দিনাজপুর: হালকা গোলাপী, লাল কিংবা কালো। টসটসে গুচ্ছফল পেকে আছে গাছে।
ফলটি গ্রামবাংলার চিরপরিচিত তুঁত ফল। লোভনীয় এই তুঁত ফল গ্রামের মানুষের কাছে অনেকটা পরিচিত এবং পছন্দেরও বটে। হালকা টক ও হালকা মিষ্টি স্বাদের এই ফল দেখতে যেমন আকর্ষণীয় তেমনি উপকারীও বটে।
তুঁত গাছ মূলত রোপণ করা হয় রেশমের জন্য। পরিপক্ব গাছে ফল ধরলেও সেটির বাজার বা অর্থনৈতিক কোনো গুরুত্ব নেই। কৃষি বিভাগের বিশেষজ্ঞদের মতে এই ফল নেই খাদ্য শস্যের তালিকায়ও। তবে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকদের মতে, এই তুঁত ফলের রয়েছে নানান গুণ। বাত-ব্যথা, পিত্তনাশক, বলকারক, দৃষ্টি ও শ্রবণ বৃদ্ধিকারক হিসেবে এর ব্যবহার ব্যাপক। পাশাপাশি মুখ ও গলার ঘাঁ, অজীর্ণ, জ্বর ও কৃমিনাশক হিসেবে তুঁত ফল ব্যবহার হয়ে থাকে।
একটি সময় ছিল ১৯৮০ সালের পরে কোনো ধরনের বেসরকারি সংস্থা গড়ে তুলতে হলে সর্বপ্রথম শর্ত ছিল তুঁত গাছ রোপণ করতে হবে। মূলত রেশমকে প্রাধান্য দিতেই তৎকালীন সরকারের এই পদক্ষেপ ছিল। এই নিয়মটি ছিল বিংশ শতাব্দি পর্যন্ত। কিন্তু এখন এই শর্ত নেই, তাই গ্রামের রাস্তাঘাটে এই গাছ আর তেমন একটা চোখে পড়ে না।
দিনাজপুর শহরের পাশেই মাহুতপাড়া এলাকায় রয়েছে তুঁত গাছের বিশাল বাগান। এটিই দিনাজপুরের মধ্যে সর্ববৃহৎ তুঁত বাগান। সোমবার সকালে ওই বাগানে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন শিশু তুঁত বাগানের গাছে ধরা তুঁত ফল পেরে খাচ্ছে। শুধু শিশুই নয়, একজন বয়স্ককেও দেখা যায় তুঁত ফল খেতে।
কথা হলে আব্দুস সালাম নামে ওই ব্যক্তি বলেন, ছোটবেলায় এই ফল খাইতাম, এখন আগের মত তুঁত গাছ দেখা যায় না। এদিকে কাজের জন্য আসছিলাম, দেখতে পেয়ে খাইলাম।
বিশেষজ্ঞদের মতে কিংবা ইন্টারনেটে খুঁজলে পাওয়া যায় বিভিন্ন দেশে তুঁত ফলের ব্যবহার। এই ফল দিয়ে দেশেও একবার জেলি তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু গ্রাহকদের জনপ্রিয়তা অর্জন করতে ব্যর্থ হওয়ায় সেই জেলি এখন আর তৈরি করা হয় না।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ প্রদীপ কুমার গুহ বলেন, বাংলাদেশে তুঁত গাছ মূলত রেশমের গুটি উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করা হয়। তুঁত ফল অনেকেই খেয়ে থাকেন। তবে এটি বাংলাদেশের খাদ্য শস্যের তালিকায় নেই।
খাদ্য শস্যের তালিকায় তুঁত ফলের নাম না থাকলেও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসাক্ষেত্রে অনেক উপকারী ফল এটি।
দিনাজপুর শহরের আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক আশরাফুল ইসলাম বলেন, পাকা তুঁত ফল বাত-ব্যথা, পিত্তনাশক, বলকারক, দৃষ্টি ও শ্রবণ বৃদ্ধিকারক। তাছাড়া মুখের ক্ষত, গলার ক্ষত, অজীর্ণ, জ্বর ও কৃমিনাশক হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ড দিনাজপুর অঞ্চলের রেশম বীজাগারের ফার্ম ম্যানেজার নুরুল হুদা বলেন, আমাদের এই নার্সারিতে রেশম পোকার খাবারের জন্য তুঁত গাছের পাতা উৎপাদন করে থাকি। তুঁত ফল নিয়ে বোর্ড থেকে কোনো ধরনের নির্দেশনা নেই। তবে গাছে যে তুঁত ফলগুলো হয় সেগুলো পাকলে পাখি খায়, স্থানীয় ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরাও খায়। বোর্ড থেকে এই তুঁত ফল সংগ্রহের জন্য নির্দেশনা আসে তাহলে অবশ্যই আমরা সেই নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করব।
তুঁত ফল খাদ্য হিসেবে কতটুকু সম্ভাবনাময় এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কয়েক বছর আগে বাংলাদেশেও তুঁত ফল সংগ্রহ করে বিভিন্ন ধরনের জেলি উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। উৎপাদন খরচ এবং প্রচলন না থাকায় ভোক্তাদের চাহিদা তেমন ছিল না বললেই চলে। পরে সেই কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
তুঁত গাছের ইংরেজি নাম মালবেরি। সাধারণত অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাসে এই গাছের চারা রোপণ উপযোগী। ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাসে এই গাছে ফল ধরে। যা পরবর্তীত এক মাসের মধ্যে পাকতে শুরু করে। তুঁত ফল প্রথম অবস্থায় সবুজ, পরে হালকা গোলাপী, লাল এবং সম্পূর্ণ পাকলে কালো রং ধারণ করে।
দিনাজপুর রেশম বীজাগারের দেওয়া তথ্য মতে, এই কেন্দ্রে ১১৮ বিঘা জমিতে চারা, পাতা ও ডিম উৎপাদনের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। তবে ব্যবহার না থাকায় তুঁত ফল মাটিতে পড়েই নষ্ট হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২২
আরএ