ঢাকা, শনিবার, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১, ২৭ জুলাই ২০২৪, ২০ মহররম ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

কবি আসাদ চৌধুরী: জীবন ও কর্ম

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ৫, ২০২৩
কবি আসাদ চৌধুরী: জীবন ও কর্ম

ঢাকা: বিংশ শতাব্দীর ষাটের দশকের কবি আসাদ চৌধুরী বাংলাসাহিত্যে স্বতন্ত্র কাব্য ভাষা তৈরি করে নিজস্বতা অর্জন করেছেন। শিশু সাহিত্যিক হিসেবেও তাঁর সুখ্যাতি রয়েছে।

বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর কাছে তিনি ব্যাপকভাবে পরিচিত। কালের সীমা অতিক্রম করে হয়েছেন কালোত্তীর্ণ।

আসাদ চৌধুরী একাধারে কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও আবৃত্তিকার। আধুনিক বাংলা কবিতার অন্যতম প্রধান কবি। সাহিত্যে তিনি গণমুখী, নান্দনিক ও রোমান্টিক। স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে বাংলার লোকায়ত জীবন সবই তাঁর লেখায় স্পষ্ট করে ফুটিয়ে তুলেছেন।

আসাদ চৌধুরীর সাহিত্য সম্ভার সব ধরনের মানুষের পছন্দ। তথ্য ও ভাবনার রসদ পান সব বয়সের পাঠক। বাংলাসাহিত্যে তাঁর সৃষ্টি ও কাজের ব্যাপ্তি একটি লেখায় বোঝানো সহজ নয়। তাঁর কবিতা বা প্রবন্ধ পড়েই কেবল মননের গভীরতা উপলব্ধি করা সম্ভব হতে পারে।

বাংলাসাহিত্যের পুরোধা ব্যক্তিত্ব ও জনপ্রিয় এই কবি আসাদ চৌধুরী আর নেই। বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) কানাডার টরোন্টোতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।

প্রথম কবিতার বই ‘তবক দেওয়া পান’–এ পরিচিতি পান কবি আসাদ চৌধুরীর। সাহিত্যে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি ১৯৮৭ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও ২০১৩ সালে একুশে পদক লাভ করেন।

কবিতা আবৃত্তির মাধ্যমে জায়গা করে নিয়েছেন মানুষের মনে কবি আসাদ চৌধুরী। তার বাচনভঙ্গি, টেলিভিশনের বিভিন্ন অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও উপস্থাপনার জন্যও সর্বমহলে পরিচিত তিনি। মৌলিক কবিতা ছাড়াও শিশুতোষ গ্রন্থ, ছড়া, জীবনী ও অনুবাদ করেছেন। তিনি কবি আল মাহমুদ পরিষদের সভাপতি ছিলেন।

১৯৮৩ সালে তার রচিত ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ’ শীর্ষক বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। এ ছাড়া একই বছর তিনি সম্পাদনা করেন বঙ্গবন্ধুর জীবনী ভিত্তিক গ্রন্থ ‘সংগ্রামী নায়ক বঙ্গবন্ধু। ’

তিনি পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক আইন পরিষদের সদস্য ছিলেন এবং আওয়ামী লীগের একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্যও ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার ব্যক্তিগত সখ্যও ছিল। তার বাবা আরিফ চৌধুরীর মৃত্যুর পর তার কবরের পাশে দাঁডিয়ে বঙ্গবন্ধু কবি আসাদের কাঁধে হাত রেখে সাহস জুগিয়েছিলেন এবং প্রয়োজনে তার পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

কবি আসাদ চৌধুরী ১৯৫৭ সালে আরমানিটোলা সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬০ সালে বরিশালের ব্রজমোহন কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকে যাওয়ার পর কলেজে অধ্যাপনার মধ্য দিয়ে কবি আসাদ চৌধুরীর চাকরিজীবন শুরু করেন। ১৯৬৪ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজে শিক্ষকতা করেন। পরে ঢাকায় থিতু হয়ে তিনি বিভিন্ন খবরের কাগজে সাংবদিকতা করেন। ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত তিনি ‘ভয়েস অব জার্মানি’র বাংলাদেশ সংবাদদাতার দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৭৩ সালে ঢাকায় বাংলা একাডেমিতে যোগদান করে দীর্ঘকাল চাকরির পর প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক হিসেবে অবসর নেন। উত্তর আমেরিকায় বাংলা সাহিত্যের অগ্রযাত্রা এবং সেখানকার সাহিত্যানুরাগীদের বাংলা ভাষা ও কৃষ্টিতে আকৃষ্ট করতে তার অবদান অসীম ও অনস্বীকার্য।

কবি আসাদ চৌধুরী ১৯৪৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার উলানিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মোহাম্মদ আরিফ চৌধুরী এবং মায়ের নাম সৈয়দা মাহমুদা বেগম।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৫, ২০২৩
এইচএমএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।