ঢাকা: হঠাৎ পাহাড়ি ঢলে হাওরাঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়ার কর্মসূচি নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, সরকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে থাকবে।
মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) দুপুরে সচিবালয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সার বিষয়ক জাতীয় সমন্বয় ও পরামর্শক কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।
এসময় শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, কৃষিমন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, কমিটির সদস্য ও জাতীয় সংসদ সদস্য জহিরুল ইসলাম, কৃষি সচিব মো. সাইদুল ইসলাম, শিল্প মন্ত্রণালয় সচিবসহ সার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
হাওরে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়া হবে কিনা- জানতে চাইলে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, অবশ্যই আমাদের প্রণোদনা আছে। ওখানে আমন ওভাবে হয় না, একটাই ফসল। আমরা এরই মধ্যে কর্মসূচি নিয়েছি আউশে প্রণোদনা দেওয়ার জন্য। ক্ষয়ক্ষতি মেটাতে সরকার অবশ্যই চাষীদের পাশে থাকবে।
হাওরে কতটুকু বোরো ধান নষ্ট হয়েছে জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘এখনও সেই সময় হয়নি। এখন মেঘ আকাশে, আমি কৃষিমন্ত্রী হিসেবে সব সময়ই একটা আতঙ্কের মধ্যে থাকি, আমাদের চিন্তিত করে। প্রকৃতির ওপর তো আমাদের হাত নেই। আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংসদেও আলোচনা করেছি, এমনিও যোগাযোগ রাখছি। তিনি বলেছেন, দেখ, প্রস্তুতি রাখ যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য। দু’দিনে অস্বাভাবিকভাবে ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে, আবার ১৪/১৫ তারিখে ভারতের চেরাপুঞ্জি ও মেঘালয়ে বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। সেই বৃষ্টি যদি আল্লাহ সরিয়ে নেন বা কোন পরির্তন হয়- এটাই আমরা আশা করি।
তিনি বলেন, বোরোতে প্রতি বছর আমাদের ২ কোটি টন উৎপাদন হয়, এরমধ্যে ১২ লাখ টন হয় হাওরে, যেটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তবে ১২ লাখ টনও বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় ব্যাপার। এটা আপনাদের জানা দরকার।
সারের ডিলারদের অনিয়ম বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, বিচ্ছিন্ন ঘটনা এমন হয়। এই মুহূর্তে সার নিয়ে তেমন সমস্যা নেই। আমি মিটিংয়ের আগেও অনেক চাষীর সঙ্গে কথা বলেছি। তবে কোনো অনিয়ম হলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখানে ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ সারের জন্য মানুষকে রক্ত দিতে হয়েছে, রাজপথ রঞ্জিত হয়েছে। কাজেই এখানে ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমরা শিল্প মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কাজ করছি। সমন্বয়েরও ইনশা আল্লাহ কোনো সমস্যা নেই।
বর্তমান সরকার অতীতের যে কোনো রেকর্ডকে ব্রেক করে সর্বোচ্চ পরিমাণ ভর্তুকি বা প্রণোদনা যাই বলি দিচ্ছে উল্লেখ করে ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, প্রতিবছর আমাদের ৮ থেকে ৯ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি থাকে বাজেটে। আমরা মনে করেছিলাম যে হারে আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম বাড়ছে তাতে জুন পর্যন্ত ২৮ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজারে যে হারে দাম বাড়ছে ফলে আমাদের ৩০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে। এই টাকা কোথা থেকে আসবে। দেশের উন্নয়ন বন্ধ করে অন্য খাত থেকে সরিয়ে এনে এ টাকা দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত ধৈর্যসহকারে কৃষকের প্রতি আন্তরিকতা নিয়ে ৩০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছেন, এর লাভ কৃষকের কাছে যাবে।
তিনি বলেন, আমাদের ছিল ৯ হাজার কোটি টাকা, কিন্তু আমরা ভর্তুকি দিচ্ছি ৩০ হাজার কোটি টাকা। ইউক্রেনের যুদ্ধ, সবকিছু মাথায় রেখে বাজেট আসতেছে। সারে ভর্তুকি বাড়ানোর বিষয়ে এখনও সরকারের কোনো পরিকল্পনা নেই। তাহলে তো এই ৩০ হাজার কোটি টাকারই একটা সংস্থান রাখতে হবে। এটা থেকে তো পেছানোর সুযোগ নেই।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২,২০২২
জিসিজি/এমএমজেড