ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

কৃষি

নোয়াখালীতে হোগলা পাতায় ২০ হাজার পরিবারের জীবিকা

ফয়জুল ইসলাম জাহান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৬ ঘণ্টা, জুন ১২, ২০২২
নোয়াখালীতে হোগলা পাতায় ২০ হাজার পরিবারের জীবিকা

নোয়াখালী: নোয়াখালী সদর উপজেলার পশ্চিমাঞ্চলে প্রায় দেড়শ’ বছর ধরে আবাদ হচ্ছে হোগলা পাতার। দেখতে ধান গাছের মতো মনে হলেও উচ্চতায় ১২ ফুট পর্যন্ত হতে পারে এ পাতা।

হোগলা থেকে তৈরি হচ্ছে কুটির শিল্পের নানা পণ্য। যা দেশের গণ্ডি পার হয়ে যাচ্ছে বিদেশে। নিজ উদ্যোগে এসব পণ্য তৈরি করছেন স্থানীয়রা। কৃষি বিভাগের সহযোগিতা এবং ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের মাধ্যমে প্রশিক্ষণসহ প্রণোদনা পেলে হোগলা পাতায় প্রসার ঘটবে নানা সম্ভাবনার।

জেলার সদর উপজেলার পশ্চিমাঞ্চলের চরমটুয়া, আন্ডারচর, পূর্ব চরমটুয়া, কালাদরাফ ও কাদিরহানিফ ইউনিয়নের অন্তত অর্ধশত গ্রামের দেড় হাজার একর জমিতে আবাদ হচ্ছে হোগলা পাতা। দেখতে ধান পাতার মতো মনে হলেও এর উচ্চতা সর্বনিম্ন ৫ এবং সর্বোচ্চ ১২ ফুট পর্যন্ত হয়।

প্রায় দেড়শ’ বছর ধরে হোগলা আবাদ হচ্ছে এ অঞ্চলের জমিতে। নির্দিষ্ট সময়ে জমি থেকে কাঁচা পাতা কেটে তা শুকিয়ে তৈরি করা হচ্ছে দড়ি ও চাটাইসহ নানা সামগ্রী। আর এসব তৈরির সঙ্গে যুক্ত আছেন অন্তত ২০ হাজার পরিবারের লাখো নারী-পুরুষ।

বছর জুড়ে হাতে তৈরি হোগলার চাটাই ও দড়ি বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন তারা। স্থানীয়রা বলছেন, শুধু পণ্য উৎপাদন নয়, হোগলা গাছের হোগল ফলও ভালো মূল্যে বিক্রি হচ্ছে বাজারে। এ হোগল ফলের পাউডার পায়েস, সুপ ও শিশু খাদ্য হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।

হোগলার পাতার তৈরি দড়ি ও চাটাই স্থানীয় বাজার থেকে পাইকারদের মাধ্যমে চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। সেখানে হোগলার দড়ি থেকে তৈরি হচ্ছে সোফা, টুকরি, ঝুড়িসহ কুটির শিল্পের বিভিন্ন পণ্য। যা রপ্তানিকারকদের মাধ্যমে দেশ ছাড়িয়ে যাচ্ছে কানাডা, চীন, জাপান, সিঙ্গাপুর ও ইতালিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। পাইকারদের মতে, শুধু গ্রাম থেকেই বছরে অর্ধশত কোটি টাকার পণ্য যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়।

এমন কর্মযজ্ঞের কিছুই জানা নেই স্থানীয় কৃষি বিভাগ এবং ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের। ফলে প্রণোদনা বা অন্য কোনো সরকারি সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন উৎপাদনের সঙ্গে যুক্তরা। যদিও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, খোঁজ নিয়ে তাদের ভবিষ্যতে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

নোয়াখালী বিসিক এর ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মাহবুব উল্যাহ্ জানান, হোগলা পাতার বিষয়ে আমরা বিস্তারিত খোঁজখবর নিয়ে কৃষকদের ঋণ সহায়তার আওতায় নিয়ে আসব।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. শহীদুল হক জানান, হোগলা পাতাকে এখনো কৃষিপণ্য হিসেবে গণ্য হয় না। হোগলা পাতা নিয়ে যে সম্ভাবনা দেখছি, তাতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে হোগলা পাতাকে কৃষিপণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সুপারিশ করবো। সেই সঙ্গে কৃষি প্রণোদনার উদ্যোগও নেব।

হোগলা আবাদকারী, চাটাই ও দড়ি তৈরিকারীদের কুটির শিল্পের আওতায় এনে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা দিলে এ অঞ্চলের মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার আরও উন্নয়ন হবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

বাংলাদেশ সময়: ১২০৯ ঘণ্টা, জুন ১২, ২০২২
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।