রাজবাড়ী: রাজবাড়ী জেলায় এ বছর বাঙ্গির বাম্পার ফলন হয়েছে। দিগন্ত জোড়া বিস্তীর্ণ মাঠে যে দিকেই চোখ যায় সেদিকেই কেবল বাঙ্গি চাষের সমারোহ।
চৈত্রের বাহারি মৌসুমি ফল বাঙ্গির বাম্পার ফলন ও ভালো দাম পাওয়ায় জেলার বাঙ্গি চাষিদের মুখে এখন খুশির হাসি। উৎপাদিত বাঙ্গি নিয়ে ভালো লাভের আশায় স্বপ্ন বুনছেন চাষিরা। অল্প পুঁজিতে ভালো মুনাফা হওয়ায় প্রতি বছরই রাজবাড়ী জেলার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে বাঙ্গি চাষাবাদ হচ্ছে।
রাজবাড়ী জেলা কৃষি অধিদপ্তরের তথ্যমতে, রাজবাড়ী জেলার পাঁচটি উপজেলাতেই বাঙ্গির চাষ হয়ে থাকে। এ বছর জেলায় ৫৩ হেক্টর জমিতে বাঙ্গির চাষ হয়েছে। জেলা সদরে সবচেয়ে বেশি চাষ হয় বাঙ্গির। চলতি মৌসুমে জেলা সদরে ৩০ হেক্টর, পাংশা উপজেলায় ৩ হেক্টর, কালুখালী উপজেলায় ১০ হেক্টর এবং গোয়ালন্দ উপজেলাতে ৫ হেক্টর জমিতে উচ্চফলনশীল জাতের বাঙ্গি চাষ হয়েছে। চলতি মৌসুমে প্রায় ৯৬০ মেট্টিক টন বাঙ্গি উৎপাদন হবে বলে আশা করছে জেলা কৃষি বিভাগ।
সরেজমিনে রাজবাড়ী জেলা সদরের শহীদ ওহাবপুর ইউনিয়নের রূপপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সেখানকার কৃষকেরা রমজান মাসকে সামনে রেখে বাঙ্গির আবাদ করেছেন। মাঠের পর মাঠ শুধু বাঙ্গি আর বাঙ্গি। কৃষক গফুর কাজী জানান, আমাদের এখানে ৩০ শতাংশে এক পাকি জমি। এবার ১ পাকি জমিতে বাঙ্গির চাষাবাদ করেছি। ফলন ভালোই হয়েছে। বাঙ্গি পাকতে শুরু করেছে। বাজারে নিয়ে বিক্রিও করতে শুরু করেছি। তবে কিছু বাঙ্গিতে পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে।
আরেক চাষি আব্দুস ছাত্তার সেখ জানান, ১ পাকি জমিতে বাঙ্গির চাষ করেছি। প্রায় ৬০ হাজার টাকার বাঙ্গি বিক্রি করতে পারবো বলে ধারণা করছি।
আরেক চাষি কুহাই সেখ জানান, বাঙ্গি ক্ষেত থেকে সংগ্রহ করে বাজারে নিয়ে বিক্রি করছি। বাজারে আকার ভেদে ৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বাঙ্গি বিক্রি হচ্ছে।
স্থানীয় কুটির হাট বাজারের ফল বিক্রেতা সাগর মিয়া বলেন, আমরা এ বছর প্রতি ১০০ পিস বাঙ্গি ৬ হাজার টাকায় কৃষকের জমি থেকে কিনেছি। জমি থেকে কেনার পর এগুলো বাজারে নেওয়ার আগে মজুরি ও গাড়ি ভাড়াসহ বিভিন্ন খরচ মিলিয়ে প্রতি পিসে সর্ব্বোচ ১০ টাকা লাভ থাকলেই বিক্রি করে দিই।
রাজবাড়ী কৃষি সম্প্র্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক এস এম সহীদ নূর আকবর জানান, চলতি মৌসুমে রাজবাড়ীতে ৫৩ হেক্টর জমিতে বাঙ্গির আবাদ হয়েছে যা থেকে ৯৬০ মেট্রিক টন বাঙ্গি পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। ফলটিতে শর্করা, ভিটামিন ও মিনারেলস থাকায় বাজারেও বাঙ্গির ভালো চাহিদা রয়েছে। এছাড়া কম সুগার থাকায় ডায়াবেটিস রোগীদের কাছে বিশেষভাবে জনপ্রিয়। বাঙ্গি একটি গ্রীষ্মকালীন ফল। তীব্র গরমে শরীরকে ঠাণ্ডা রাখতে বাঙ্গির ভূমিকা অপরিসীম। তীব্র গরমে রোজা থাকার পর শরীরের ক্লান্তির ছাপ দূর করতে বেশিরভাগ বাঙালির ইফতারেই বাঙ্গির চাহিদা থাকে। তাই বাজারে বাঙ্গির চাহিদা বেড়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৩২ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৭, ২০২২
আরএ