ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

ফরিদপুরে ‘ওটস’ চাষে স্বপ্ন বুনছেন কৃষক

হারুন-অর-রশীদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ৫, ২০২২
ফরিদপুরে ‘ওটস’ চাষে স্বপ্ন বুনছেন কৃষক

ফরিদপুর: বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএআরআই) উদ্ভাবিত উচ্চ মূল্যের দানা জাতীয় ফসল ওটস চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে ফরিদপুরে। এরই মধ্যে ফরিদপুর সদর উপজেলার বসু নরসিংহদিয়া গ্রামের মাঠে সরেজমিনে গবেষণা বিভাগের তত্ত্বাবধানে পরীক্ষামূলকভাবে অপ্রচলিত এ ফসলের আবাদে সফলতাও পেয়েছে কৃষি বিভাগ।

চর পতিত জমিতে এ ফসল চাষাবাদ করা গেলে একদিকে পতিত জমি কৃষি জমিতে রূপান্তরিত হবে, অন্যদিকে ভাগ্যের পরিবর্তন হবে চরবাসীর।

ফরিদপুরের বসু নরসিংহদিয়া গ্রামের মাঠে কৃষি মিউজিয়ামে ওটস ছাড়াও সমজাতীয় ফসল কাউন ও বার্লির আবাদ করে সফলতা অর্জিত হয়েছে।

ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. হযরত আলী আগ্রহী কৃষকদের ওটসসহ অপ্রচলিত দানাদার ফসল আবাদে কারিগরি সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে বলেন, উচ্চমূল্যের এ ফসলটি আবাদে কৃষকদের লাভবান হওয়ার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।

সরেজমিনে গবেষণা বিভাগের ফরিদপুর অঞ্চলের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. সেলিম আহমেদ জানান, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগ থেকে অপ্রচলিত দানাদার ফসলের কিছু আধুনিক ও উন্নত জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে, যার মধ্যে ওটস, কাউন ও বার্লি উল্লেখযোগ্য। এ তিনটি জাত কম সেচ ও কম উর্বর জমিতে আবাদযোগ্য।  

আর বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. দেবাশীষ সরকার ফরিদপুরের বসু সরসেংহদিয়া এলাকায় এ ফসলগুলোর আবাদ পরিদর্শনকালে জানান, প্রতিবছর দেশে এক শতাংশ করে কমছে কৃষি জমি, তাই পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে  ওটস, কাউন ও বার্লিসহ এ জাতীয় ফসলের আবাদ সম্প্রসারণ করা জরুরি।  

তিনি আরও জানান, বিজ্ঞানীরা ফসলের আধুনিক ও উন্নত জাত উদ্ভাবনে কাজ করে যাচ্ছে।  

নিম্নে অপ্রচলিত দানাদার ফসল ওটস, কাউন ও বার্লির সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরা হলো-

ওটস
বিজ্ঞানীদের ভাষায় ওটস একটি খাদ্যশস্য যা ধান, গম ও যব জাতীয় উদ্ভিদ শস্য। ওটস স্বাস্থ্যকর খাবার হিসেবে সমজাতীয় খাদ্য তালিকার প্রায় উপরের দিকে অবস্থান করে। ওটসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার (৮ শতাংশ), প্রোটিন (১৩ শতাংশ), শর্করা (৫১ শতাংশ)। এছাড়া রয়েছে ভিটামিনসহ একগুচ্ছ পুষ্টি উপাদান। বিশেষত ওটসে রয়েছে ভিটামিন-বি, যা শরীরে কার্বোহাইড্রেট হজমে সাহায্য করে। তাছাড়া ওটসে রয়েছে প্রচুর ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক, কপার, ম্যাঙ্গানিজ, থিয়ামিন ইত্যাদি, যা অন্যান্য শস্যজাতীয় খাবারের তুলনায় বেশি। ওটসে প্রাকৃতিকভাবে ফ্যাটের পরিমাণ কম থাকে।  

এছাড়া ওটস কোলেস্টেরল কমায়, উচ্চ রক্তচাপ নিরাময় করে, হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়, রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে, ওজন কমায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ও ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।  

