গাইবান্ধা: পুষ্টিগুণে ভরপুর খেজুরের বিশেষ কদর রয়েছে সারা বিশ্বের মুসলমানদের কাছে। বিশেষ করে রমজান মাসে এর চাহিদা বহুগুণে বেড়ে যায়।
বাজারে নানা জাতের খেজুর পাওয়া গেলেও রোজাদারদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে থাকে আজওয়া জাতের খেজুর।
মরুপ্রধান দেশ সৌদি আরবের বিখ্যাত সেই আজওয়া জাতের খেজুর চাষ হচ্ছে উত্তরের জেলা গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায়।
শহর থেকে ৬ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে উপজেলার গুমানীগঞ্জ ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর ছয়ঘড়িয়া গ্রামে আজওয়া, মরিয়ম, খোরমা, বরই, বারিহীসহ নানা জাতের খেজুর চাষ করছেন পঞ্চাশ বছরের কৃষক জাহিদুল ইসলাম। স্ত্রীর নামে বাগানের নাম রেখেছেন ‘নার্গিস নার্সারি’।
শুধু খেজুরই নয় তার বাগানে চাষ হচ্ছে বিশ্বখ্যাত জাপানি মিয়াজাকি বা সূর্যডিম, কিং অব চাকাপাত, চাইনিজ চ্যাঙমাই, আমেরিকান পালমার, ব্রুনাই কিংসহ নানা প্রজাতির আম।
ব্যতিক্রমধর্মী এমন উদ্যোগে এই দম্পতির সংসারে স্বচ্ছলতা ফেরার পাশাপাশি খুলেছে সম্ভবনার এলাকার বেকারদের কাছে তারা হয়ে উঠেছেন প্রেরণার উৎস। তাদের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে এলাকার অনেকে এ পেশায় এগিয়ে আসছেন। ফলে তাদের গ্রামটি নার্সারি গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এলাকার শতাধিক বিঘা জমিতে গড়ে উঠেছে ছোট-বড় প্রায় অর্ধশত নার্সারি। যা কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে হাজারো নারী-পুরুষের।
সৌদি খেজুর আর জাপানি আম দেখতে প্রতিদিন আশপাশের ও দূরের মানুষ ভিড় করছেন সফল কৃষক জাহিদুল ইসলামের বাগানে। তাদের মধ্যে থাকছেন দর্শনার্থী, ক্রেতা ও পরামর্শ প্রার্থী।
জানতে চাইলে জাহিদুল বলেন, আড়াই যুগেরও বেশি সময় ধরে নতুন নতুন জাতের নানা প্রকার ফলের চারা ও ফল উৎপাদন করছি। শুরুটা ছিল ২০ শতক জমিতে বিভিন্ন জাতের ২০-২৫টি চারা দিয়ে। এরই ধারাবহিকতায় ১০ বছর আগে বাজার থেকে সৌদি আরবের খেজুর খেয়ে সেই বীজ সংরক্ষণ করি। পরবর্তীতে পবিত্র হজে গিয়ে সৌদি আরব থেকে খেজুরের চারা সংগ্রহ করে দেশে ফিরে তিন বিঘা জমিতে লাগাই।
তিনি আরও জানান, শুরুতে বিশেষ প্রক্রিয়ায় বস্তার বেডে লাগানো চারাগুলোতে দীর্ঘ নয় বছরেও ফুল আসেনি। এরপর গত বছর ২৫০টি চারা তুলে মাটিতে নতুন করে রোপণ করা হয়। এবার সেসব গাছে ফুল-ফল আসা শুরু করেছে। পাশাপাশি প্রায় সব গাছের গোড়া থেকেই একাধিক পার্শ্বচারা বের হচ্ছে।
বর্তমানে এসব পার্শ্বচারা বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। বীজের চারার চেয়ে এসব পার্শ্বচারায় নিশ্চিতভাবে আরও বেশি খেজুর ফলবে বলে আশাবাদী তিনি।
রংপুর বিভাগে তার নার্সারিতেই প্রথম এ খেজুর ফলেছে দাবি করে তিনি আরও বলেন, সাধারণত মাঘ মাস থেকে গাছে মুকুল আসতে শুরু করে চৈত্র মাস পর্যন্ত আসে। এবছর তারগাছগুলোতে সন্তোষজনক পরিমাণে খেজুর ধরেছে।
জাহিদুল ইসলাম জানান, বর্তমানে তার বাগানের পরিধি ছয় একর ছাড়িয়েছে। বিস্তৃর্ণ এ জমিতে ২৪৯টি খেজুর গাছ রয়েছে। এছাড়া আমসহ ছোটবড় সব মিলে বাগানে নানা জাতের প্রায় ২ হাজারেও বেশি ফল গাছ ও চারা রয়েছে। এসব চারা ও ফল বিক্রি করে প্রতিবছর ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা আয় করছেন।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৈয়দ রেজা-ই-মাহমুদ বাংলানিউজকে জানান, জাহিদুল ইসলাম একজন সফল-আদর্শ চাষি। তিনি নানাবিধ দেশি ফলের পাশাপাশি বিদেশি খেজুর-আম চাষ করে এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন। তার সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে এলাকার অনেকেই নার্সারি পেশায় জড়িয়ে পড়ছেন। তাকে সম্ভাব্য সব ধরনের সহযোগিতা ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৪ ঘণ্টা, ১৫ জুন, ২০২২
এমএমজেড