ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

প্রতিদিনের ধারাবাহিক

১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ২ কিস্তি ৪৬) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন

অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৩ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০১৫
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ২ কিস্তি ৪৬) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন

George_Orwell_inner১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।

২০০৪ সালে ‘দি গার্ডিয়ান’র জরিপে উপন্যাসটি বিশ্বের চিরায়ত গ্রন্থের তালিকায় উঠে আসে সবার উপরে। ইংরেজি ভাষার এই উপন্যাসটি কালজয়ী হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। যাতে ফুটে উঠেছে সমসাময়িক বিশ্ব রাজনীতি, যুদ্ধ, শান্তির প্রেক্ষাপট। বাংলানিউজের জন্য বইটি বাংলায় অনুবাদ করছেন মাহমুদ মেনন। উল্লেখ্য, জর্জ অরওয়েলের মূল নাম এরিক আর্থার ব্লেয়ার। ১৯০৩ সালের ১৫ জুন ব্রিটিশ ভারতের বিহার রাজ্যের মথিহারিতে জন্মগ্রহণ করেন। মৃত্যুবরণ করেন লন্ডনে ১৯৫০ এর ২১ জানুয়ারি। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস ‘দি রোড টু উইগ্যান পাইয়ার’, ‘হোমেজ টু ক্যাটালোনিয়া’, ‘এনিম্যাল ফার্ম’।

___________________________________

শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন

দ্বিতীয় খণ্ডের ৪৫তম কিস্তি

___________________________________

ক্ষণে ক্ষণে জনতার রোষ আর চিৎকার স্পিকারের শব্দ ছাপিয়ে এক হিংস্র পশুর গোঙানিতে রূপ নিচ্ছিল। যা নিয়ন্ত্রণহীনভাবে তুঙ্গ থেকে আরও তুঙ্গে উঠে হাজার কণ্ঠে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। সবচেয়ে আদিম আর অসভ্যের চিৎকার ভেসে আসছিল স্কুল শিশুদের দিক থেকে। বক্তব্য চলছে তখন প্রায় বিশ মিনিট ধরে। ঠিক তখনই এক বার্তাবাহক হুড়মুড়িয়ে ঢুকলেন মঞ্চে আর বক্তার হাতে গুঁজে দিলেন একটি চিরকূট।



তিনি ওটি খুললেন আর বক্তব্যের গতিতে সামান্য ছেদ না টেনেই চিরকূটের লেখাটি পড়ে গেলেন। তার কণ্ঠেও এলো না সামান্য পরিবর্তন, অথবা যে কথাগুলো তিনি বলে আসছিলেন তার গতিও থেকে গেল অপরিবর্তিত। কেবল পাল্টে গেল কতিপয় নাম। কোনও শব্দ অনুচ্চারণেই জনতার দিক থেকে যে অভিব্যক্তি এলো তা যেন বলে দিল তারা বুঝে নিয়েছে। ওশেনিয়ার যুদ্ধ চলছে ইস্টেশিয়ার বিরুদ্ধে!

পরক্ষণেই ভেসে এলো আরও উচ্চস্বরের শোরগোল। এই চৌরাস্তা যেসব ব্যানার আর পোস্টার দিয়ে সাজানো তার সবই ভুল। অর্ধেকেরও বেশি পোস্টারে ভুল মানুষের মুখ। বলা হলো এটা অন্তর্ঘাতমূলক! গোল্ডস্টেইনের চরেরা এই কাজ করেছে। আর তখন দাঙ্গাময় একটি ছোট বিরতি মিলল যখন পোস্টারগুলো দেয়াল থেকে ছিঁড়ে নামিয়ে ব্যানারগুলো টেনে ছিঁড়ে ফেলে পায়ের নিচে দলাতে শুরু করল বিক্ষুব্ধ জনতা। স্পাইজের সদস্যরা অগ্রভাগে থেকে বাড়ির ছাদগুলো বেয়ে বেয়ে উঠে নিশান টাঙানো রশিগুলো কেটে কেটে চিমনির মধ্যে ফেলল। আর মাত্র দুই কি তিন মিনিটের মধ্যেই সব বিলিন হয়ে গেল।

