ফেনী: চলতি বছর ফেনীতে কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ৭২ হাজার। অপরদিকে লালন পালন করা হচ্ছে ৮০ হাজার ৮৬৫টি গবাদি পশু।
ফেনী জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আনিসুর রহমান জানান, আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে প্রায় ৭২ হাজার কোরবানির পশুর চাহিদার বিপরীতে ৮০ হাজার ৮৬৫টি গবাদি পশু প্রস্তুত করা হচ্ছে। ফলে ফেনীতে এবার কোরবানির পশু সংকট হবার কোনো সম্ভাবনা নেই। এছাড়াও ব্যক্তিগতভাবে অনেকে এক বা একাধিক কোরবানি পশু লালন পালন করছেন। এর সংখ্যাও প্রায় ২০ হাজারের বেশি।
জেলা প্রাণি সম্পদ অফিসের তথ্য মতে, ফেনী সদর উপজেলায় ২১ হাজার ৩২২, দাগনভূঞা আট হাজার ৮৩০, ছাগলনাইয়া ১৮ হাজার ৭২৫, সোনাগাজী ১৭ হাজার ৫০৫, ফুলগাজী পাঁচ হাজার ২০৬ এবং পরশুরাম আট হাজার ২২৭টি পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে।
পশুর যোগান বেশি থাকায় এবার ঈদ বাজার খামারি ও ক্রেতা উভয়ের অনুকূলে থাকবে বলে ধারণা করছেন জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা। তিনি জানান, সরকারি নির্দেশ মোতাবেক ভারত থেকে বৈধ বা অবৈধ উপায়ে গরু আমদানি বন্ধ রাখতে হবে। যদি আমদানি বন্ধ করা যায় তবে দেশীয় খামারিরা লাভবান হবেন। কৃষক ও খামারিরা যাতে কোরবানির পশুর ন্যায্য দাম পান সে জন্য সীমান্ত এলাকায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নজরদারি বাড়াতে হবে।
ফেনী সদরের কাজীরবাগের গিল্লাবাড়িয়ায় সিরাজ-মনি ডেইরি ফার্মে কোরবানির জন্য ১৪টি পশু লালন করছেন খামারি শরীফুল ইসলাম মাসুম। তার নতুন খামারে প্রথমবার কোরবানির জন্য ছয় মাস ধরে গরু লালন পালন করছেন তিনি। মাসুম জানান, বর্তমানে গরু লালন পালনে যে খরচ হচ্ছে, ঈদ বাজারে ভারতীয় গরু প্রবেশ করলে স্থানীয় খামারিরা বিপাকে পড়বে। যদি বাজারে বাইরে থেকে গরু না আসে তাহলে লাভের মুখ দেখবে স্থানীয়রা।
রাসেল পাটোয়ারী নামে এক খামারি জানান, আসন্ন কোরবানির জন্য ৩০টি গরু প্রস্তুত করছি। প্রতিটি গরু ১ লাখ বা তারও বেশি বিক্রি করা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। রাসেল জানান, করোনায় কর্মসংস্থান হারিয়ে অনেকে যুবক গবাদি পশু লালন-পালন মনোনিবেশ করেছেন। ছোট-বড় অনেক খামারি বাণিজ্যিক ও ব্যক্তিগতভাবে কোরবানির জন্য পশু লালন পালন করছেন।
নজরুল ইসলাম নামে অন্য এক খামারি জানান, গো-খাদ্যের দাম বেশি তাই লাভ কম হবে।
রাশেদ নামে এক ছাগল খামারি বলেন, কোরবানিতে ছাগলের চাহিদাও অনেক। এবার কোরবানির বাজার বিক্রির জন্য ১৫টি ছাগল প্রস্তুত করছি। প্রতিটি ছাগল ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা বিক্রি করা যাবে।
সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারতীয় গরু প্রবেশ বন্ধে নজরদারি বাড়িয়েছে বিজিবি’র ফেনী ব্যাটালিয়ন (৪ বিজিবি)। ফেনী ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্ণেল আবদুর রহিম জানান, কোরবানি ঈদকে কেন্দ্র করে সীমান্তে গরু চোরাচালান রোধে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বিজিবি সদস্যরা, বাড়ানো হয়েছে নজরদারি। অধিনায়ক জানান, ফেনীর ১০২ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকার মধ্যে দুই স্থানে ৫৭৯ ও ৩৩৪ মিটার সীমানা অরক্ষিত। বিজিবির তৎপরতায় এ দুই স্থান দিয়ে গরু চোরাচালান এখন বন্ধ। কোরবানি উপলক্ষ্যে সকল চোরাচালান রোধে বিজিবির সদস্যদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।
কোরবানি পশু লালন-পালনে নিয়মিত খামারিদের সহযোগিতা করছে প্রাণি সম্পদ অফিস। ফেনী সদর উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. নাজমুল হক জানান, কোরবানির পশুর চাহিদা মেটাতে প্রাণি সম্পদ দপ্তর থেকে নিয়মিত খামার পরিদর্শন, খামারিদের প্রশিক্ষণ, পরামর্শ ও যাবতীয় সহযোগিতা করা হয়ে থাকে। এছাড়া বিজ্ঞানভিত্তিক উপায়ে ৪/৫ মাসের মধ্যে কোরবানি পশু মোটাতাজা করার বিষয়ে খামারি ও কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। খামারিরা নিয়ম মেনে পরিকল্পনা মাফিক ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্য ও সংশ্লিষ্ট ঔষধ ব্যবহার করে পশুকে লালন পালন করছেন।
তিনি আরও জানান, ভারতীয় গরু আমদানি বন্ধ থাকায় ও করোনা পরিস্থিতিতে বেকারত্ব বেড়ে যাওয়ায় অনেকে গবাদি পশু লালন পালনে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে এবার খামারিরা আশানুরূপ দামে পশু বিক্রি করে লাভবান হতে পারবেন।
কোরবানিতে গরু-ছাগলের পাশাপাশি মহিষেরও উল্লেখযোগ্য চাহিদা রয়েছে। জেলার সবচেয়ে বেশি মহিষের খামার রয়েছে সোনাগাজী উপজেলায়। সোনাগাজী উপজেলার মহিষ খামারি আনোয়ার হোসেন টিপু জানান, এবার কোরবানি ঈদে বিক্রির জন্য ২০টির বেশি মহিষ প্রস্তুত করছি। প্রতিটি মহিষ গড়ে ৭০ থেকে ৮০ হাজার বিক্রি করতে পারবেন বলে ধারণা করছেন তিনি।
কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে এ অঞ্চলে মহিষের সংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণ হারে। বর্তমানে আমাদের খামারে ছয় শতাধিক মহিষ রয়েছে। কোরবানি ছাড়াও সারাবছরই মহিষের মাংসের চাহিদা থাকে বলে জানান তিনি।
সোনাগাজী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কল্লোল বড়ুয়া জানান, এ উপজেলায় গবাদিপশু চারণ ভূমির পরিমাণ বেশি হওয়ায় গরু-ছাগল ছাড়াও বাণিজ্যিকভাবে মহিষের লালন-পালন হয়ে থাকে। মহিষ উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে কৃত্রিম প্রজনন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বংশ বিস্তারে সফলতা এসেছে। আসন্ন কোরবানির পশুর বড় একটি চাহিদা মেটাতে পারে মহিষ।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৪০ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০২১
এসএইচডি/কেএআর