বারি ওটস-১ এর বৈশিষ্ট্য: বাংলাদেশের সব এলাকায় এর চাষ করা যায়। তবে চর এলাকার জন্য বিশেষ উপযোগী। জাতটি ১২৫-১৩০ দিনে পরিপক্ব হয়। প্রতি হেক্টরে জাতটির গড় ফলন ১ থেকে ১.২ টন।

কাউন
প্রায় সব ধরনের মাটিতেই কাউনের চাষ করা যায়। তবে পানি দাঁড়ায় না এমন বেলে দোআঁশ মাটিতে এর ফলন ভালো হয়। ছোট দানা বিশিষ্ট শস্যটি বাংলাদেশের সাধারণত চরাঞ্চলে অথবা কম উর্বর জমিতে কম খরচে চাষ করা হয়ে থাকে। কাউন দিয়ে তৈরিকৃত এ খাবারগুলো খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি পুষ্টিগুণেও ভরপুর।  

১০০ গ্রাম কাউনের চালে ৩৭৮ ক্যালোরি প্রোটিন, ৯ গ্রাম পানি, ৭৩ মিলিগ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ৪ গ্রাম মিনারেল, ৭৭ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি, ৩০০ ক্যালোরি ডায়োটরি ফাইবার, পটাশিয়াম ৬০ মিলিগ্রাম রয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক এ পর্যন্ত মোট ৪টি কাউনের জাত উদ্ভাবন করেছে।  

বারি কাউন-৩ এর বৈশিষ্ট্য: ১২০-১২৫ দিন জীবনকালের কাউনের এ জাতটি খাটো প্রকৃতির হওয়ায় নুয়ে পড়ে না। গাছের পাতাগুলো খাড়া ও অগ্রভাগ সুচালো হওয়ায় পাখির আক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারে। দেশের উত্তরাঞ্চলে অগ্রহায়ণ মাস থেকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত বীজ বোনার উপযুক্ত সময়। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে সাধারণত অগ্রহায়ণ মাসে বীজ বোনা হয়ে থাকে। অন্য ফসলের সঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে খরিপ মৌসুমেও বীজ বোনা যায়। গড় ফলন আড়াই থেকে তিন টন/হেক্টর। স্থানীয় জাতের চেয়ে ফলন শতকরা প্রায় ৩৫ শতাংশ বেশি।

বারি কাউন-৪ এর বৈশিষ্ট্য: জাতটির কাণ্ড দৃঢ়, শক্ত, মজবুত ও অপেক্ষাকৃত খাটো হওয়ায় সহজে হেলে পড়ে না। হেক্টর প্রতি উৎপাদন ৩.৫৩ টন। জাতটি দ্রুত বর্ধনশীল ও ১০৮ দিনে পরিপক্ব হয়। খাদ্য ও পানির চাহিদা কম হওয়ায় খরা প্রবণ ও চরাঞ্চলেও চাষ করা যায়।

বার্লি
বার্লির স্থানীয় নাম যব। সাধারণত চরাঞ্চলে অনুর্বর জমিতেও স্বল্প ব্যয়ে এর চাষ করা হয়। বার্লি দিয়ে শিশু খাদ্য, ওভালটিন, হরলিক্স প্রভৃতি সুস্বাদু খাদ্য তৈরি হয়। বার্লিতে আমিষ ও শর্করার পরিমাণ ১১.৫০ ও ৬৯.৬০ শতাংশ। আঁশের পরিমাণ যেখানে গমে ১.৯ শতাংশ সেখানে বার্লিতে এর পরিমাণ ৩.৯০ শতাংশ।  

বার্লিতে নিয়াসিন (ভিটামিন বি-৩), থায়ামিন (ভিটামিন বি-১), সেলিনিয়াম, লৌহ, ম্যাঙ্গানিজ, জিঙ্ক, ফসফরাস, কপার ইত্যাদি খনিজ পদার্থ থাকে। এটা মানুষের শরীরের স্বাভাবিক বৃদ্ধির কাজে লাগে এবং রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।  

বারি বার্লি-৭ এর বৈশিষ্ট্য: জাতটির শীষ ছয় সারি বিশিষ্ট ও দানাগুলো খোসামুক্ত। গাছ খাটো আকৃতির। জীবনকাল ৯০-১০৫ দিন। ফলন: হেক্টর প্রতি ২.২০ থেকে ২.৫০ টন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৫, ২০২২
আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।