ঢাকা: বাংলাদেশ ফল উৎপাদনে বিশ্বে সফলতার উদাহরণ হয়ে উঠেছে। এ মুহূর্তে বিশ্বে ফলের উৎপাদন বাড়ার সর্বোচ্চ হারের রেকর্ড বাংলাদেশের।
তিনি বলেন, গত ১২ বছরে ফলের উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি ২২ শতাংশ। ফলে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু দানাজাতীয় শস্য গ্রহণের পরিমাণ কমেছে ও মাথাপিছু ফল গ্রহণের পরিমাণ বেড়েছে। ২০০৮-০৯ সালে দেশে ফলের উৎপাদন ছিল প্রায় ১ কোটি টন। আর বর্তমানে ফলের উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ১ কোটি ২২ লাখ টন। ২০০৬ সালে মাথাপিছু ফল গ্রহণের হার ছিল ৫৫ গ্রাম, যা বেড়ে এখন হয়েছে ৮৫ গ্রাম।
সোমবার (১৩ জুন) সচিবালয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে জাতীয় ফল মেলা-২০২২ উপলক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে কৃষিমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এ সময় কৃষিসচিব মো. সায়েদুল ইসলাম, মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সংস্থাপ্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মৌসুমি ফল উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশের তালিকায় নাম লিখিয়েছে বাংলাদেশ। কাঁঠাল উৎপাদনে বিশ্বে দ্বিতীয়, আমে সপ্তম, পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম, পেঁপেতে ১৪তম স্থানে আছে বাংলাদেশ। নিত্যনতুন ফল চাষের দিক থেকেও বাংলাদেশ সফলতা পেয়েছে। ২০ বছর আগে আম আর কাঁঠাল ছিল এ দেশের প্রধান ফল। এখন বাংলাদেশে ৭২ প্রজাতির ফলের চাষ হচ্ছে, যা আগে হত ৫৬ প্রজাতির।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকারের সময়োপযোগী নীতি প্রণয়ন এবং তা যথাযথভাবে বাস্তবায়নের ফলে কৃষি উৎপাদন ও খাদ্য নিরাপত্তায় বাংলাদেশ অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ হ্রাস, জনসংখ্যার আধিক্য, জমিতে লবণাক্ততা ইত্যাদি চ্যালেঞ্জের মধ্যেও বাংলাদেশ আজ দানাদার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। পাশাপাশি ফল উৎপাদনেও এ সাফল্য অর্জিত হয়েছে।
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বর্তমান সরকার এখন সব মানুষের জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্য নিশ্চিত করতে কাজ করছে। এক্ষেত্রে ফল ও ফলদ বৃক্ষের গুরুত্ব অপরিসীম। মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণে ফলের উৎপাদন যেমন বাড়াতে হবে তেমনি নিরাপদ ফল চাষে গুরুত্ব দিতে হবে। একইসঙ্গে ফলমূলকে পচনের (২৫-৪০ শতাংশ) হাত থেকে বাঁচাতে আমাদের সংগ্রহত্তোর ব্যবস্থাপনা ও প্রক্রিয়াজাত সম্পর্কে অবগত থাকতে হবে। এসব বিষয়ে ফলের উৎপাদনকারী বা চাষি, পরিবহনকারী, প্রক্রিয়াজাতকারী, ভোক্তাসহ সবার সচেতনতা অত্যন্ত প্রয়োজন। এ লক্ষ্যেই কৃষি মন্ত্রণালয় জাতীয় ফল মেলার আয়োজন করে থাকে।
বর্তমানে একজন পূর্ণ বয়স্ক ব্যক্তির দৈনিক ফলের চাহিদা ২০০ গ্রামের বিপরীতে প্রাপ্যতা হলো ৮৫ গ্রাম। সেজন্য ফলের উৎপাদন বাড়ার পাশাপাশি পরিবেশসম্মত নিরাপদ ফল উৎপাদনেও গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে বলে জানান মন্ত্রী।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমাদের বিজ্ঞানীরা দেশে চাষ উপযোগী ৩০টি বিভিন্ন প্রজাতির ফলের ৬৫টি উন্নত জাত উদ্ভাবন করেছেন। দেশীয় ফলের সঙ্গে স্ট্রবেরি, রাম্বুটান, ড্রাগন ফল, এভোকেডো প্রভৃতি বিদেশি ফলের চাষে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। দেশের পাহাড়ি অঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলের অনেক জায়গায় কাজুবাদাম ও কফি চাষের সম্প্রসারণ হচ্ছে।
মন্ত্রী বলেন, দেশে প্রতিবছর সংগ্রহোত্তর পর্যায়ে সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে ফসল ভেদে ক্ষতির/নষ্টের পরিমাণ ২৫-৪১ শতাংশ। সঠিক সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এ ক্ষতি কমানোর লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। এছাড়া দেশে প্রায় ৩ কোটি ২১ লাখ বসতবাড়ির অধিকাংশ বাড়িতে অবহেলা ও অযত্নে ফল গাছ জন্মে থাকে। এগুলোর বেশির ভাগই স্থানীয় অনুন্নত জাত ও বীজ থেকে উৎপন্ন বিধায় এদের ফলন অত্যন্ত কম। এখানে উন্নত জাতের ফলের চাষ সম্প্রসারণে কাজ চলমান আছে।
তিনি বলেন, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৭৯০ মেট্রিক টন আম ও ৮ টন লিচু রপ্তানি হয়েছে। অন্যদিকে দেশীয় ফল উৎপাদনে প্রত্যাশিত অগ্রগতিতেও বিদেশি ফলের আমদানি করতে হচ্ছে। দেশে মোট আমদানি ফলের প্রায় ৮৫ শতাংশই আপেল, কমলা, মাল্টা ও আঙুরের দখলে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ২০২০-২১ অর্থবছরে আমদানি করতে হয়েছে ৮ লাখ ২৪১ মেট্রিক টন। তবে দেশেও এখন সীমিত পরিসরে কমলা ও মাল্টার চাষ হচ্ছে।
গত ২ বছর করোনা মহামারির কারণে জাতীয় ফল মেলা করা সম্ভব হয়নি। এ বছর রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ চত্বরে আগামী ১৬ জুন থেকে জাতীয় ফল মেলা শুরু হবে। মেলা চলবে আগামী ১৮ জুন পর্যন্ত। এবারের প্রতিপাদ্য ‘বছরব্যাপী ফল চাষে, অর্থ পুষ্টি দুই-ই আসে’। মেলা প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। মেলায় আসা দর্শনার্থীরা ফল চাষের বিভিন্ন প্রযুক্তি সম্পর্কে জানতে ও রাসায়নিকমুক্ত বিভিন্ন জাতের ফল ক্রয় করতে পারবেন। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আম, লিচু, কাঁঠালসহ বিভিন্ন দেশি ফলের প্রদর্শনীর মাধ্যমে মেলায় অংশগ্রহণ করবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৭ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০২২
জিসিজি/আরবি