ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

কৃষি

জলাবদ্ধতায় নষ্ট, শত বিঘা জমির ধান কাটতে অনাগ্রহ

স্বপন চন্দ্র দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৬ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০২২
জলাবদ্ধতায় নষ্ট, শত বিঘা জমির ধান কাটতে অনাগ্রহ পানি-কাদায় নাকাল কৃষক, ছবি: বাংলানিউজ

 সিরাজগঞ্জ: দীর্ঘদিন ধরে জলাবদ্ধ অবস্থায় থাকলেও নেই পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা। বেশি পানি হওয়ায় ধান কেটে ঘরে তোলা সম্ভব হচ্ছে না কৃষকদের।

ফলে মাঠের ধান মাঠেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।  

এনিয়ে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার বাঙালা ইউনিয়নের বিনায়েকপুর হাওর এলাকার কৃষকেরা চরম বিপাকে পড়েছেন। এ অঞ্চলের প্রায় একশ’ বিঘা জমির ধান ডুবে গেছে। ধান পেকে গেলেও কাটতে পারছেন না কৃষকেরা।  

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার বাঙালা ইউনিয়নের বিনায়েকপুর হাওরটি এলাকায় লটাগাড়ি বিল নামে পরিচিত। চলতি মাসের শুরু থেকেই অতিবৃষ্টির কারণে এখানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। কিন্তু সেই পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই। এতে অধিকাংশ জমির ধান বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে। অপরদিকে হাওর অঞ্চল থেকে এসব ধান কেটে নিয়ে আসার কাঁচা সড়কগুলোও পানিতে নিমজ্জিত কিংবা কর্দমাক্ত। ডুবে যাওয়া ধান কাটতে এবং সেই ধান কৃষকের বাড়ি পর্যন্ত আনতে কোনো শ্রমিক কাজ করতে চাচ্ছে না। বেশি টাকা মজুরি দিয়েও কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। হাওর থেকে এক কিলোমিটার কাঁচা রাস্তার বেহাল দশা হওয়ায় পাকা ধান কেটে ঘরে তোলা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।  

তাই আশপাশের জমির ধান অতিকষ্টে কেটে নিয়ে গেলেও হাওর অঞ্চলের শত বিঘা জমির ধান না কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কৃষকেরা। শ্রমিক না পাওয়ায় এবং উৎপাদন খরচের তূলনায় ধানের বাজারমূল্য অনেক কম হওয়ায় তারা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।  

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিনায়েকপুর গ্রামের কৃষক আমজাদ হোসেন বলেন, আমি আট বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। ধানের ফলন খুব ভালো হয়। কিন্তু অতিবৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় ধান পানিতে ডুবে আছে। নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই। এখন পানি কিছুটা শুকালেও ধান অনেক নষ্ট হয়ে গেছে।  

একই গ্রামের মোতালেব মোল্লা বলেন, সাড়ে চার বিঘা জমিতে ধানের আবাদ করেছি। ফলনও ভালো হয়েছে। কিন্তু হাওরে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতায় ধান পানিতে ডুবে গেছে।

অপর কৃষক ইউনুস আলী বলেন, এক বিঘা খেতের ধান কাটতে সাত হাজার টাকা মজুরি, উৎপাদন খরচ ১০ হাজার টাকা, অথচ এক বিঘা জমির ধান বিক্রি করা যায় ১৬ হাজার টাকায়। আমাদের উৎপাদন খরচ এবং শ্রমিকের মজুরির চেয়ে ধানের বাজারমূল্য কম। ধান কেটে আর কি হবে? হাওরে আমার দুই বিঘা জমির ধান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।  

একই অবস্থা আল্লেকচান, আফসার মোল্লা, আশরাফ মোল্লা,  ইউসুফ,  ইয়াকুব মোকসেদসহ অনেক কৃষকের।

কৃষকেরা জানান, তাদের জমির ধান অনেক আগে পাকলেও জলাবদ্ধতার কারণে কাটতে পারেননি। এত ভালো ফলন হলেও সেই ধান তারা ঘরে তুলতে পারেননি। জলাবদ্ধ থাকার কারণে ধান নষ্ট হওয়া এবং শ্রমিকের মজুরি বেশি ও ধানের দাম কম হওয়ায় তারা কেউ ধান কাটতে আগ্রহী হচ্ছেন না।  

বাঙালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহেল রানা বাংলানিউজকে বলেন, এ হাওরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হলেও পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই। এ কারণে কৃষক ধান কেটে ঘরে তুলতে পারছেন না। আমরা এখানে একটি খাল খননের মাধ্যমে পানি নিষ্কাশনের কথা বলেছি। কিন্তু কৃষকেরা জমি দিতে রাজি হচ্ছেন না।  

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সূবর্ণা ইয়াসমিন বলেন, এ বছর ইরি-বোরো ধানের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। হাওরে বৃষ্টির কারণে কিছু জমি ডুবে গেলেও এখন আবহাওয়া ভালো আছে। ডুবে যাওয়া ধানগুলো এখন কাটা যাবে। আশা করি, কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৬ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০২২
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।