ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

গরু পুষে ‘সফলতার স্বপ্নে’ করোনার বাধা

ইমতিয়াজ আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেণ্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৮ ঘণ্টা, জুলাই ৬, ২০২১
গরু পুষে ‘সফলতার স্বপ্নে’ করোনার বাধা

মাদারীপুর: পাঁচ বছর আগে গরু পালন করে স্বচ্ছলতার স্বপ্ন লালন করে ছোট্ট পরিসরে গড়ে তোলেন দুগ্ধজাত গরুর খামার। নিজের বাড়ির উঠানেই প্রথমে একটি শেড নির্মাণ করে মাত্র তিনটি দুগ্ধজাত গাভী নিয়ে যাত্রা শুরু হয়।

এরপর গাভী কেনেন আরো কয়েকটি। কিন্তু লাভের অংক তখনও ছিল শূন্য। দুধ বিক্রি করে গাভীর খাবার খরচসহ আনুষঙ্গিক খরচ চালিয়েও হিমশিম খেতে থাকেন।  

এক টানা তিন বছর লোকসানের ঘানি টেনে সিদ্ধান্ত পাল্টে কোরবানির জন্য গরু পালন শুরু করেন। তৈরি করেন আরো দু’টি শেড। শুরু করেন ষাঁড় গরু পালন।

২০২০ সালের কোরবানিতে সেই গরু বিক্রি করে লাভের মুখ দেখেন মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার দত্তপাড়া ইউনিয়নের খাড়াকান্দি গ্রামের তরুণ উদ্যোক্তা ফররুখ হাওলাদার। পেছনের তিন বছরের লোকসান মুছে যায়। দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে চলতি বছরের জন্য পালন করা শুরু করেন আরো গরু। কিন্তু চলতি বছরের করোনার ভয়াবহতায় গরু নিয়ে বিপাকে পরেছেন তিনি। ১১টি ষাঁড় গরুসহ তার খামারে বর্তমানে রয়েছে ১৭টি গরু। ষাঁড় গরুগুলো চলতি বছরের কোরবানির জন্য প্রস্তুত করেছেন তিনি। কিন্তু এ বছর দেশের অন্যান্য স্থানের মতো মাদারীপুরে করোনা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক থাকায় গরু বিক্রি নিয়ে চিন্তিত তিনিসহ অনেক ছোট্ট পরিসরে গড়ে তোলা খামারিরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার দত্তপাড়া, শিরুয়াইল, বহেরাতলা, নিলখী, কাঁঠালবাড়ী, কুতুবপরসহ বিভিন্ন এলাকায় ছোট্ট পরিসরে রয়েছে অসংখ্য গরুর খামার। যেখানে কোরবানিকে সামনে রেখে গরু পালন করা হয়। এছাড়াও অনেক কৃষক কোরবানির জন্য বাড়িতেই দুই/তিনটি করে গরু পালন করেন। করোনার চলমান লকডাউন আগামী ১৪ জুলাই পর্যন্ত বৃদ্ধি করা এবং গরুর হাট না মেলার শঙ্কা রয়েছে, বিধায় এসব তরুণ খামারি ও স্থানীয় কৃষকেরা উদ্বিগ্ন রয়েছেন বলে জানা গেছে।

দত্তপাড়ার খাড়াকান্দি গ্রামের হাওলাদার অ্যাগ্রো ফার্মের মালিক তরুণ উদ্যোক্ত ফররুখ হাওলাদার বলেন, খামার দিয়ে শুরু থেকে পর পর তিন বছর লোকসান হয়েছে। কিন্তু আমি লেগে ছিলাম। হাল ছাড়িনি। পরে দুগ্ধজাত গরুর পাশাপাশি গরু মোটাতাজাকরণ শুরু করি। গত বছর কোরবানিতে ঢাকা নিয়েছিলাম গরুগুলো। বিক্রি করে বেশ ভালো লাভের মুখ দেখেছি। নতুন করে গরু পালনের স্বপ্ন মজবুত হয়। আবার গরু কিনে মোটাতাজাকরণ শুরু করি চলতি বছরের জন্য। কিন্তু এ বছর করোনায় কোরবানির হাট মিলবে না বলে শুনছি। গরুগুলো নিয়ে চিন্তায় আছি।

জানা গেছে, চলতি বছরের কোরবানির জন্য ১১টি ষাঁড় গরু রয়েছে। এর মধ্যে খামারে থাকা গাভীর বাচ্চা রয়েছে দু’টি, বাকি নয়টি কেনা গরু। গত বছর কোরবানির পরপরই নয়টি ষাঁড় কিনেছিলেন। প্রায় এক বছর লালনপালন শেষে চলতি কোরবানিতে বিক্রি করবেন তিনি। প্রতিটি গরুতে নয়/১০ মণ করে মাংস হবে বলে ধারণা করছেন। গরু লালনপালনে গড়ে মাসে কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা খরচ হয় তার।

তিনি বলেন, আমার ফার্মের ষাঁড় গরু সম্পূর্ণ দেশীয় খাবার খাইয়ে বড় করা। মোটাতাজাকরণের জন্য কোনো প্রকার ওষুধ প্রয়োগ করা হয় না। গরুগুলো আকারে বেশ বড় হওয়ায় রাজধানীসহ বড় বড় গরুর হাটে বিক্রি করা সহজ হয়। গ্রামের হাটে বড় গরু কম বিক্রি হয়। তাছাড়া পাইকাররাও গ্রাম থেকে গরু কিনে রাজধানীতে নেবে কিনা তারও ঠিক নেই। পরিচিত অনেকই ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না। গরুর হাট না মিললে চরম বিপাকেই পড়তে হবে গরু নিয়ে।

তিনি আরও বলেন, এরই মধ্যে ফেসবুকে প্রচার শুরু করেছি। এখন অনলাইনের যুগ। হাট না মিললে যে কেউ আমার বাড়িতে এসেও গরু কিনতে পারবেন। তাই ফেসবুকে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০২ ঘণ্টা, জুলাই ৬, ২০২১
এসআই
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।