সুন্দরবন থেকে ফিরে: জঙ্গলে এহন গোলপাতা কাটতি কেউ তেমন যাইতে চায় না। গোলপাতার কদর আগের মতো নাই।
সুন্দরবন সংলগ্ন পাইকগাছা উপজেলার ফকিরাবাদ গ্রামের বাওয়ালি আতিয়ার রহমান এ কথা বলেন।
তিনি জানান, গোলপাতার দিন শেষ হয়ে আসছে। সুন্দরবনে গোলপাতা আহরণ মৌসুমে এবার তেমন সাড়া মিলছে না বাওয়ালিদের। বনবিভাগের কড়াকড়ি আরোপ ও তুলনামূলকভাবে গোলপাতার চেয়ে টিনের দাম কম হওয়াতে দিনকে দিন এর ব্যবহার কমছে। দুই মাসের জন্য বড় ট্রলার নিয়ে যেতে যে পরিমাণ খরচ হয় তা গোলপাতা বিক্রি করে ওঠে না। তার ভাষ্য মতে, সুন্দরবনের নদী-খাল পাড়ে ও গভীর বনে গোলপাতার বিশাল বিশাল কূপ (প্রজনন ক্ষেত্র) রয়েছে। পাশ নেওয়ার পরে বন বিভাগ নির্ধারণ করে দেয় কে কোনো অঞ্চল থেকে গোলপাতা কাটবে।
একই এলাকার বাওয়ালি মোস্তাক গাজী জানান, গোলপাতার কদর আগের মতো না থাকলেও জীবিকার তাগিদে পুরানো পেশা টিকিয়ে রাখতে ও নিতান্তই দরিদ্র মানুষের চাহিদা মেটাতে অনেকেই বনে যান গোলপাতা কাটতে। আসন্ন মৌসুমকে সামনে রেখে নৌকা ও ট্রলার মেরামত করছেন মহাজন-বাওয়ালিরা। তিনি জানান, কয়েকদিন পরই এ মৌসুমের গোলপাতা আরহণ শুরু হবে। কিন্তু বন বিভাগ অনেক জায়গায় অভয়ারণ্য ঘোষিত করায় সেসব স্থানের কূপ থেকে গোলপাতা কাটা যায় না। গোলপাতা কাটায় নিষেধাজ্ঞা থাকায় পাতা নষ্ট হচ্ছে। এক জায়গায় অধিক গাছ হওয়ায় গাছের পাতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। গোলগাছ নারকেল গাছের মতো ঝোড়া বা পরিষ্কার করা না করলে ফলন কমে যায়।
মোস্তাক গাজী জানান, সুন্দরবন থেকে গোলপাতা কেটে আনার পর সেগুলো খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও সরূপকাঠির বিভিন্ন আড়তে বিক্রি করা হয়। এক কাউন ভালো গোলপাতার দাম ২ হাজার ৭০০-৩ হাজার টাকা। বাওয়ালিরা জানান, কোনো এক সময় ঘরের চালে গোলপাতার ছাউনি উপকূলসহ বিভিন্ন জেলায় খুব জনপ্রিয়। এ পাতার ছাউনি ঘর গরমের সময় ঠাণ্ডা ভাব এবং শীতের সময় গরমভাব অনুভূত হয়। গোলপাতা দিয়ে ভালোভাবে ঘরের ছাউনি দিলে ৩/৪ বছর পার হয়ে যায়। প্রতি বড় নৌকা বা ট্রলারে ৯-১০জন বাওয়ালি গোলপাতা কাটা, আহরণ ও মজুদের কাজে নিয়োজিত থাকে। বাঘের আক্রমণের কারণে গোলপাতা সংগ্রহ করা অধিক ঝুঁকিপূর্ণ।
তারা অভিযোগ করেন, গোলপাতা কাটার পাস পারমিট পেতে বিড়ম্বনা পোহাতে হয় অনেক সময়। তাছাড়া বনে আগের মত ভালো মানের বড় গোলপাতা পাওয়া যাচ্ছে না। তারপরও জীবিকার টানে গোলপাতা কাটতে হয়।
বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পূর্ব সুন্দরবন বিভাগে শরণখোলা, চাঁদপাই ও শ্যালা নামক তিনটি গোলপাতা কূপ রয়েছে। এছাড়া সুন্দরবনের পশ্চিম বিভাগে খুলনা রেঞ্জেও তিনটি গোলপাতার কূপ রয়েছে। এগুলো হচ্ছে-সাতক্ষীরা, আগুয়া শিবসা ও শিবসা কূপ। জানা যায়, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের খুলনা, পটুয়াখালী, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরার লোকদের ঘরের চাল ছাওয়ার জন্য গোলপাতা ব্যাপক ব্যবহৃত হয়। এ কাজে যুক্ত আছে প্রায় ২০-২৫ হাজার লোক। সুন্দরবনের অভ্যন্তরের নদী ও খালের চরাঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে গোলগাছ জন্মে। জোয়ারবিধৌত জমির বীজতলায় সাধারণত গোলপাতার চারা তৈরি হয়। পাঁচ বছর বয়সী গাছের পাতা বছরে একবার কাটা হয়। উদ্ভিদটির মাঝের ও সংলগ্ন কিছু কচিপাতা রেখে অন্য সব পাতাই কাটা যায়।
সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসীন হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, সুন্দরবনে গোলপাতা কাটার জন্য বাওয়ালিরা নৌকা ও লোকবল নিয়ে পাস পারমিট নিচ্ছেন। পাস পারমিটের কাজ সম্পন্ন হলে এ মাসের শেষের দিকে গোলপাতা কাটা শুরু হবে।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, এবার গোলপাতা কাটার প্রথম দফা মৌসুম শুরু হবে ২৫ জানুয়ারি থেকে। যা চলবে দুই মাস। এখন চলছে নৌকার নিবন্ধন সনদ নবায়নসহ পাস পারমিটের কাজ।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০২১
এমআরএম/এএটি