোকাম। তাই সবসময়ই মহাস্থানগড় বাজারে পণ্যের ব্যাপক চাহিদা থাকে। তারা আরও জানায়, আবহাওয়া উপর শীতকালীন সবজির আবাদ নির্ভর করে। এবার মোটামুটি আবাদ ভালো হয়েছে। বাজারেও সবজির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। দামও বেশ ভালো। সবমিলিয়ে এ মোকামে প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণ সবজির আমদানি ঘটাচ্ছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা।

জয়ন্ত দাস, সোলেমান মিয়া, নাদিম হোসেনসহ একাধিক পাইকার ব্যবসায়ী বাংলানিউজকে জানান, শীতকালীন আগাম সবজিতে কৃষকের পাশাপাশি তারাও বেশ লাভবান হয়ে থাকেন। শীতের শেষ ভাগে তেমন লাভের মুখ দেখতে পান না বলেও মন্তব্য করেন তারা। বগুড়া জেলায় আগাম চাষাবাদের শীতকালীন নানান সবজি রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করেন তারা।

শহরের খুচরা বাজারের সবজি বিক্রেতা সোহেল রানা, সাব্বির হোসেন, আব্দুল হান্নান বাংলানিউজকে জানান, তারা শহরের বিভিন্ন বাজারের খুচরা সবজি বিক্রেতা। তারা নিয়মিত ভাবে মহাস্থান বাজার থেকে পাইকারি সবজি কিনে থাকেন। এ হাটে চাহিদা মতো প্রায় সব ধরনের টাটকা তরতাজা সবজি পাওয়া যায়। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপতরের উপ-পরিচালক মো. ফরিদুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, বগুড়াকে সবজিখ্যাত জেলা বলা হয়ে থাকে। এ জেলার কৃষকের উৎপাদিত সবজি পাইকারদের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জেলার বাজারগুলোর চাহিদা মিটিয়ে থাকে।

তিনি জানান, আগস্ট মাস থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত সময়কালের মধ্যে চাষাবাদকে আগাম চাষ হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। জেলায় এ পর্যন্ত গড়ে ৬ হাজার হেক্টর জমিতে রবি মৌসুমের শীতকালীন সবজি চাষ করা হয়েছে। এ বছর পুরো রবি মৌসুমে জেলায় ১২ হাজার ৮১৩ হেক্টর জমিতে রকমারি সবজি চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

বর্তমানে আগাম চাষাবাদের সবজিতে বাজারগুলো ভরে উঠেছে। বাজার মূল্য ভাল থাকায় এ ফলনে কৃষকরা বেশ লাভবান হচ্ছেন। শীতকালীন আগাম চাষাবাদে কৃষক বরাবরি লাভবান হয়ে থাকে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০২০
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।