ভোলা: ভোলায় প্রথমবারের মতো আবাদ হলো বিলুপ্ত প্রায় ফসল ‘চীনা শস্য’। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ৫০ বছর আগে এ ফসলের আবাদ হলেও তা এক সময় বিলুপ্ত হয়ে যায়।
১৬টি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ দানাদার এ ফসলটি প্রথম আবাদেই কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে। আগামীতে ব্যাপক পরিসরে এ ফসলটির আবাদের কথা ভাবছেন কৃষিবিভাগ।
জানা গেছে, এক সময় গ্রাম বাংলার মাঠে ঘাটে বিস্তীর্ণ ফসলের ক্ষেতে ‘চীনা’ ফসলের আবাদ করতেন কৃষকরা। পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ সেই ফসলটি তেমন জনপ্রিয়তা পায়নি। শস্যের দাম বৃদ্ধি, কৃষকদের সচেতনতার অভাব ও স্থানীয়ভাবে পরিচিতি না থাকাসহ বিভিন্ন কারণে বিলুপ্ত হয়ে যায় ফসলটি। বিলুপ্তপ্রায় সেই ফসলটিকে সংরক্ষণ ও ধরে রাখতে উদ্যোগ নিয়েছে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট।
তারা বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে দেশের কোন জেলায় ফসলটি আবাদে উপযোগী সেটি পরীক্ষার কার্যক্রম শুরু করেন। একপর্যায়ে ভোলা ও নোয়াখালী জেলায় পরীক্ষামূলক ফসলটির আবাদে কৃষকদের উৎসাহী করলেও শুধু ভোলাতেই সফলতা পেয়েছে কৃষিবিভাগ। এখানকার আবহাওয়া উপযোগী থাকায় এ বছরের শুরুর দিকে ফসলটির পরীক্ষামূলক আবাদ করা হয়।
এ বছর জেলার তজুমদ্দিন উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের গোলকপুর ও কালাশা গ্রামে ১০ শতাংশ জমিতে চীনা শস্যের ফলন হয়েছে। আর তাতেই বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে খুশি কৃষকরা।
চাঁপুর ইউনিয়নের কালাশা গ্রামের কৃষক নওয়াব মাঝি বলেন, এর আগে বহু ধরনের ধান এবং বিভিন্ন ফসলের আবাদ করেছি, এই প্রথমবার ৬ শতাংশ জমিতে চীনা ফসল আবাদ করেছি। উপজেলা কৃষি অফিস আমাকে বীজ, সার, ওষুধ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে সহযোগিতা করেছে। এখন ফলন অনেক ভালো। অল্প পরিশ্রমে ভালো ফলন হয়েছে। আগামী ২/৩ দিনের মধ্যে ফলন মাড়াই করবো। নতুন এ ফসলটি দেখতে অনেকেই আসছেন। আমি আগামীতেও এ ফসলের আবাদ করবো।
হোলকপুর গ্রামের কৃষক আবুল কালাম বলেন, এবার ৪ শতাংশ জমিতে চীনা ফসলের আবাদ করেছি, ফলন অনেক ভালো হয়েছে। কোনো রোগ বা পোকা-মাকড়ের আক্রমণ হয়নি। আশা করি আগামীতে আরও বেশি জমিতে এ ফসলের আবাদ করবো।
এদিকে ধানের মতো দেখতে হলেও দানাদার জাতীয় পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এ ফসলটি প্রথমবারের মতো আবাদের পর ইতোমধ্যে পাকা ফসলের কিছু অংশ মাড়াই শুরু করেছেন চাষিরা। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ফসলটি আবাদে সহজলভ্য থাকায় এ ফসল আবাদে অন্যদেরও আগ্রহ বেড়েছে।
স্থানীয় আলম, আপন চন্দ্র দাসসহ কয়েকজন কৃষক চীনা ফসলের আবাদে আগ্রহ প্রকাশ করে বলেন, ফসলটি আবাদ অনেক সহজ। সেচ নিয়ে তেমন ঝামেলা নেই। উৎপাদন খরচ অন্য ফসলের তুলনায় খুবই কম। এ ফসল আবাদে বেশ লাভবান হওয়া যাবে।
চাষিরা জানালেন, কীটনাশক এবং শ্রমিক মজুরি কম থাকা ছাড়াও রোগ ও পোকার তেমন আক্রমণ নেই এ ফসলে।
এদিকে প্রথমবারের মতো সফলতা পেয়ে আগামীতেও বেশি জমিতে ফসলটি আবাদের কথা ভাবছে কৃষিবিভাগ।
এ ব্যাপারে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিরেন চন্দ্র দে বলেন, প্রথমবার এ ফসল চাষ করে অনেক খুশি কৃষকরা। অনেকেই এই ফসলটি আবাদের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আমি আগামীতে আরও বড় পরিসরে ফসলটি আবাদের চিন্তা করছি।
বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বরিশাল অঞ্চল) ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. ছায়েমা খাতুন বলেন, অধিক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ চীনা ফসলটি আগে আবাদ হলেও তা বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। দানাদার এ ফসল ভাতের পাশাপাশি পায়েস হিসেবেও বেশ সুস্বাদু। আমরা এ বছর বিলুপ্তপ্রায় এ ফসলটি আবাদে সফলতা পেয়েছি। আগামীতে সারাদেশে এর আবাদ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন হবে অন্যদিকে পাশাপাশি পুষ্টির চাহিদাও পূরণ হবে। আগামীতে আরও বড় পরিসরে চীনা ফসলের আবাদের পরিকল্পনার কথা জানালেন এ কর্মকর্তা।
মাটি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ সফলটি আবাদে ভবিষ্যতে কৃষিতে বিপ্লব ঘটনো সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০২২
আরএ