ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

ঢাকায় খেজুর গাছ, মেলে বিশুদ্ধ রস!

জিএম মুজিবুর, সিনিয়র ফটো করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২, ২০২১
ঢাকায় খেজুর গাছ, মেলে বিশুদ্ধ রস! গাছি খলিল মিয়া। ছবি: জিএম মুজিবুর

ঢাকা: খেজুরগাছ, শীতের সঙ্গে রয়েছে যার নিবিড় সম্পর্ক। শীতকালে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী খেজুরগাছ থেকে পাওয়া যায় সুমিষ্ট রস, গুড়।

ফল হিসেবেও খেজুরের জুড়ি নেই। শীতের মিষ্টি রোদে খেজুরের গুড় দিয়ে মুড়ি খেতে কে না ভালোবাসে? 

শুরু হয়েছে শীতের মৌসুম। গ্রামাঞ্চলের গাছিরা এখন ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন খেজুর গাছের রস সংগ্রহে। পুরোপুরি শীত আসার আগেই খেজুর গাছ থেকে রস আহরোনের জন্য গাছ প্রস্তুত করছেন গাছিরা। সেই সঙ্গে কদর বেড়েছে অবহেলায় পড়ে থাকা গাছগুলোর। কোমরে দড়ি ও হাতে ধারালো দা নিয়ে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের উপযোগী করতে ব্যস্ত গাছিরা।

তবে শুধু গ্রাম নয়, বর্তমানে ইট পাথরের শহর রাজধানী ঢাকার মগবাজার এলাকায় খেজুর গাছ কেটে রস বিক্রি করেন ফরিদপুর জেলার ভাংগা থানার গজারিয়া গ্রামের খলিল মিয়া (৬৫) নামে এক গাছি। ৩০ বছর ধরে তিনি শীতকালে মগবাজার খেজুর গাছ কেটে রস বিক্রি করেন।  গাছ কেটে হাড়ি বাসাচ্ছেন খলিল মিয়া।  ছবি: জিএম মুজিবুরবেলা গড়িয়ে বিকেল তিনটা। রাজধানীর অফিসার্স ক্লাবের ফুটপাত দিয়ে যাচ্ছিলেন বৃদ্ধা খলিল মিয়া। ব্যস্ততম শহরে সবাই যখন গ্রাম থেকে ছুটে আসে চাকরি বা ব্যবসা বাণিজ্য করার জন্য সেখানে তিনি প্রতিবছর ফরিদপুর থেকে ছুটে আসেন তিন মাসের জন্য খেজুর গাছ কাটতে। বাকি ৯ মাস গ্রামে কৃষিকাজ করেন। তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা সাতজন। বড় ছেলে এসএসসি পাস করেছে, মেঝ ছেলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। বাকি তিনজন প্রাইমারিতে পড়াশোনা করছে।

বৃদ্ধ খলিল মিয়ার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মগবাজার পেয়ারাবাগ রেললাইনের আশেপাশে এলাকাতেই প্রতিবছরই ৪০-৪২টা খেজুর গাছ কাটেন তিনি। এ কেটেছেন ৩৮টি গাছ। বেশিরভাগ গাছগুলোই সরকারি কোয়ার্টারে ও লাইনের আশপাশের। প্রতিদিন গাছ কেটে যে রস হয় তা গাছের মালিককে অর্ধেক দিয়েও ১৮-২০ লিটার বিক্রি করেন বড় বড় ব্যবসায়ী ও মন্ত্রীদের বাসায় বাসায়। গতবছর প্রতি লিটার বিক্রি করেছিলেন ১২০ টাকায় এবছর নির্ধারণ করেছেন ১৫০ টাকা। কাচিতে শান দিচ্ছেন খলিল মিয়া।  ছবি: জিএম মুজিবুরখলিল মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, আমি একসময় গ্রামে খেজুর গাছ কাটতাম তাতে আমার পোষাতো না। কারণ রস বিক্রি করা যেত না আর জ্বালানি খরচ করে গুড় বিক্রি করলে আমার পরিবারের ভাতের টাকা হতো না। এজন্য আমি বিগত ৩০ বছর ধরে ঢাকার শহরে এসে খেজুর গাছ কাটছি এবং রস বিক্রি করছি। এখানে রসের অগ্রিম অর্ডার থাকে এবং আল্লাহর রহমতে আমার কখনো কোনোভাবে কষ্ট পেতে হয় না। সবাই এখানকার রস খেয়ে খুশি ১০-১৫ দিন আগে থেকেই আমার রসের অর্ডার নেওয়া থাকে পর্যায়ক্রমে আমি স্যারদের বাসায় বাসায় নিজে গিয়ে রস দিয়ে আসি। এখনও পর্যন্ত আমার রসে কোনো প্রকার ত্রুটি পাইনি আর বাকি জীবনেও পাবে না ইনশাআল্লাহ।  

‘রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে খেজুর গাছ কাটতে গিয়ে কোনো ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় কিনা’ এমন প্রশ্নের জবাবে খলিল মিয়া বলেন, মাঝেমধ্যে রাতের বেলায় অনেক গাছের রস পোলাপানে খেয়ে ফেলে, তাতে আমি কিছু মনে করি না কারণ এরকম ঘটনা গ্রামেও ঘটতো।

তিনি বলেন, আমি প্রতি মাসে ১৫০০ টাকা সিট ভাড়া ও খাওয়া খরচ বাদ দিয়ে যে টাকা তিন মাসে থাকে, তা নিয়ে বাকি ৯ মাস টুকটাক কৃষিকাজ করে আল্লাহর রহমতে বিবি বাচ্চাদের নিয়ে গ্রামের বাড়িতে ভালো আছি। তবে আর বেশিদিন এই কঠিন কাজ করতে পারব না! কারণ বয়স অনেক হয়ে গেছে, রাতে ঘুমানোর পর হাতে পায়ে জ্বালা যন্ত্রণা করে, শুধু বাচ্চাদের মুখের দিকে তাকিয়ে ও ওদের মানুষ করার জন্য আমি এই হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে যাচ্ছি, সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।  

 

বাংলাদেশ সময়: ১০৩২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০২, ২০২১ 
জিএমএম/এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।