কুমিল্লা: বল সুন্দরি কুল চাষে বাজিমাত করেছেন কুমিল্লার মুরাদনগরের এক কৃষক। উপজেলার কাজিয়াতলে প্রায় দুই হাজার শতক (৬০ বিঘা) পতিত জমিতে এ কুলের আবাদ করেছেন তিনি।
গত বছর প্রতি গাছে গড়ে ১০ কেজি করে কুল ধরে। এবার ধরেছে গড়ে দেড় মণ কুল। প্রতি কেজি পাইকারি ৮০ টাকা দরে প্রতিদিন গড়ে ২০ মণ কুল বিক্রি করছেন তিনি। দেড় মাস বিক্রি করেছেন। গাছে যে পরিমাণ কুল, তাতে আরও দেড় মাস বিক্রি চালিয়ে যেতে পারবেন। এভাবে বিক্রি অব্যাহত থাকলে এ মৌসুমে প্রায় এক কোটি টাকার কুল বিক্রি করতে পারবেন তিনি।
কাজিয়াতল ইউনুস ভূঁইয়ার বল সুন্দরী কুলের মাঠে গিয়ে শোনা যায় বুলবুলি-শালিকের কুজন। দেখা যায়, মাঘের হালকা হাওয়ায় দোল খাচ্ছে কুল। কিশোরার প্রতিযোগিতা করে কুল তুলছে। জমির কোথাও কোথাও জাল দেওয়া হয়েছে, যাতে বাদুর কুল নষ্ট না করতে পারে। কুলের ফলন এতোই ভালো হয়েছে যে এর ভারে বেশকিছু ডাল নুয়ে পড়েছে। ইউটিউব দেখে পতিত ও পরিত্যক্ত জমিতে এভাবে ফসল ফলিয়ে এমন সাফল্য পাবেন, তা ভাবতেই আনন্দে দুলে ওঠে ইউনুস ভূঁইয়ার মন।
মো. ইউনুস ভুঁইয়া জানান, তিনি ১৪ বছর সৌদি আরবে ছিলেন। সেখানে কৃষি খামারের তত্ত্বাবধান ও বাগানে কাজ করেছেন। কয়েক বছর আগে দেশে আসেন। তারপর চিন্তা করেন বিদেশের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর। পতিত ও পরিত্যক্ত জমি, অপেক্ষাকৃত উঁচু হওয়ায় যেসব জমিতে ফসল হয় না এমন ৪৯ বিঘা জমি লিজ নেন তিনি। বাকি ১১ বিঘা জমি নিজের ছিল। ওই ৬০ বিঘা জমিতে মাছের খামার করেন। এলাকাটি উঁচু হওয়ায় পানি কমে যায়। তেমন লাভও পাচ্ছিলেন না। চিন্তা করলেন খামারের পাড়ে ও ভেতরের জমিতে লেবুর চারা লাগাবেন। টাঙ্গাইল থেকে সাত হাজার লেবুর চারা এনে লাগিয়েছেন। সঙ্গে আর কি করা যায় সেই ভাবনায় ইউটিউবে দেখলেন অস্ট্রেলিয় জাতের বল সুন্দরি কুলের চাষ। চারা আনলেন নাটোর থেকে। বাগান করতে তার ৬০ লাখ টাকার মতো পুঁজি লেগেছে। তার পরিকল্পনা তিন বছর পর নতুন চারা লাগাবেন। সঙ্গে রয়েছে লেবু, মাল্টার বাগান। এছাড়াও চাষ করেছেন ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, টমেটোসহ অন্যান্য সবজি। পানিস্বল্পতা রোধে বাগানের চারদিকে খনন করে খাল তৈরি করেছন। সেখানে মাছ চাষ করছেন। তার দাবি সুদবিহীন ঋণ পেলে তার খামার আরো বড় করতে পারবেন। আরো ৫০ লাখ টাকার পুঁজি পেলে তিনি বছরে এক কোটি টাকা আয় করতে পারবেন। বর্তমানে ওই বাগানে গড়ে ২০ জন শ্রমিক স্থায়ী ও দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে কাজ করছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাইন উদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, তাকে আমরা বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে আসছি। জৈব সার ব্যবহার করে যেন ফল ও সবজি উৎপাদন করতে পারে সেজন্য তাকে প্রশিক্ষণ এবং সহযোগিতা দিয়েছি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, জেলায় মো. ইউনুস ভূঁইয়ার কুল বাগান সবচেয়ে বড়। বেলে দোঁআশ মাটিতে এই কুলের ভালো চাষ হয়। তার কুল স্বাদেও অনন্য। তিনি একজন উদ্যমী কৃষি উদ্যোক্তা।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৪৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২২
এনটি