মৌলভীবাজার: শিশু মাছ! এই শব্দটি একটু খটকা লাগলেও এটি পোনা জাতীয় মাছের সমার্থক শব্দ। অর্থাৎ এখানে পোনা মাছের বিষয়টিই উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রায় সব ব্যবসায়ীদের প্রথম এবং প্রধান টার্গেট খাটানো টাকাগুলো কত তাড়াতাড়ি লাভসহ তুলে আনা যায়। মৎস্যচাষিও এ ভাবধারা থেকে বিচ্ছিন্ন নন। ‘রিস্ক’ বা ঝুঁকি নিতে নিতে জীবনটাই যেনো কারো করো চরম ঝুঁকিময় হয়ে উঠে। তাই তারা আর ঝুঁকি নিতে চান না। দৌঁড়ঝাঁপ দেন ঝুঁকিমুক্ত প্রেক্ষাপটের দিকে।
সম্প্রতি সরেজমিন হাওর পরিভ্রমণে গিয়ে এক মৎস্যচাষির ঝুঁকিহীন কর্মমুখরতার সন্ধান পাওয়া গেছে। যা আশার সঞ্চার করেছে স্থানীয় মানুষদের মধ্যে। ব্যবসায় ঝুঁকি মানেই অঢেল দুর্ভাবনা। আর এর প্রভাব দেহমনের পরতে পরতে প্রকম্পিত। শ্রীমঙ্গল উপজেলার মতিগঞ্জ এলাকার হাওরপাড়ের মৎস্যচাষি টুটুল মিয়া। উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত ছয়টি পুকুর নিয়ে প্রায় ৮/১০ বছর ধরে মাছ চাষের সঙ্গে জড়িত। এই জায়গার পরিমাণ প্রায় ৪০ বিঘা। মৎস্য উৎপাদন ও বিপণনসহ নানা বিষয়ে কথা হয় তার সঙ্গে।
বাংলানিউজকে তিনি জানান, আমি পোনা মাছটাই বেশি চাষ করি। এতে অপেক্ষাকৃত ঝুঁকি কম। ইনভেস্ট (বিনিয়োগ) করা টাকাগুলো তাড়াতাড়ি উঠে আসে। দেশি প্রজাতির মাছ অর্থাৎ বাংলা মাছ আমি সব সময় চাষ করি। আর এই মাছের ডিমান্ড (চাহিদা) খুবই বেশি। রুই, কাতল, মৃগেল, বাউশ, সরপুঁটি প্রভৃতিই বাংলা মাছ। পোনা সাপ্লাইয়ে (সরবরাহ) লাভ বেশি আমার। ১০টা থেকে ১২টা পোনা মাছে ১ কেজি হয়। কেজিপ্রতি দাম গড়ে দেড়শ’ থেকে দুশো’ টাকা। বিক্রি সম্পর্কে তিনি বলেন, মাছ চাষ পুরোপুরি আড়তের সঙ্গে সম্পর্ক। মোটামুটি আমি সাত/আট লাখ টাকা নিয়ে এই ব্যবসায় নেমেছি। প্রতিবছর সব খরচ বাদ দিয়ে গড়ে ৩/৪ লাখ টাকা লাভ থাকে। কোনো বছর ৮ থেকে ১০ লাখ টাকাও আয় হয়। আবার কোনো বছর আবার প্রচুর টাকা ভর্তুকি দিতে হয়। গত বছর ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজি বিক্রি করেছি পোনা মাছ। তখন ধরা খেয়েছি প্রায় ৫ লাখ টাকার মতো। মাছ চাষে যে শুধু লাভই হয় তা কিন্তু একদম নয়।
প্রায় ১শ গ্রাম ওজনের বাংলা মাছের পোনাগুলো প্রাপ্তবয়স্ক বা খাওয়ার যোগ্য হতে প্রায় এক বছর সময় লাগে। তবে, আপনি যদি ৩শ বা ৪শ গ্রাম পোনা পুকুরে ফেলেন এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টিসম্মত খাবার তাদের ধারাবাহিকভাবে দিয়ে থাকেন তবে, প্রাপ্তবয়স্ক হতে সময় ৭/৮ মাস লাগবে বলে জানান ওই চাষি।
মাছের খামারের রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কে টুটুল বলেন, কোনো কোনো দিন-রাত ৩টা সময় উঠে খামারে আসতে হয়। ঝড়-বৃষ্টি-শীত সবই আমার জন্য সমান। কোনোটাই আমার গতিরোধ করতে পারে না। খামারে এসে দেখতে হয় নাইটগার্ড (নৈশপ্রহরী) ঠিকমত ডিউটি দিচ্ছে কিনা? মাছ চুরি হচ্ছে কিনা?স্থানীয় বাজার নষ্ট প্রসঙ্গে তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, দেশের অন্যান্য জেলা থেকে আমাদের শ্রীমঙ্গলে যে মাছগুলো আসে সেটা আমাদের মাছ ব্যবসাকে অনেক ডাউন করে দিয়েছে। আমরা যে দাম পাওয়ার কথা সেই দামগুলো পাই না।
৮০ টাকা থেকে ১২০ টাকা কেজিপ্রতি মাছের খাবার দাম। আমি তো আমার মাছকে এই দামের খাবার খাওয়াই। কিন্তু বিক্রি করতে গেলে আড়তে সেই অনুপাতে ভালো দাম পাই না। তাই অনেক ভেবেচিন্তে এবং বাস্তবতার ভিত্তিতে দেখেছি মাছচাষিদের মধ্যে তাড়াতাড়ি পোনা মাছগুলো বিক্রি করে দিলেই সবদিক থেকে লাভ বলে জানান মৎস্যচাষি টুটুল।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০২২
বিবিবি/এএটি