খুলনা: ফুটেছে সূর্যমুখী। সূর্য যখন যেদিকে হেলেছে, সূর্যমুখী ফুলও সেদিকে হেলে পড়ছে।
খুলনার উপকূলীয় উপজেলা কয়রায় প্রথমবারের মতো নতুন জাতের বারি-৩ সূর্যমুখী ফুলের বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে সূর্যমুখী ফুলের সঙ্গে সঙ্গে হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখেও। সূর্যমুখীর চাষ করে সফল হয়েছে কৃষি বিভাগ। সবুজের মাঠজুড়ে সূর্যমুখীর মায়াবী হাসি আর এটি চাষে লাভজনক হওয়ায় এ উপজেলায় সূর্যমুখী চাষের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। দুই নম্বর কয়রার কৃষক কামরুজ্জামান টুকু বাংলানিউজকে বলেন, ‘সরেজমিন গবেষণা বিভাগের সহযোগিতায় ১ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছি। ফুল দেখতে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে লোক আসছে। আশা করছি, সূর্যমুখী চাষে লাভবান হবো। ’
তিন নম্বর কয়রার কৃষক রবীন্দ্রনাথ ঢালীর স্ত্রী তৃষ্ণা ঢালী বলেন, ‘সূর্যমুখী ফুল খুব সুন্দর হয়েছে। বড় বড় ফুল ফুটেছে। প্রতিদিন যা দেখতে মানুষ আসছে। ’
বৈজ্ঞানিক সহকারী জাহিদ হাসান বাংলানিউজকে বলেন, ‘বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সরেজমিন গবেষণা বিভাগের সহযোগিতায় কয়রার তিন নম্বর কয়রা, ২ নম্বর কয়রা ও আমাদী এলাকার সাতজন কৃষকের ৭ বিঘা জমিতে প্রথমবারের মতো বারি-৩ সূর্যমুখী চাষ করা হয়েছে। জাতটি পাতা ঝলসানো ও ঢলে পড়া রোগ প্রতিরোধী। এটি বিনা চাষে রোপন করা হয় ডিবলিংপদ্ধতিতে। কয়রার কৃষকরা প্রথমবার সূর্যমুখী চাষ করে সফল হয়েছেন। ’খুলনার প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. হারুনর রশিদ বলেন, ‘প্রথমবারের মতো কয়রায় বারি সূর্যমুখী-৩ চাষ করা হয়েছে। বাম্পার ফলনও হয়েছে। এতে কৃষকরাও বেজায় খুশি। ’
তিনি বলেন, ‘বারি সূর্যমুখী-৩ বীজ বপন করা হয় মধ্য নভেম্বর-মধ্য ডিসেম্বর পর্যন্ত। গাছের উচ্চতা ৭৫-৮০ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। ১০০০ বীজের ওজন ৬৫-৮৭ গ্রাম হয়। প্রতি মাথায় বীজের সংখ্যা ৪১০-৮২৯টি। বীজে তেলের পরিমাণ শতকরা ৩৮-৪০ শতাংশ। সূর্যমুখী গাছের জীবনকাল ৯০-১০৫ দিন। শতকরা ৮০-৯০ শতাংশ বীজ পরিপক্ক হলে ফসল কাটার উপযুক্ত সময় হয়ে যায়। প্রতি হেক্টরে ১২-১৫ কেজি বীজ প্রয়োজন হয়। সূর্যমুখী সারিতে বপন করতে হয়। সারিতে বপন করলে সারি থেকে সারির দূরত্ব ৫০ সেন্টিমিটার এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ২৫ সেন্টিমিটার রাখতে হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের তৈলবীজ কেন্দ্র থেকে ২০১৯ সালের প্রথম দিকে উন্নত জাতের বারি-৩ নামের এ সূর্যমুখী ফুলের জাতটি অবমুক্ত করা হয়। এরপর থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকার কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা তাদের তত্ত্বাবধানে জাতটি নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। মানবদেহের জন্য উপকারী লিনোলিক এসিড সমৃদ্ধ, হৃদরোগ ও ক্যানসার প্রতিষেধক, নারীদের বন্ধ্যত্ব দূরীকরণ ছাড়াও ত্বকের সৌন্দর্যের জন্য অধিক উপকারী বারি সূর্যমুখী-৩। বিজ্ঞানীদের মতে, খাটো জাতের রোগ প্রতিষেধক গুণসম্পন্ন সূর্যমুখীর জাতটি কৃষক পর্যায়ে পৌঁছে দিতে পারলে দেশে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত ভোজ্যতেল উৎপাদনে ব্যাপক সহায়ক হবে। কারণ সূর্যমুখী বীজে তেলের পরিমাণ শতকরা ৪০-৪৫ শতাংশ। এতে মানবদেহের জন্য উপকারী লিনোলিক এসিড রয়েছে। এ তেলে ক্ষতিকারক ইরোসিক এসিড নেই। এ তেলের লিনোলিক এসিড হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা দৈনন্দিন খাদ্যে শতকরা পাঁচ শতাংশ লিনোলিক এসিড ব্যবহার করে, তাদের স্ট্রোকের ঝুঁকি শতকরা ২৮ শতাংশ হ্রাস পায়। এছাড়া সূর্যমুখী তেল মানুষের রক্তের কোলেস্টেরল ও উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। ক্যানসার প্রতিষেধক ও নারীদের বন্ধ্যত্ব দূরীকরণে সূর্যমুখী অনেক উপকারী।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, মার্চ ০১, ২০২২
এমআরএম/এএটি