ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

মৌলভীবাজারে বোরো ধানের নীরব বিপ্লব

ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২২
মৌলভীবাজারে বোরো ধানের নীরব বিপ্লব ধান রোপণের পর জমি পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক। ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজারে মাঠে মাঠে নীরব বিপ্লব ঘটছে বোরো ধানের। স্থানীয় কৃষকদের ব্যাপক আগ্রহ বাড়ছে বোরো ধানে।

বৃদ্ধি পেয়েছে আশানুরূপ আবাদ। সেই সঙ্গে কৃষকরা দাবিও জানাচ্ছেন ধানের ন্যায্য মূল্য ও কৃষি যন্ত্রাংশ সুলভে ব্যবহারের।

মৌলভীবাজারে গেল বছর জুড়ে ধানের ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় চলতি মৌসুমে ব্যাপকভাবে বোরো আবাদে নেমেছেন কৃষকরা। বোরো চাষাবাদকে ঘিরে মাঠে মাঠে চলছে চারা রোপণের শেষ পর্যায়ের কাজ। কৃষি বিভাগ বলছে এ বছর বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। পাশাপাশি স্থানীয় কৃষকরা দাবি করছেন ধানের ন্যায্য মূল্যের।

সম্প্রতি মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আজমেরু এলাকায় জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ কাজী লুৎফুল বারী রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে চারা রোপণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।

স্থানীয় কৃষক সৈয়দ উমেদ আলী শাহীন জানান, গত বছর ৪০ বিঘা জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেন। ভালো ফলন ও ধানের দাম পাওয়ায় চলতি বোরো মৌসুমে ৮০ বিঘা (কেয়ার) জমিতে ব্রি-ধান ৮৯, ৯২ ও হাইব্রিড জাতের ধানীগোল্ড, সিনজেন্টার ১২০৩ ধান চাষ করেছেন। রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে প্রায় ৪৫ বিঘা জমিতে পরীক্ষামূলক ভাবে ২০-৩০ দিনের চারা রোপণ করছেন। এতে করে শ্রমিক কম লাগায় উৎপাদন খরচ কমে যাবে। অবশিষ্ট জমিতে পূর্বের পদ্ধতিতে হাতে চারা রোপণ করছেন।

কৃষক সেফুল আহমদ জানান, গত বছর ১০ বিঘা জমি চাষ করেছেন। ফলনও ভালো হয়েছে। সরকারি গুদামে ১০ হাজার ৮০ টাকা মূল্যে কিছু ধান দিয়েছেন। এ বছর ১১ বিঘা জমিতে ব্রি-২৯ জাতের চারা লাগাচ্ছেন। বর্তমানে ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে, সেচ দিতে তাদের খরচ বেশি লাগছে। কৃষক রক্ষা করতে হলে ধানের মূল্য নূন্যতম ১২শ টাকা হওয়া দরকার।

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, জেলায় গেল আমন চাষাবাদ হয়েছে ১ লাখ ১ হাজার ৪২৫ হেক্টর জমিতে। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৮৪ হাজার মেট্রিক টন চাল। ২০২১-২২ অর্থবছরের সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের উন্নয়ন সহায়তার (ভর্তুকি) মাধ্যমে জেলায় বরাদ্দ আসে ১৫টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে ৫০টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার জেলায় রয়েছে, নতুনভাবে দেওয়া হয়েছে ৩টি রাইস ট্রান্সপ্লাটার। এছাড়া জেলায় রয়েছে ১৯টি রিপার, ১৫টি ধান মারাই যন্ত্র ও ১টি ভুট্টা মারাই যন্ত্র।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কাজী লুৎফুল বারী জানান, মৌলভীবাজার জেলায় এ বছর ৫৬ হাজার ৮শত হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে ৩৭৭ হেক্টর বেশি ৯০ ভাগ চারা রোপণ কাজ শেষ হয়েছে। তিনি আশা করছেন এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আবাদ হবে। কৃষকেরা ধানের দাম ভালো পাওয়ায় নতুন করে জমি চাষাবাদের আওতায় আসছে। ৩৫ হাজার ক্ষুদ্র কৃষককে বিনামূল্যে বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। সেচের সুবিধাগুলো আমরা সক্রিয় করেছি। কয়েকবার বৃষ্টিও হয়েছে, সে কারণে কৃষকরা অত্যন্ত আগ্রহ নিয়ে নতুন জায়গায় চাষাবাদ করছেন।

তিনি আরো বলেন, যেহেতু এ অঞ্চলে শ্রমিকের সংকট রয়েছে, সে কারণে কৃষি বিভাগ ভর্তুকি মূল্যে রাইসট্রাসপ্লান্টার অর্থাৎ যন্ত্রের সাহায্যে চারা রোপণের যন্ত্র ভর্তুকি মূল্যে দেওয়া হয়েছে। উৎপাদন খরচ কমাতে অনেক স্থানে রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে চারা রোপণের কাজ চলছে। যেখানে ১ বিঘা জমিতে হাতে চারা লাগাতে লাগে ২ হাজার টাকা। সেখানে ১ বিঘা জমি মাত্র ৫০০ টাকা খরচে চারা লাগানো যায়। সময় সাশ্রয় হয় এবং উৎপাদন খরচ অনেকটা কমে যায়।

এ পদ্ধতিতে চারা রোপণ করলে কৃষকরা লাভবান হবেন। জেলায় বিগত কয়েক বছর থেকে ধানের ফলন ভালো হওয়ার পাশাপাশি কৃষকরা দামও ভালো পাচ্ছেন। যে কারণে বোরো আবাদের জমির পরিমাণ প্রতি বছর বাড়ছে বলে জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২২
বিবিবি/কেএআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।