ঝিনাইদহ: বিদেশি ফল অ্যাভোকাডো পুষ্টিগুণে ভরা। যা পাকলে মাখনের মতো স্বাদ।
মানবদেহের জন্য উপকারী, তাই এ ফলের চাষ বিশ্বে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু পৃথিবীর উন্নত রাষ্ট্রগুলোতে চাষ করা হলেও অ্যাভোকাডোর বাণিজ্যিক চাষ এদেশে একেবারেই নতুন। তবে ঝিনাইদহের হারুন অর রশিদ মুছা নামে এক স্কুলশিক্ষক বাণিজ্যিকভাবে বিদেশি এ ফলের চাষ করে বেশ লাভবান হয়েছেন। যা দেখে এখন আশপাশের কৃষকেরাও ঝুঁকে পড়ছেন।
হারুন অর রশিদ মুছা ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদপুর উপজেলার কাগমারী গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে। তিনি স্থানীয় কাগমারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ধর্মীয় বিষয়ের শিক্ষক।
হারুন অর রশিদ মুছা বাংলানিউজকে জানান, তার বাবা ছিলেন গ্রামের মধ্যে একজন বড় কৃষক। তাই ছোট বেলা থেকেই তিনি লেখাপড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ফল ফলাদির গাছ লাগাতেন।
তারা দুই ভাই ও তিন বোন। বোনেদের বিয়ে হয়ে গেছে। আর ছোট ভাই ইসমাইল হোসেন মাস্টার্স শেষ করে তাকে সাহায্য করছেন কৃষি কাজে।
তিনি জানান, গ্রামের স্কুলেই চাকরি করেন। ফলে ছুটির পরে কৃষি কাজে বেশ সময় দিতে পারেন। পৈত্রিক সূত্রে ২০ বিঘা জমি পেয়েছেন। এসব জমিতে ফলের চাষ করে কমপক্ষে আরও ১৫ বিঘা জমি কিনেছেন। ২০০৫ সালে তিনি ঝিনাইদহ জেলায় প্রথম বাউকুল চাষের মাধ্যমে অনেক লাভ করেছিলেন। ওই বছর তিনি মোট ছয় বিঘা জমিতে বাউকুলের চাষ করে প্রায় ২০ লক্ষাধিক টাকা আয় করেন। এরপর থেকে তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। প্রতি বছরই বিভিন্ন ধরনের ফল চাষ করে আসছেন। তবে ২০১৯ সালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণার সাবেক মহাপরিচালক এনামুল হকের সহযোগিতায় বিদেশি ব্যয়বহুল অ্যাভোকাডোর চারা এনে রোপণ করেন। গত দুই বছর ধরে তার গাছে অ্যাভোকাডো ধরছে। এখন তার বাগানে প্রায় ২৫০ অ্যাভোকাডো গাছ রয়েছে। যার বেশিরভাগেই এ বছর ফল এসেছে। এবার তিনি প্রতি কেজি ৫০০ টাকা দরে করে বিক্রি করছেন। যা বিদেশে মিশন থেকে ফিরে আসা সেনা সদস্যরা ছাড়াও ঢাকা, ময়মনসিংহ, বরিশাল, রংপুরসহ বিভিন্ন জেলার ফল ব্যবসায়ীরা অনলাইনে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। নিজেদের বাড়ির সঙ্গে লাগোয়া প্রায় পাঁচ বিঘা জমিতে অ্যাভোকাডো ছাড়াও সাদা ড্রাগন, পারসিমন, লংগান (কাঠলিচু), সাদা জাম, গোলাপ জাম, মালবেরি, ব্লাকবেরি, সুইটলেমন, প্যালেস্টাইন ইজরাইল বাতাবি লেবু, চায়না বাতাবি লেবু, করোসল, মিশরীয় কমলা, দার্জিলিং লেবু, ব্লাক গেন্ডারিসহ কমপক্ষে ২৫ ধরনের বিদেশি পুষ্টিকর ফলের চাষ করেছেন। তার মধ্যে উচ্চ ফলনশীল জাতের ড্রাগনই রয়েছে কয়েক ধরনের।
এছাড়া এ বছর দুই বিঘা জমিতে ব্লাক গেন্ডারি, আট বিঘা জমিতে উন্নত লাল ড্রাগন চাষ করেছেন তিনি। আবার উন্নত জাতের ড্রাগন ও অ্যাভোকাডোর চারাও বিক্রি করছেন। তার বাগানের একেকটি অ্যাভোকাডোর চারা বিক্রি হচ্ছে ১২০০ টাকা করে।
হারুনের বাগানের শ্রমিক মো. গোলাম রসুল বাংলানিউজকে বলেন, অনেক দিন ধরে আমরা আটজন শ্রমিক প্রতিদিন হারুন অর-রশিদ মুছা ভাইয়ের জমিতে কাজ করছি। এখান থেকে প্রতিদিন একেকজন ৩৫০ টাকা করে পারিশ্রমিক পাই, তা দিয়ে আমাদের সংসার চলে। মুছা ভাইয়ের মতো আরও অনেকে যদি এ ধরনের অ্যাভোকাডো বাগান করে, তাহলে এলাকার অনেক বেকার যুবক আমাদের মতো কাজ করে সংসার চালাতে পারবে।
এ ব্যাপারে কোটচাঁদপুর উপজেলা কৃষিকর্মকর্তা মহসীন আলী বাংলানিজকে জানান, হারুন অর রশিদ মুছা একজন স্কুলশিক্ষক। চাকরির পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন ফলের চাষ করে আসছেন। তিনি অনেক বিদেশি পুষ্টিকর ফলের চাষ করেছেন। তার মধ্যে মেক্সিকান জাতের অ্যাভোকাডো অন্যতম।
তিনি বলেন, অ্যাভোকাডো ফল পুষ্টিগুণে ভরা। এ ফল বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্তদের পথ্য হিসেবে কার্যকর। এ ফলে মানবদেহের জন্য উপকারী ফ্যাট রয়েছে। যা শরীর গঠনের জন্য উপকারী।
এ কৃষিবিদ আরও বলেন, আমদানি নির্ভর ফল হওয়ায় এ ফলের দাম সব সময় বেশি থাকে। বিভিন্ন বাজারে এখন প্রতি কেজি অ্যাভোকাডো ৮০০ থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অ্যাভোকাডো চাষের জন্য এ দেশের মাটি ও আবহাওয়া বিশেষ উপযোগী হওয়ায় দেশে এ ফল চাষের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাময়। আমরা হারুনের বাগানের নিয়মিত খোঁজ খবর রাখছি এবং তাকে বিভিন্ন পরমর্শ দিয়ে আসছি।
বাংলাদেশ সময়: ০৭২৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০২২
এসআই