লালমনিরহাট: বৈরী আবহাওয়ার শঙ্কায় আগেভাগেই বোরো ধান ঘরে তোলার উৎসবে মেতে উঠেছেন তিস্তা আর ধরলা নদী বেষ্টিত জেলা লালমনিরহাটের কৃষকরা।
জানা গেছে, তিস্তা ও ধরলা নদী বেষ্টিত জেলা লালমনিরহাটের অর্থনীতির প্রধান চাবিকাঠি কৃষি।
বৈশাখ মাস আসার আগেই শিলাবৃষ্টি আর ঝড় শুরু হয়। কয়েক দফায় শিলাবৃষ্টি আর ঝড়ে উঠতি বোরো ধান নিয়ে বড় দুশ্চিন্তায় পড়েন কৃষকরা। পাকা ধান শিলাবৃষ্টির কবলে পড়লে গোলা ভড়ানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে। তাই বোরো ধান পূর্ণ পরিপক্ব হওয়ার আগেই কেউ কেউ ধান মাড়াই শুরু করেছেন। জেলার কিছু কিছু এলাকায় শিলাবৃষ্টি আর ঝড়ের কারণে ফলন কিছুটা কম হলেও বেশিভাগ অঞ্চলে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলনে এসব কৃষক পরিবার খুশি থাকলেও বৈরী আবহাওয়া ও দাম নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তারা।
কৃষকরা জানান, বীজ, সার, সেচ ও কীটনাশকের দাম বেড়েছে। শ্রমিক মজুরিও বেড়েছে কয়েকগুন। তাই বোরো ধানে উৎপাদন খরচও বেড়েছে। অপরদিকে বৈরী আবহাওয়ায় প্রায় প্রতিদিনই আকাশ কালো মেঘে ছেয়ে যায়। পাকা ধান শিলাবৃষ্টি বা কালবৈশাখীর কবলে পড়লে সমূলে বিনষ্ট হবে। সেই শঙ্কায় কিছুটা আগাম ধান মাড়াই শুরু করেছেন তারা। ফলনে খুশি হলেও দাম নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে। সরকারিভাবে প্রতি মণ (৪০ কেজি) ধানের মূল্য এক হাজার ৮০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও স্থানীয় বাজারে ৮০০-৮৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মহিষখোচার কৃষক তাহাজুল ইসলাম বলেন, আকাশের যে অবস্থা। প্রতিদিন আকাশ ডাকাডাকি করে। এবার শিলাবৃষ্টি হলে একটা ধানও ঘরে তোলা যাবে না। তাই ধান পাকা শুরু হতেই কাটা শুরু করেছি। বাকি দিনগুলো আবহাওয়া ভালো থাকলে সব ধান ঘরে তোলা যাবে। নয়তো লোকসান গুনতে হবে।
চলবলার কৃষক তমিজ উদ্দিন বলেন, সরকার সারের যে দাম বেধে দেয়। সেই দামে তো আর সার পাওয়া যায় না। বাড়তি দামে কিনে বোরো চাষ করেছি। ফলন যা হয়েছে এতেই খুশি। ধান ঘরে তোলা পর্যন্ত আকাশ ভালো থাকলেই হয়। আর দাম যদি ভাল পাই। তবে লোকসান হবে না। সরকারি গুদামে ক্রয় শুরু হয়নি। বর্তমানের বাজার মূল্যে ধান বিক্রি করলে লোকসান গুনতে হবে। ধান মাড়াই খরচ যোগাতে কম দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। সব জিনিসের দাম বাড়ে। কমে শুধু কৃষকের কষ্টের ফসলের দাম। কৃষকের ধান বিক্রি শেষ হলে ধানের দামও বাড়বে। তখন ব্যবসায়ীরা লাভবান হবে। আমাদের কষ্ট করাই বৃথা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, চলতি মৌসুমে জেলার ৫টি উপজেলায় ৪৭ হাজার ৩০৫ হেক্টর বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। অর্জিত হয়েছে ৪৭ হাজার ৮১৫ হেক্টর। জেলায় চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৭হাজার ৯৭৯ মেট্রিক টন। বোরো ধান ঘরে তোলা পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে চালের উৎপাদন কিছুটা বাড়বে।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ পরিচালক শামীম আশরাফ বাংলানিউজকে বলেন, কিছুটা বৈরী আবহাওয়ার মাঝেও বোরোর ফলন মোটামুটি ভালই হয়েছে। ধান ঘরে তোলা পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কৃষকরা লাভবান হবেন। মাড়াই করার উপযুক্ত ধান ক্ষেতে না রেখে দ্রুত ঘরে তোলার পরামর্শ দেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৫ ঘণ্টা, মে ০৬, ২০২২
আরএ