ভোলা: মাত্র ২০ হাজার টাকা খরচ করে জ্বালানি খচরবিহীন সেচযন্ত্র উদ্ভাবন করেছেন ভোলার লালমোহনের প্রত্যন্ত এলাকার কৃষক মো. অলিউল্লাহ। পানির স্রোতকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ ও তেল খরচবিহীন এ অভিনব সেচ যন্ত্রের উদ্ভাবন করে এখন আলোচনার কেন্দ্র বিন্দু তিনি।
কিছুদিন আগে লালমোহন ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড মুন্সির হাওলা গ্রামের ওই কৃষক স্থানীয় খালে সেচ যন্ত্রটি বসিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে পানি উত্তোলন শুরু করেন। ইতোমধ্যে তার এ অভিনব উদ্ভাবন স্থানীয় কৃষকসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেচ যন্ত্রটিতে আটটি পাখা লাগানো রয়েছে। যা পানির স্রোতের সাহায্যে অনবরত ঘোরে। প্রতিটি পাখার উপরে ইউপিবিসি ক্লাস ডি পাইপ লাগানো হয়েছে এবং ওইসব পাইপের ভিতরে কয়েল পাইপ লাগিয়ে তা একটি কন্টেইনারে সন্নিবেশিত করা হয়েছে। এতে করে জোয়ারের প্রভাবে যখন পাখাগুলো ঘুরতে থাকে, তখন ইফপিবিসি ক্লাস ডি পাইপগুলো পানি ভর্তি হয়ে কয়েল পাইপের মাধ্যমে কন্টেইনারে ভর্তি হয়। আর কন্টেইনার থেকে আরেকটি পাইপের সাহায্যে জমিতে অনবরত পানি নির্গত হতে থাকে।
যন্ত্রটিকে প্রাথমিক পর্যায়ে জোয়ারের স্রোত নির্ভর করে তৈরি করা হয়েছে, তবে এটিকে আরও আধুনিকায়ন করা হলে জোয়ার-ভাটা উভয় সময়েই পানি উত্তোলন করা যাবে এবং কৃষকদের সেচকাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন কৃষক অলিউল্লাহর।
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, বৈদ্যুতিক মোটর বা ইঞ্জিনের সাহায্যে জমিতে সেচ দিতাম। তাতে ব্যাপক পরিমাণ খরচ লাগে, তবে এটা দেখে মনে হচ্ছে খরচ অনেকটাই কমে যাবে। তার এমন উদ্ভাবন সকল কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করবে।
কৃষক অলিউল্লাহ বলেন, বিদ্যুত ও ইঞ্জিনের সাহায্যে সেচ ব্যবহার করে প্রতি ৮ শতাংশ জমিতে চাষাবাদে কৃষকদের প্রায় সাড়ে ৬০০ টাকা খরচ বহন করতে হয়। তবে স্রোতের সাহায্যে চলা এ সেচযন্ত্র ব্যবহারে ৮ শতাংশ জমিতে খরচ পড়বে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা। বিদ্যুত খরচ, তেল-মবিল খরচ, মেকানিক বা পরিচালনার জন্য কোনো লোকের খরচ বহন করা লাগবেনা।
তার দাবি, এ সেচ যন্ত্রটি পরিবেশবান্ধব। এতে ইঞ্জিন বা বৈদ্যুতিক মোটরের মতো কোনও শব্দ নেই। খালে পানির স্রোত যতো বাড়বে, এ সেচযন্ত্রের মাধ্যমে পানিও তত বেশি উত্তোলন হবে। জোয়ার-ভাটা উভয়কালেই পানি উত্তোলন করা যাবে, পানি উত্তোলন হবে রাতদিন ২৪ ঘণ্টা। সেচযন্ত্রটি আরও আধুনিকায়ন করতে সরকারি বে-সরকারি অনুদানের দাবি জানিয়েছেন কৃষক অলিউল্লাহ।
লালমোহন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এএফএম শাহাবুদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, অলিউল্লাহ নামে এক কৃষক পানির প্রবাহকে কাজে লাগিয়ে একটি সেচযন্ত্র উদ্ভাবন করেছেন। সেচযন্ত্রটি সরেজমিনে পরিদর্শন করে এর কার্যকারিতা ও সম্ভাবতা যাচাইয়ের জন্য জেলা উপ-পরিচালক ও কৃষি প্রকৌশলীকে অবহিত করা হয়েছে। যাচাইয়ের পরে সেচযন্ত্রটি কার্যকর হলে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় সেটাকে বাণিজ্যিক আকারে তৈরিতে সহযোগিতা দেওয়ার করবো।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৮, ২০২১
এনটি