ফেনী: আগ্রহায়ণ শেষের দিকে, আসছে পৌষ। এ সময় শীত জেঁকে বসার কথা কিন্তু হচ্ছে বর্ষার বৃষ্টি।
গত কয়েকদিনের দিনের ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে ফেনীতে এক হাজারেরও বেশি কৃষকের আমন ধানসহ বিভিন্ন শীতকালীন ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে করে নিরাশায় পরিণত হয়েছে কৃষকদের প্রত্যাশা। গত ৫ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া ভারী বর্ষণের ফলে জেলার ৩০৫ হেক্টর আমন ধান ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ফেনীর উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় কান্তি সেন জানান, অসময়ের এ বৃষ্টির ফলে অনেক কৃষক তার উৎপাদিত ফসল উৎপাদন করেও ঘরে তুলতে পারেনি। এ বৃষ্টির ফলে কৃষিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে জেলায় ৩০৫ হেক্টর আমন, ৭১৫ হেক্টর শীতকালীন সবজি, ৩ হেক্টর মাসকলাই, ৮০ হেক্টর ধনিয়া, ১২৫ হেক্টর খেসারী, ৮১ হেক্টর মরিচ, ২২৩ হেক্টর শসা, ৩৬৭ হেক্টর সরিষা, ৬ হেক্টর মসুর, ১ হেক্টর আলু, ৬ হেক্টর ভুট্টা এবং ৫৬ হেক্টর বোরো ধানের বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সঞ্জয় কান্তি সেন বলেন, বৃষ্টি বন্ধ হলে জমির পানি শুকিয়ে যাওয়ার পর এ সাপ্তাহের মধ্যে চূড়ান্ত ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করা যাবে। বর্তমানে আমরা প্রাথমিকভাবে একটি খসড়া হিসাব প্রস্তুত করেছি। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে খেতের ফসলের ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
পরশুরাম উপজেলার মির্জানগর গ্রামের কৃষক মো. ইউনুছ বলেন, আমনে ভালো ফলন হলেও ফসল কাটার পর বৃষ্টির জন্য বাড়ি আনতে পারিনি। চলমান অবস্থার উন্নতি না হলে বড় ধরনের লোকসান হওয়ার শঙ্কায়র কথা বলেন তিনি।
একই এলাকার কৃষক শাহ আলম বলেন, ২ কানি জমিতে আমন চাষ করেছিলাম। বৃষ্টির জন্য ফসল এখন বাড়ির উঠানেই নষ্ট হচ্ছে।
ছাগলনাইয়া উপজেলার ঘোপাল ইউনিয়নের নিজকুঞ্জরা গ্রামের অহিদুন নবী চৌধুরী বলেন, গ্রামের পশ্চিম পাড়া অংশে প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ শতক জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেকে বৃষ্টির আগে ধান কেটে জমিতে রেখেছিল। তা এখন বৃষ্টির পানিতে ডুবে আছে। এতে করে ফসল যেমন নষ্ট হয়েছে পাশাপাশি খড়গুলো নষ্ট হচ্ছে। কিছু জমির ধান এনে বাড়িতে রাখলেও বৃষ্টির কারণে তাও নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
সোনাগাজী উপজেলার বাহার উদ্দিন নামে আরেক কৃষক বলেন, গত কয়দিনের বৃষ্টির পানিতে ডুবে কিছু সবজির গোড়া পঁচা শুরু হয়েছে। এছাড়া খেসারীতে বেশ ক্ষতি হয়েছে।
মো. আবু তাহের নামে এক কৃষক বলেন, তিনি ৪০ শতক জমিতে মরিচ, বেগুনসহ বিভিন্ন সবজির চাষ করেছেন। এখন বৃষ্টির যে অবস্থা, তাতে তিনি মনে করছেন তার খরচও উঠবে না।
পরশুরাম উপজেলার উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা পিন্টু কুমার দাস বলেন, উপজেলায় আবাদ করা আমনের প্রায় ৯০ শতাংশ ইতোমধ্যে কর্তন করা হয়েছে। আমনে ক্ষতির পরিমাণ কম হলেও শীতকালীন বিভিন্ন ফসল অতিবৃষ্টিতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, উপজেলায় আবাদকৃত ৩৫০ হেক্টর শীতকালীন সবজির মধ্যে ৫০ হেক্টর, ৫০ হেক্টর সরিষার মধ্যে ৪০ হেক্টর এবং আবাদকৃত ২০ হেক্টর মরিচের পুরো অংশই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার জানান, ভারী বৃষ্টিপাতে উপজেলার ৫০ হেক্টর আমন, ৯৫ হেক্টর সরিষা, ৩০ হেক্টর মসুর, ৮০ হেক্টর শীতকালীন সবজি, ৫০ হেক্টর মরিচ, ৮০ হেক্টর ক্ষিরা এবং ২০ হেক্টর ধনিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সোনাগাজী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন বলেন, চূড়ান্ত ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে। প্রাথমিকভাবে উপজেলায় আবাদকৃত ৫৫ হেক্টর আমন, ১২০ হেক্টর খেসারী এবং ২৫ হেক্টর শীতকালীন সবজিসহ অন্যান্য ফসলাদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক তারিক মাহমুদুল ইসলাম বলেন, কৃষকরা যাতে ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারেন এ জন্য জেলা কৃষি বিভাগ সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। ইতোমধ্যে বৃষ্টি কমতে শুরু করেছে। এভাবে দুয়েকদিন স্থায়ী হলে খুব বেশি সমস্যা হবে না।
এছাড়া গত কয়দিনের ভারি বৃষ্টিপাতে সরিষা এবং খেসারী বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্য ফসলগুলোতে এর তেমন প্রভাব পড়বে না। কারিগরি ও প্রযুক্তিগত সহায়তার মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সমস্যা সমাধানে মাঠপর্যায়ে কৃষি বিভাগ কাজ করছে বলে জানান তিনি। কৃষকরা বলছেন চলতি মৌসুমে আমনের ভাল ফলন হয়েছিল। শীতের সবজিও ভাল হয়েছিল কিন্তু শেষ পর্যায়ে বৃষ্টি তাদের ক্ষতি করে দিয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৯, ২০২১
এসএইচডি/কেএআর