বক্তা তখনও মাইক্রোফোনের গলা টিপে ধরে, সামনের দিকে কাঁধ ঝুঁকিয়ে মাথার ওপরে বাতাস খামচাতে খামচাতে কথা বলেই চলেছেন। আরও এক মিনিট ধরে ভিড়ের মধ্য থেকে চিৎকার ধ্বনি ভয়াবহ গর্জন তুলে ছড়িয়ে পড়তে থাকল। ঘৃণা ছড়াতে থাকল ঠিক আগের মতোই, কেবল পাল্টে গেল ঘৃণার লক্ষ্যস্থল। উইনস্টন ভীষণ মুগ্ধ হলো বক্তার ভোল পাল্টানোর ঢংটাতে। সামান্য থমকে না গিয়ে, এতটুকু না থেমে এমনকি বলার ভঙ্গিমাটুকুও না পাল্টে তিনি সম্পূর্ণ বিপরীত লক্ষ্যে বাক্যবাণ ছুঁড়তে লাগলেন। তবে ঠিক ওই মুহূর্তে অপর একটি বিষয় তার ভাবনা জুড়ে বিরাজ করছিল।



যখন পোস্টার আর ব্যানার ছেঁড়াছিড়ি চলছিল ঠিক সেই মুহূর্তেই সম্পূর্ণ অপরিচিত চেহারার এক ব্যক্তি তার কাঁধে হাত রাখলেন আর বললেন, ‘মাফ করবেন, আমার ধারণা আপনি আপনার ব্রিফকেসটি ফেলে এসেছেন। ’ বিনা বাক্যব্যয়ে ব্রিফকেসটি হাতে নিল সে। জানত, আগামী দিন কয়েক এটি খুলে দেখারও সুযোগ হবে না তার। বিক্ষোভ শেষ হওয়ার সাথে সাথে সে সরাসরি ছুটল সত্য মন্ত্রণালয়ের দিকে, যদিও তখন রাত প্রায় এগারোটা। মন্ত্রণালয়ের অন্য সব স্টাফও তার মতো ততক্ষণে মন্ত্রণালয়ে। টেলিস্ক্রিন থেকে এরই মধ্যে এতদসংক্রান্ত নির্দেশ এসে গেছে। অতএব তাদের ডেকে ডেকে আনার আর দরকার নেই।

ওশেনিয়ার যুদ্ধ চলছে ইস্টেশিয়ার বিরুদ্ধে: মানে হচ্ছে ওশেনিয়ার যুদ্ধ সবসমই ছিল ইস্টেশিয়ার বিরুদ্ধে। গেল পাঁচ বছরের রাজনৈতিক সাহিত্যের একটি বড় অংশ এখন পুরোই বাতিল। সব ধরনের প্রতিবেদন, নথি, সংবাদপত্র, বই, পুস্তিকা, চলচ্চিত্র, শব্দ-ট্র্যাক, ছবি—সবকিছুই তড়িৎ গতিতে শুদ্ধিকরণ করতে হবে। কোনও নির্দেশনা জারি হয়নি, তারপরেও সবারই জানা সব বিভাগের শীর্ষকর্তাদের এটাই চাওয়া, এক সপ্তাহের মধ্যে ইউরেশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ, কিংবা ইস্টেশিয়ার সঙ্গে মিত্রতা প্রমাণ করে এমন বক্তব্যের অনুমাত্রও থাকা চলবে না। ভারাবনত এক কর্মযজ্ঞ। প্রকৃত চেহারা আরও জটিল কারণ কাজটি যা, তা আবার বলে-কয়ে করার নয়।

দ্বিতীয় খণ্ডের ৪৭তম কিস্তির লিংক



বাংলাদেশ সময়: ১৭৫১ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।