মৌলভীবাজার: চারিদিকে থৈ-থৈ পানি। রাস্তার একপাশে পানি কানায় কানায় পূর্ণ।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার মতিগঞ্জ নামক স্থানে গোপলা নদীর ওপর নির্মিত রাবার ড্যাম প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে শত শত অনাবাদি জমি চাষের আওতায় চলে এসেছে। এ এলাকায় চলতি বোরো মৌসুমে রাবার ড্যামের পানি সরবরাহের ফলে শত শত হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হচ্ছে। জমিতে কৃষকরা নির্ধারিত ফি পরিশোধ করে প্রয়োজনীয় সেচ পানি সরবরাহ করতে পারায় চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে অগ্রসর হচ্ছেন। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পানি সংকট না থাকায় শুকনো মৌসুমে ধান উৎপাদন করে দ্বিগুণ লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। পানি সেচ জমিতে সময়মতো সরবরাহ করতে পারায় ধানক্ষেত সবুজে সবুজে ভরে গেছে।
জানা গেছে, আগে বোরো মৌসুমে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া আবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতে হতো স্থানীয় কৃষকদের। এক, দেড়শ’ বা দুটো ফুট গর্ত করে পাম্প মেশিনের সাহায্যে অনেক অর্থ ব্যয় করে জমিতে পানি দিতে হতো তাদের। কিন্তু রাবার ড্যাম নির্মিত হওয়া সেই দুশ্চিন্তা আর নেই তাদের।
স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্র জানায়, প্রতি বছর শুকনা মৌসুমে বোরো চাষের সময় প্রচুর পানির অভাব দেখা দেয়। এলাকার স্থানীয় কৃষকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পানি সেচের জন্য ২০১৩ সালে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে গোপলা নদীতে এ রাবার ড্যাম নির্মাণ করা হয়। এটি হাইল হাওরের অদূরে এবং শ্রীমঙ্গল সদর ইউনিয়ন, আশিদ্রোন ইউনিয়ন ও ভুনবীর ইউনিয়নের কৃষকরা চাষাবাদে পানির সুবিধা পেয়ে থাকেন।
স্থানীয় কৃষক জাবেদ মিয়া জানান, আমি রাবার ড্যামের সদস্য। আমার কৃষিক্ষেতে আগে ফসল খুবই কম হতো। এখন এই সমস্যা নেই। শুকনার সময়ও জমিতে পানি পাই। আগে পানির অভাবে হাইল হাওরের মাথায় চাষাবাদ হতো। এখন সরকারিভাবে এই রাবার ডেম্প হওয়ায় অনেক সফল উৎপন্ন হচ্ছে। মতিগঞ্জ, জিদাপুর, পূর্ব লইয়ারকুল, শ্রীমঙ্গলের উত্তরসুর, লালবাগ প্রভৃতি এলাকার কৃষকরা বেশি উপকৃত হচ্ছে। এ রাবার ড্যামের পরিচালক চুরুক মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, শ্রীমঙ্গল, ভুনবীর আর আশিদ্রোন এই তিন ইউনিয়ন মিলে মোট প্রায় পাঁচ হাজার কৃষক এই রাবার ড্যাম থেকে উপকৃত হচ্ছে। গোপলা নদীর ওপর প্রায় আট বছর আগে স্থাপন করা হয়েছে এই রাবার ড্যাম। এটি আশিদ্রোন ইউনিয়নে অবস্থিত।
তিনি আরো বলেন, এটি সদস্যদ্বারা পরিচালিত। আগে এর সদস্য ছিল ৯৩ জন। এবার এর মধ্যে শতকরা ৩০ জন দেয়, শতকরা ৭০ জন টাকা দেয় না। তবে কৃষকদের কাছ থেকে টাকাটা নিয়ে গেলে খুব বেশি অসুবিধা হয়, সবাই টাকা দিতে চায় না। এ সংখ্যা বাড়িয়ে হয়তো দুই-আড়াইশ’ সদস্য হবে। নতুন করে তালিকা তৈরি কাজ চলছে।
জানুয়ারির শুরুতে প্রথমে বাঁধ দিয়ে পানি আটকে দেওয়া হয়। এই আটকানো পানি কৃষকরা তাদের কৃষিজমিতে দিয়ে শুকনো মৌসুমে ধান চাষ করে। আবার মার্চ মাসে সেই বাঁধটি খুলে ফেলা হয়। বিলাস নদী থেকে পানি নিয়ে কৃষকরা চাষ করেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মহিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, যারা এই রাবার ড্যামের উপকারভোগী কৃষক হবেন তাদের আগে সদস্য হতে হবে। সদস্য ফি ৬০ টাকা। প্রতি বিঘা পানির জন্য নির্ধারিত ফি ১শ টাকা অথবা নির্ধারণ করা ধানের পরিমান দিতে হয়। রাবার ড্যাম থেকে সেচ সুবিধা নিতে কৃষকদের দিতে হচ্ছে না অতিরিক্ত কোনো খরচ। এতে আর্থিকভাবে সুবিধা পাচ্ছেন কৃষকরা।
মতিগঞ্জ রাবার ড্যামের ফলে শুকনো মৌসুমে পানির সুবিধা পেয়ে বোরো ধানসহ নানা কৃষিজাত পণ্য কৃষকরা চাষ করতে পারছেন বলে জানান এ কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২১
বিবিবি/এএটি