ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

সরকারি প্রণোদনায় পতিত জমিতে চাষাবাদ বাড়ছে

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০২১
সরকারি প্রণোদনায় পতিত জমিতে চাষাবাদ বাড়ছে

ফেনী: যেসব জমি অনাবাদি ও পতিত পড়ে থাকতো, সেসব জমিতে চাষাবাদ হচ্ছে শীতকালীন শাক-সবজি। সরকারি প্রণোদনা ও প্রদর্শনী বাড়ানোয় এটি সম্ভব হয়েছে।

এ কার্যক্রমের ফলে এক ফসলি জমিকে দ্বি-ফসলি এবং দ্বি-ফসলি জমিকে তিন ফসলি জমিতে রূপান্তর করা সম্ভব হচ্ছে। ফলে কৃষকের লাভ হচ্ছে এবং বাড়ছে খাদ্য উৎপাদন।

চলতি মৌসুমে বোরো ধান, গম, ভুট্টা, সরিষা, সূর্যমুখী, চীনা বাদাম ও শীতকালীন সবজি উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পে ফেনী জেলায় ১৩ হাজার ৫শ’ কৃষকের মধ্যে ৪৫ লাখ ১৪ হাজার টাকার বীজ ও সার এবং ৫১ লাখ টাকা ব্যয়ে ১০ হাজার কৃষকের মধ্যে হাইব্রিড বীজ বিতরণ করা হয়েছে।

এছাড়া, ৯৩ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা ব্যয়ে নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চট্টগ্রাম ও চাঁদপুর কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার ৪৮৩টি প্রদর্শনী বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বিনামূল্যে বীজ, সার ও প্রদর্শনী ব্লক পেয়ে অনেক কৃষক অনাবাদি ও পতিত জমিতে বিভিন্ন ফসল করেছেন। এবার রবি মৌসুমে ফেনীতে বিগত বছরের তুলনায় চার হাজার হেক্টর বেশি জমিতে চাষাবাদ হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানায়, ফেনীতে ১৩৪ কৃষি ব্লকে মোট ৬৯ হাজার ৫৫২ হেক্টর চাষাবাদ যোগ্য জমি রয়েছে। রবি মৌসুমে এসব জমির ৪৯ হাজার ৭৯১ হেক্টর আবাদযোগ্য রয়েছে। কিন্তু নানা সমস্যার কারণে কৃষকরা এসময় অনেক জমি অনাবাদি রেখে দেন। গত মৌসুমে জেলায় ২৯ হাজার ৫২৫ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়। এবার তা বেড়ে ৩৩ হাজার ৮৫৫ হেক্টরে দাঁড়িয়েছে।


সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, আগামী মৌসুমে সরকারি প্রণোদনা অব্যাহত থাকলে রবি মৌসুমে আবাদযোগ্য পুরো ৪৯ হাজার হেক্টর জমিই চাষাবাদের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে।
কৃষি বিভাগ আরও জানায়, ফেনীতে ৩ লাখ ৩১ হাজার ৩৮৪ পরিবারের মধ্যে ১ লাখ ৭২ হাজার ৩২০টি পরিবার কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। এর মধ্যে ৬৪ হাজার ৮৭৮ ক্ষুদ্র ও ৫৮ হাজার ৭২টি প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষি পরিবার রয়েছে। এসব পরিবারের বেশিরভাগ কৃষকই অস্বচ্ছল ও দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মিঠুন ভৌমিক জানান, চলতি রবি মৌসুমে বোরো, গম, ভুট্টা, সরিষা, সূর্যমুখী, চিনাবাদাম, মুগ চাষাবাদের জন্য ফেনীতে সাড়ে ৩ হাজার কৃষকের মধ্যে ৪৫ লাখ ১৪ হাজার টাকার বীজ ও সার বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে।

নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চট্টগ্রাম ও চাঁদপুর কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের পর্যবক্ষণ ও মূল্যায়ন কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. জুলফিকার আলী জানান, কৃষক পর্যায়ে উন্নত জাতের ফসল উৎপাদনের জন্য জেলায় চলতি মৌসুমে ৯৩ লাখ ১২ হাজার টাকা ব্যয়ে ২৩ জাতের ১ হাজার ৪৮৩টি প্রদর্শনী করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট বিভাগের রবি মৌসুমের ১৯-২০ ও ২০-২১ সালের প্রতিবেদন বিশ্লেষন করে দেখা যায়, বিগত বছর এসময় ৭টি ফসলে জেলায় ২৯ হাজার ৫২৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করা হয়। অন্যদিকে, এবার তা বেড়ে হয়েছে ৩৩ হাজার ৮৫৫ হেক্টর। এর মধ্যে ৩০ হাজার ৭৫ হেক্টরে বোরো ধান আবাদ হয়েছে, যা বিগত বছরের তুলনায় প্রায় সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর বেশি। এছাড়াও বিগত বছরের তুলনায় এবার ৩৪০ হেক্টর সরিষা, ২৭ হেক্টর চিনাবাদাম, ২০ হেক্টর সূর্যমুখী, ২৮ হেক্টর মুগ, ৫০ হেক্টর ভুট্টা বেশি চাষাবাদ হয়েছে।

ফেনী সদর উপজেলার কাজীরবাগ ইউনিয়নের কৃষক আবদুল কুদ্দুস জানান, এবার এক বিঘা জমিতে সরিষা চাষাবাদের জন্য তিনি বিনামূল্যে সরকারি বীজ ও সার পেয়েছেন।
ফেনী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বিথী জানান, অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে প্রকৃত প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষকদের তালিকা তৈরি করে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক তোফায়েল আহমদ চৌধুরী জানান, কৃষকদের উৎপাদনে উৎসাহী করে উৎপাদন বাড়াতে বর্তমান সরকার ফেনীসহ সারা দেশে প্রণোদনার আওতায় বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণ করেছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০২১
এসএইচডি/এফএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।