নরসিংদী: নরসিংদীর শাক-সবজির আলাদা খ্যাতি রয়েছে সারাদেশে। জেলার সবজির গুণগত মান ভালো ও পুষ্টিকর হওয়ায় সারাদেশেই এখানকার সবজির চাহিদা রয়েছে।
সিম, ফুলকপিসহ হরেক রকম শীতকালীন সবজিতে হেসে উঠেছে ফসলের মাঠ। তাই জেলার পাইকারি ও খুচরা সবজির বাজারগুলোতে বেড়েছে শীতকালীন শাকসবজির সরবরাহ। এতে কমতে শুরু করেছে শীতকালীন সবজির দাম।
মৌসুমের শুরুতে অতিবৃষ্টি ও কুয়াশার কারণে শীতের আগাম শাকসবজির আশাব্যঞ্জক ফলন না পেলেও এখন সবধরনের সবজির উৎপাদন বাড়ছে বলে জানিয়েছেন কৃষক ও কৃষি বিভাগ।
জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলায় শীতকালীন শাকসবজির আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১০ হাজার হেক্টর জমি। জেলায় সবজি চাষ বেশি হয় শিবপুর, মনোহরদী, বেলাব ও রায়পুরা উপজেলায়।
এবার জেলার কৃষকরা শীতকালীন আগাম শাকসবজির আবাদ করেও অতিবৃষ্টির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে সবজির বাজারগুলোতে সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বেড়ে যায় শীতকালীন শাকসবজির। অতিবৃষ্টি কাটিয়ে দফায় দফায় চারা তৈরির পর এখন শাকসবজির উৎপাদন বাড়িয়েছেন কৃষকরা।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় উৎপাদন বেড়েছে ফুলকপি, বাঁধাকপি, লালশাক, লাউ, মুলা, সিম, ঢেড়শ, কুমড়া, বেগুনসহ অন্য শীতকালীন সবজির। শীতের শুরুতে পাইকারি বাজারগুলোতে তেমন সরবরাহ না থাকলেও এখন বাড়ছে সবধরনের শাকসবজির সরবরাহ। উৎপাদিত সবজি বেলাব উপজেলার বারৈচা ও নারায়ণপুর, রায়পুরা উপজেলার জঙ্গি শিবপুর ও মরজাল, শিবপুর উপজেলার শিবপুর, পালপাড়া, যোশর , সৃষ্টিগড় ও কোন্দারপাড়া পাইকারি সবজি বাজারে বিক্রি করতে নিয়ে আসেন কৃষকরা। পাইকারি ক্রেতারা স্থানীয় বাজার থেকে প্রতিদিন ৩০-৪০ ট্রাক শাক-সবজি কিনে রাজধানী ঢাকাসহ নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও সিলেট জেলায় পাঠাচ্ছে। নরসিংদীর শাকসবজি এসব জেলার চাহিদার প্রায় ৪০ ভাগই পূরণ করে।
সরেজমিনে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বেলাব উপজেলার নারায়ণপুর সবজির হাটে গিয়ে দেখা যায়, আশেপাশের গ্রাম থেকে সবজি চাষিরা ভ্যান ও রিকশায় ঝুড়ি ভর্তি বিভিন্ন ধরনের শীতকালীন সবজি নিয়ে হাটে জড়ো হয়েছে। ক্রেতা বিক্রেতাদের দরদামের ছন্দে বাজারের পরিবেশ হয়ে উঠেছে ছন্দময়।
এ বাজারে কথা হয় চাঁন মিয়ার সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এ বছর ১ বিঘা জমিতে সিম চাষ করেছি। সিমের উৎপাদন ভালো হয়েছে। বাজারে সীমের দাম ও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। ইতোমধ্যে জমির অর্ধেক সিম বিক্রি করে জমির খরচ তুলে ফেলেছি। যার ফলে আমার লাভ ভালোই হবে।
শিবপুর উপজেলার কুন্দারপাড়া গ্রামের কৃষক রুবেল মিয়া বলেন, এবার মৌসুমের শুরুতে কুয়াশা ও অতিবৃষ্টির কারণে শীতকালীন সবজির ফলন বেশি হয়নি। তবে ধীরে ধীরে আবহাওয়া অনূকূলে আসায় শীতকালীন সবজিতে হেসে উঠেছে আমাদের ফসলের মাঠ। সব চাষির উৎপাদন ভালো হয়েছে। বাজারে চাহিদার তুলনায় সবজির সমারোহ বেশি। যে কারণে সকল সবজির দাম কম। দাম কম হলেও এবার কৃষকরা লাভবানই হবে।
ঢাকা থেকে সবজি কিনতে আসা পাইকারি ক্রেতা শরিয়ত সরকার বলেন, নরসিংদীর সবজির চাহিদা সারাদেশেই রয়েছে। এখানকার সবজির আলাদা খ্যাতি রয়েছে। যে কারণে সহজেই আমরা ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করতে পারি। অন্য এলাকার সবজি থেকে এখানকার সবজির দামও কম । তাই আমরা নরসিংদীর বিভিন্ন সবজির হাট থেকে সবজি কিনে নিয়ে ঢাকায় বিক্রি করি।
সিলেট থেকে সবজি কিনতে আসা আরেক পাইকারি ক্রেতা শুকুর আলী বাংলানিউজকে বলেন, নরসিংদীর সবজির হাটগুলোতে একসঙ্গে অনেক সবজি পাওয়া যায়। কৃষকরা সরাসরি হাটে সবজি নিয়ে আসার কারণে আমরা কোনো মাধ্যম ছাড়াই সুলভ মূল্যে সবজি কিনতে পারি। এখানকার সবজির গুণগত মান ভালো ও পুষ্টিকর। যার কারণে সহজেই ক্রেতাদের কাছে সবজি বিক্রি করে আমরা লাভবান হতে পারি।
নরসিংদী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শোভন কুমার ধর বাংলানিউজকে বলেন, এবার মৌসুমের শুরুতে কুয়াশা ও অতিবৃষ্টি কাটিয়ে দফায় দফায় চারা তৈরির পর এখন শাক সবজির উৎপাদন বাড়িয়েছেন কৃষকরা। সবজির উৎপাদন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাজারে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় প্রতি সপ্তাহেই কমে আসছে সবধরনের সবজির দাম। সবজির পুরো উৎপাদন শুরু হলে দাম আরও সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে, তবে এতে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৪, ২০২১
এনটি