হবিগঞ্জ: হবিগঞ্জ জেলায় প্রথমবারের মতো উৎপাদন হচ্ছে ‘সুপার শস্য’ চিয়া। মানবদেহের অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাটি এসিড ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ এই শস্যটি চাষ করা হয়েছে জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার দীঘলবাক ইউনিয়নের দুর্গাপুর হাওরে।
চিয়া প্রধানত মেক্সিকো, দক্ষিণ আমেরিকায় ও কানাডায় জন্মায়, বাংলাদেশে তেমনভাবে এর প্রচলন না হলেও হবিগঞ্জে চিয়া চাষের উপযোগী মাটি থাকায় এখানে উচ্চমূল্যের এই শস্য উৎপাদনে অপার সম্ভাবনা রয়েছে। উৎপাদন ব্যয় কম হওয়ায় এতে ধানের তুলনায় জমিতে কয়েকগুণ বেশি মুনাফা হওয়া সম্ভাবনা দেখছে কৃষি বিভাগ।
নবীগঞ্জের দুর্গাপুর হাওরে ইংল্যান্ড প্রবাসী সোহেল চৌধুরীর ৫ বিঘা জমিতে চিয়া চাষ করেছেন সেলিম আল মামুন নামে এক ব্যক্তি। কুশিয়ারা নদীর বেল্টে এই জমিটির অবস্থান। তবে, জেলাজুড়েই এ শস্যের আবাদ ও উৎপাদনের সম্ভাবনা লক্ষ্য করা গেছে।
সেলিম আল মামুন জানিয়েছেন, প্রতি বিঘা জমি আবাদে তার ব্যয় হয়েছে ১২ হাজার টাকা। আশা করছেন বিঘাপ্রতি ৭০ থেকে ৮০ কেজি শস্য উৎপাদন হবে। প্রতি কেজি চিয়ার বাজার মূল্য ১ হাজার ২০০ টাকা। এতে বিঘাপ্রতি তার আয় হবে কমপক্ষে ৮৪ হাজার টাকা। যা ধান চাষের তুলনায় অনেক বেশি।
দীঘলবাক ইউনিয়ন ব্লকে দায়িত্বরত উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মঞ্জুরুল হক বাংলানিউজকে জানান, চিয়া চাষে জৈবসার বেশি ও রাসায়নিক সার কম প্রয়োজন হয়। ২/৩ বার সেচ দিতে পারলেই ভালো ফলন পাওয়া যায়। সবচেয়ে সুবিধাজনক বিষয়টি হল চিয়ার চারা কোন প্রাণী খায় না। এতে আবাদী ফসল নষ্টের আশঙ্কাও কম। উপজেলা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষককে সব ধরনের সহায়তা করা হচ্ছে।
নবীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা একেএম মাকসুদুল আলম বাংলানিউজকে জানান, প্রধানত চিয়ার আবাদস্থল দক্ষিণ আমেরিকা, মেক্সিকো ও কানাডায়। বাংলাদেশে পরীক্ষামূলক আবাদ হয়েছিল যশোর, ঝিনাইদহ ও দিনাজপুর জেলায়। এ শস্য চাষে দো-আশ মাটি প্রয়োজন। হবিগঞ্জ জেলাজুড়ে দো-আশ মাটি বেশি হওয়ায় এ শস্য চাষের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। এবারই প্রথম এ জেলায় চিয়া চাষ হয়েছে।
তিনি আরও জানান, মানবদেহের একটি অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাটি এসিড ওমেগা-৩। এটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। সামুদ্রিক বিভিন্ন মাছের চর্বি বা তেলে এ উপাদান থাকে। তবে সামুদ্রিক মাছ সহজলভ্য না হওয়ায় সবাই সেই চাহিদা পূরণ করতে পারেন না। তুলসি পরিবারভুক্ত চিয়া শস্যের শতকরা ৩৪ শতাংশ লিপিডের ৬৭ শতাংশ হলো ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড। এই শস্যের উৎপাদন বাড়াতে পারলে দেশের মানুষ ওমেগা-৩ এর চাহিদা মেটাতে পারবেন। হবিগঞ্জে এ শস্যের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য আমরা চেষ্টা করছি।
একেএম মাকসুদুল আলম বলেন, চিয়া মিন্ট প্রজাতির উদ্ভিদ। ওমেগা-৩ ছাড়াও এতে থাকা প্রচুর পরিমাণে উদ্ভিজ্জ আমিষ, চর্বি ও আঁশ আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে প্রয়োজন। শুকনো অবস্থাতেই চিয়া খাওয়া যায়। দই, পুডিং, লাড্ডু, বিস্কুটসহ বিভিন্ন খাবারে এটি যোগ করা যেতে পারে।
দ্রুত চিয়া চাষ সম্প্রসারিত হবে ও পুষ্টি নিরাপত্তায় বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যাবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২২
এএটি