কুষ্টিয়া: এক জমিতেই একই সময়ে বেগুন ও টমেটোর চাষ। গাছের ডালে ঝুলছে বেগুন তাও বেশ কয়েক প্রজাতির সেই সঙ্গে বেগুনের ডগায় ঝুলছে টমেটোও।
বেগুন গাছে টমেটোর কলম করে সফলতা পেয়েছেন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার কৃষক বাবলু সরদার। বিভিন্ন উদ্ভাবনীতে তিনি এখন এলাকায় ‘বাবলু কোম্পানি’ নামেই বেশি পরিচিত। পরীক্ষামুলক চাষে বেশ ভালো ফলন পাওয়ায় এবারে বাণিজ্যিকভাবেই চাষ করেছেন ‘বেগুন গাছে টমেটো’।
বাবলু সরদার বাংলানিউজকে বলেন, আমি যখন পাটের বিকল্প হিসেবে ঢেঁড়স গাছে আঁশ উৎপাদন করি। তখন লক্ষ্য করি যে, টমেটো গাছ তো বেশিদিন বেঁচে থাকে না। ফল দিয়ে দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু বেগুন গাছ টমেটো গাছের তুলনায় অনেক দিন বেঁচে থাকে। যদি বেগুন গাছে টমেটো ধরতো তাহলে অনেকদিন পর্যন্ত টমেটো পেতাম। এরপর আমি একটা বেগুন গাছে কলম করে টমেটোর ডগা বেঁধে দিই। কিছুদিন পরে দেখি টমেটো গাছের ডগায় কুঁশি বের হয়েছে। এবং বেগুন গাছে টমেটোর ডগাটি মরেনি। তারপর দেখি ফুল ও টমেটো ধরেছে। এরপর আমি পরবর্তীতে ৫টা গাছে এমন কলম করি এবং সবগুলোতেই বেগুন ও টমেটো একসঙ্গে ধরে।
তিনি বলেন, এ বছর আমি ৩০০-৪০০ বেগুন গাছে টমেটোর কলম করেছিলাম। যা থেকে একই গাছে যেমন বেগুন পেয়েছি অন্যদিকে টমেটো পেয়েছি। একটি বেগুন গাছে বিভিন্ন জাতের বেগুনের গাছের কলম লাগানো যায়, সেই সঙ্গে টমেটো। যদি এক গাছে আমি বেগুন ও টমেটো পায় তাহলে দ্বিগুন লাভ। একদিকে বেগুন পাচ্ছি একই সময় আবার ওই জমিতে টমেটোও পাচ্ছি। আর বেগুন গাছের সঙ্গে কলম হওয়ার কারণে আর বাড়তি জমি বা সার দিতে হচ্ছে না। এছাড়া নিজের উৎপাদিত জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করি বলে পোকা দমন করতেও খরচ লাগে না।
তিনি আরো বলেন, বেগুনের সঙ্গে টমেটোর কলম করলে বেশিদিন ধরে টমেটো পাওয়া যায়। আর একটা বেগুন গাছে যদি আমি কলম করে ৫ কেজি টমেটো পায় তার বাজার দর ১০০ টাকা। আবার বেগুনও পাওয়া যায়। এ বছর আমি ৩০০-৪০০ বেগুন গাছে টমেটোর কলম করে চাষ করেছি। এতে আমি প্রায় ১২-১৩শ’ কেজি টমেটো পেয়েছি। বেগুনের সঙ্গে বাড়তি লাভ হয়েছে।
বাবলু বলেন, আমাদের দেশে জমি দিনদিন কমে যাচ্ছে আর শহরের মানুষেরা শখের বসে টবে বেগুনের চাষ করে। সেখানে যদি একটা টবে একটা বেগুন গাছে ৩-৪ জাতের বেগুনের কলম করে তাহলে ৩-৪ রকমের বেগুন পাওয়া যাবে। আবার সঙ্গে টমেটো যদি কলম করে তাহলে একটা গাছেই বেগুন ও টমেটো পাওয়া যাবে।
তিনি বলেন, এবার আমি চেষ্টা করছি আলু-বেগুন-টমেটো একসঙ্গে করা যায় কী না। এছাড়া এবার একটা গাছে ৩টা করে বাঁধাকপি এবং ফুলকপি করেছিলাম। আলু গাছে টমেটোর কলম করেছিলাম। আগামীতে আলু-বেগুন ও টমেটো একসঙ্গে একই গাছে চাষ করবো আশা করছি।
বাবলু জানান, টমেটোর চারা তৈরি করা একটা ঝামেলার কাজ। তাই এবার আমি সরাসরি ২০টা টমেটো গাছে ডগা মাটিতে রোপণ করেছিলাম। যা থেকে আমি চারা তৈরি ছাড়াই টমেটো পেয়েছি।
মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রমেশ চন্দ্র ঘোষ বাংলানিউজকে বলেন, ইতোপূর্বে মিরপুর উপজেলার কৃষক বাবলু সরদার বেগুন গাছে টমেটোর কলম করে টমেটো ও বেগুন একসঙ্গে উৎপাদন করে সাড়া ফেলেছিলেন। এবার তিনি বাণিজ্যিকভাবেই কলমের মাধ্যমে চাষ করে বেশ লাভবান হয়েছেন। টবে এবং অল্প জমিতে কলমের মাধ্যমে এমন চাষাবাদ কৃষকদের জন্য লাভজনক।
মিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল কাদের বাংলানিউজকে জানান, একই জমিতে একসঙ্গে এমন চাষাবাদ করলে কৃষকরা যেমন অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন তেমনি সবজির চাহিদাও পূরণ হবে। আশা করছি এ ধরনের চাষ সম্প্রসারণ করা সম্ভব হলে কৃষকদের খরচ ও সময় বাঁচবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০২২
এনটি