ঢাকা, বুধবার, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

রাবানের সুস্বাদু আনারসের খ্যাতি দেশজুড়ে

সুজন বর্মণ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৬ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০২১
রাবানের সুস্বাদু আনারসের খ্যাতি দেশজুড়ে রাবানের আনারস। ছবি: বাংলানিউজ

নরসিংদী: নরসিংদীর পলাশ উপজেলার রাবানের সুস্বাদু ঘোড়াশাল জাতের আনারস খ্যাতি অর্জন করেছে দেশজুড়ে। দেশের অনেক জায়গায় আনারসের চাষ হলেও সারাদেশে রাবানের আনারসের স্বাদ ও গুনগত মানের কারণে আলাদা খ্যাতি রয়েছে।

আর রাবানের ফল মানেই রসে টসটস। আর আনারসের স্বাদ অমৃত। যা খেলে জিহবায় লেগেই থাকে। সেই সুবাদে রাবানের সুস্বাদু আনারসের দাম ও চাহিদা দুটিই বেশ চড়া।



কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, রাবানের মাটির ধরন, পরিবেশ এবং ফল গাছে প্রয়োগকৃত জৈব সারের বৈশিষ্ট্যের কারণেই এখানকার আনারসের স্বাদ বেশি হয়ে থাকে। শত শত বছর ধরে এই গ্রামে চাষকৃত আনারস মূলত হানিকুইন নামের একটি জাত থেকে সৃষ্টি হয়েছে। একে ঘোড়াশাল জাতের আনারস বলা হয়ে থাকে। তবে জাতের চেয়েও এখানকার মাটির গুণই বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। একটু উঁচু জমিতে আনারসের চাষ করা হয়। এলাকাটি একটু উঁচু হওয়ায় অতিবৃষ্টি কিংবা বন্যা পৌঁছতে পারে না।  

পলাশ উপজেলার জিনারদী ইউনিয়নের রাবান, বরাব, সাতটেকিয়া, বিলপাড়, ভালুকাপাড়া, ছয়দড়িয়া, বাঘাব, কুড়াইতলীসহ আরো কয়েকটি গ্রামে আনারসের চাষ হয়ে থাকে। অধিকাংশ বাগানে আনারসের চাষ হয় সনাতন পদ্ধতিতে। চলতি বছর রাবানে ১৪৫ হেক্টর জমিতে আনারস চাষ করা হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ১১ টন আনারসের ফলন হয়েছে। রাবানে চলতি বছর ১৫৯৫ মেট্রিক টন আনারসের ফলন হয়েছে। তবে এবার অনাবৃষ্টির কারণে গত বছরের তুলনায় আনারসের ফলন কম হয়েছে। সময়মতো বাগানে পানি না দেওয়ায় আনারসের আকারও ছোট হয়ে গেছে। যার কারণে বাজারে আনারসের দাম কম পাওয়া গেছে।

ভালুকাপাড়ার আনারস চাষি অনিল বসু বলেন, এ বছর এক বিঘা জমিতে আনারসের বাগান করেছি। গত বছরের তুলনায় এ বছর অনাবৃষ্টির কারণে বাগানে পানির অভাবে তেমন ভালো ফলন আসেনি। তবে বাজারে রাবানের আনারসের ব্যাপক চাহিদা থাকায় তেমন কোনো ক্ষতির মুখে পড়িনি।

ভালুকাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সনজয় পাল বলেন, মাটির গুনগত বৈশিষ্টের কারণে এখানকার আনারস খুব সুস্বাদু হয়। অন্যান্য জাতের আনারসে আঁশ থাকলে ও ঘোড়াশাল জাতের আনারসে কোনো আঁশ থাকে না। এটি খুব রসালো হয়। যার কারণে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আনারস কিনতে রাবানে আসে।

কুড়াইতলী গ্রামের আনারস চাষি খোকন চন্দ্র পাল বলেন, আনারস চাষে তেমন শ্রম দিতে হয় না। খরচের তুলনায় লাভ বেশি পাওয়া যায়। প্রতি পিস আনারস ২৫ থেকে ৩০ টাকায় জমি থেকেই কিনে নিয়ে যান পাইকারি ব্যবসায়ীরা।

রাবান বাজারের আনারস বিক্রেতা সুধন দাস বলেন, এবার বাজারে চাহিদার তুলনায় আনারস খুব কম। যার কারণে আনারসের দামও বেশি। আনারসের জোড়া আমরা ৬০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি করছি।

আরেক আনারস বিক্রেতা কমল সেন বলেন, রাবানের আনারস সুস্বাদু হওয়ার কারণে দূর-দূরান্তের পাইকারা এসে আমাদের কাছ থেকে আনারস কিনে নিয়ে যায়। তাছাড়া বিভিন্ন এলাকার লোকজনও আনারসের জন্য রাবানে আসে। এবার খরার কারণে আনারসের ফলন কম হওয়ায় বাজারে আনারসের দাম আগের তুলনায় বেশি।

পলাশ কৃষি অফিসের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শিখা রায় বাংলানিউজকে বলেন, আনারস চাষে শ্রম কম ও লাভ বেশি হওয়ায় রাবানের প্রতিটি বাড়িতেই আনারস চাষ করা হয়। আমরা আনারস চাষিদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে থাকি। আনারসের ফলন যাতে বৃদ্ধি পায় সেজন্য কৃষকদের সময়মত সুষম সার, খরায় পানির সেচ ও বাগান পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে পরামর্শ দেওয়া হয়। এবার খরায় আনারস বাগান পানি না পাওয়ায় আনারসের আকার কিছুটা ছোট হয়ে গিয়েছে। তারপরও রাবানের আনারসের খ্যাতির কারণে কৃষকরা ভালো দামই পাচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর নরসিংদীর উপ-পরিচালক শোভন কুমার ধর বাংলানিউজকে বলেন, জেলায় ২৪৬ হেক্টর জমিতে ঘোড়াশাল ও ক্যালেন্ডার জাতের আনারস চাষ করা হয়। এরমধ্যে ২৩৬ হেক্টর জমিতেই ঘোড়াশাল জাতের আনারস চাষ হয়। তবে পলাশের রাবান এলাকার আনারস মাটির ধরণ ও পরিবেশের কারণে বেশি সুস্বাদু হয়ে থাকে, যার কারণে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় এর চাহিদা রয়েছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে আনারসের চাষ বৃদ্ধিতে চাষিদের প্রযুক্তিগত সহযোগিতা ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আর আনারসের জাত উন্নয়ন, স্বাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে কাজ করছে কৃষিবিভাগ।

বাংলাদেশ সময়: ১০৩০ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০২১
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।