রাঙামাটি: পার্বত্য জেলা রাঙামাটি বিভিন্ন সুমিষ্ট ফলের জন্য আলাদা সুপরিচিতি রয়েছে পুরো দেশ জুড়ে। পার্বত্য এলাকার মাটি ফল চাষের জন্য উপযুক্ত হওয়ায় বছর জুড়ে নানা ধরনের ফলের আবাদ হয়ে থাকে।
তরমুজ চাষ করা হয় মূলত পাহাড়ের ঢালে এবং কাপ্তাই হ্রদের জলে ভাসা জমিতে। এ বছর জেলায় তরমুজের ভালো ফলন ভালো হলেও চষিদের চোখে-মুখে দুশ্চিতার ছাপ। কারণ শিলাবৃষ্টি হলে তাদের বোনা স্বপ্ন নষ্ট হয়ে যাবে। অর্থনৈতিকভাবে মুখ থুবড়ে পড়বেন তারা।
রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কার্যালয় থেকে জানা যায়, চলতি মৌসুমে রাঙামাটি জেলায় ২০০ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ করা হয়েছে। গড়ে ৪০ টন করে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮ হাজার মেট্রিক টন। জেলার মধ্যে লংগদু, বাঘাইছড়ি, রাঙামাটি সদরে তরমুজের চাষাবাদ বেশি করা হয়েছে। তবে জেলার অন্য উপজেলায়ও চাষবাদ করা হয়। সামনে তীব্র গরম এবং বৈসাবি উৎসবে তরমুজের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ফলে কৃষকরা লাভবান হবে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় বাজারগুলো তরমুজে সয়লাব। তবে কেনা-বেচায় মন্দা। হাটে তরমুজ থাকলেও ক্রেতার সংখ্যা খুব কম। ক্রেতারা বলছে তরমুজের দাম বেশি। ব্যবসায়ীরা বলছে, স্মরণকালে সস্তা দামে হাটে তরমুজ বিক্রি করা হচ্ছে। কৃষকদের কাছ থাকে যে দামে তরমুজ কেনা হচ্ছে সেই দামে হাটে বিক্রি করা যাচ্ছে না। যে কারণে তাদের লোকসানের মুখ দেখতে হচ্ছে, মনে নেই শান্তি।
স্থানীয় বনরূপা হাটের তরমুজ ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান এবং আলীম উদ্দীন বাংলানিউজকে বলেন, বাজারে তরমুজে সয়লাব। কিন্তু ক্রেতা নেই। কৃষকদের কাছ থেকে যে দামে তরমুজ কেনা হয়েছে সেই দামে বিক্রি করতে পারছি না। যে কারণে আমাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে।
সমতা ঘাটের তরমুজ ব্যবসায়ী সাধন চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, তরমুজের ফলন ভাল। বেচা-কেনা কম। আশাকরছি কয়েকদিনের মধ্যে তরমুজের বাজার জমে উঠবে।
লংগদু উপজেলার তরমুজ ব্যবসায়ী মানিক মিয়া বাংলনিউজকে বলেন, লংগদু উপজেলা থেকে তরমুজ নিয়ে আসছি রাঙামাটিতে। তবে এখানে এসে দেখছি খরচ তোলা কঠিন। বাজারে ন্যায্য মূল্য পাচ্ছি না। বোট ভাড়া, শ্রমিক সবমিলে লোকসান গুনে বাড়ি ফিরবো।
বনরূপা বাজারে তনমুজ কিনতে আসা গৃহিনী শাহেদা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, তরমুজ কিনতে এসেছি। ফলটি এখনো মিষ্টি হয়নি। গরমের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফলটি মিষ্টি হবে। তবুও বাচ্চাদের জন্য মৌসুমের শুরুর ফলটি কিনতে এসেছি।
এদিকে রাঙামাটির ফলের জন্য বিখ্যাত প্রধান প্রধান হাট ‘বনরূপা, সমতাঘাট, কলেজগেট’ বাজারগুলোপ ঘুরে দেখা যায়, ছোট আকারের তরমুজ ৭০-৮০ টাকা, মাঝারি আকারের ১০০-১২০ টাকা এবং বড় আকারের তরমুজগুলো ১৫০-২০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাঙামাটি অঞ্চলের উপ-পরিচালক তপন কুমার পাল বাংলানিউজকে বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে রাঙামাটিতে তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষকরা বেজায় খুশি ফলন ভালো হওয়ায়।
তিনি আরও বলেন, বাজারে বর্তমানে তরমুজের চাহিদা কম থাকলেও গরমের তাপদাহ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তরমুজের চাহিদা বাজারে বাড়বে। এছাড়া সামনে পাহাড়ের সবচেয়ে আনন্দবহ বিজু, বৈসাবি উৎসব রয়েছে। ফলে কৃষক-ব্যবসায়ী সকলে লাভবান হবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৪, ২০২২
এনটি