ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

এদিন আজি কোন ঘরে গো খুলে দিলো দ্বার

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৭
এদিন আজি কোন ঘরে গো খুলে দিলো দ্বার জয়নুল উৎসবে অতিথিরা-ছবি-কাশেম হারুন

ঢাকা: ১৯৭৪ সালের ঘটনা। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে গিয়ে শিল্পের বিকাশে একটি প্রতিষ্ঠান গড়তে চাইলেন। বঙ্গবন্ধু সেদিন তাকে এখনকার চারুকলা ইনস্টিটিউটের জায়গাটি দিলেন। আর বললেন, আপনি যে ঘরে থাকবেন, সেখানে আমার জন্যও একটি খাট পেতে রাখবেন। রাজনীতি করতে করতে যখন ক্লান্ত হয়ে যাবো, তখন এসে আপনার কাছে থাকবো। আপনার ঘরে ঘুমাবো।

একবার বঙ্গবন্ধুকে এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। তিনি আয়োজকদের বললেন-আমি তো সংস্কৃতি অঙ্গনের মানুষ নই।

বুঝিও না। তাই যিনি এ বিষয়ে ভালো বোঝেন তাকে প্রধান অতিথি করো। আয়োজকরা অনেক জোরাজুরি করার পর তিনি বললেন-আচ্ছা যাবো। তবে সেখানে শিল্পী জয়নুল আবেদিন, বিজ্ঞানী মতিন চৌধুরী আর কবি জসিম উদ্দীনকে আনতে হবে।
 
এটা ৬৬ সালের কথা। তখন চারু ও কলা শিল্প মহাবিদ্যালয় ছিল আজকের চারুকলা। তখন একদল ‘ভিন্নধর্মী’ শিক্ষকও ছিলেন। শিক্ষার্থীরা বসন্তবরণ উৎসব করবে শুনেই তারা বলছিলেন-এটা বেহাল্লাপনা হচ্ছে। কিন্তু জয়নুল আবেদিন শিক্ষার্থীদের ডেকে নিয়ে বলেছিলেন, তারা যা বলে বলুক, তোমরা চালিয়ে যাও। সেবারই প্রথম বসন্তবরণ উৎসব হয় চারুকলায়।
 
শিল্পাচার্য বলতেন, চালের দুর্ভিক্ষ নিয়ে তো ছবি এঁকেছি, কিন্তু চাল-চলনের দুর্ভিক্ষ নিয়ে ছবি আঁকতে পারিনি। সাম্প্রদায়িক চেতনার বিকাশ তাকে এভাবে ভাবাতো।
 
শুধু বাংলাদেশ নয়, কলকাতার শিক্ষার্থীদের কাছেও তিনি সমান জনপ্রিয়। তিনি কলকাতা আর্ট কলেজে শিক্ষক থাকাকালে মাটিতে বসে বসে শুধু আঁকতেন। এরপর তিনি বাংলাদেশে এসে নিজে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়লেন। জয়নুল আবেদিন চলে আসায় কলকাতায় আর্ট অনেক ক্ষতির মুখে পড়ে।

সঙ্গীত পরিবেশন করছেন চারুকলার শিক্ষার্থীরা-ছবি-কাশেম হারুন
চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় আয়োজিত ‘জয়নুল উৎসব-২০১৭’ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, ভারত-বাংলাদেশের শিল্পীরা এভাবেই শিল্পাচার্যকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন।
 
‘এদিন আজি কোন ঘরে গো খুলে দিলো দ্বার’ শিরোনামে মাঙ্গলিক সঙ্গীতটি চারুকলার শিক্ষার্থীদের পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় জয়নুল উৎসব।
 
গানের পঙতিমালাগুলো যেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের জন্যই সৃষ্টি। তিনি যেখানে গেছেন, যেভাবে তুলি ধরেছেন একেকটা নতুন ঘরের দ্বার উন্মোচন হয়েছে। কেবল কালো কালিতে শিল্পের এক আশ্চর্য বিকাশ ঘটিয়েছেন তিনি। আধুনিক শিল্পকলায় হয়েছেন পথিকৃৎ।
 
দুই দিনব্যাপী (২৯ ও ৩০ ডিসেম্বর) এ অনুষ্ঠানে রয়েছে পটের গান, পালা-পার্বন শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনী, তথ্যচিত্র প্রদর্শনী, সঙ্গীত ও নৃত্য, জয়নুল মেলা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

উৎসবের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হচ্ছে জয়নুল মেলা। এ মেলায় চারুকলার শিক্ষার্থী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের চারু ও কারু শিল্পীদের তৈরি বিভিন্ন দ্রব্য নিয়েও দেওয়া হয়েছে স্টল।

শিল্পীদের সম্মাননা দেওয়া হচ্ছে-ছবি-কাশেম হারুন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভারতের বিখ্যাত ছাপচিত্র শিল্পী সনদ কর, রফিকুন নবী ও মুস্তফা মনোয়ারকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। তাদের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন সংস্কৃতিমন্ত্রী। এসময় অন্যদের মধ্যে চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন, বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি সেক্টরাল টেকনিক্যাল এ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশনের (বিআইএমএসটিইসি) সেক্রেটারি জেনারেল এম সহিদুল ইসলাম, জয়নুল আবেদিনের ছেলে প্রকৌশলী মঈনুল আবেদিনও উপস্থিত ছিলেন।
 
আসাদুজ্জামান নূর বলেন, গবেষণার ক্ষেত্রে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। এ বিষয়টার প্রতি খেয়াল করতে হবে। বর্তমানে সরকার এ নিয়ে কাজ করছে। সারাদেশের শিল্পীদের জরিপ করা হচ্ছে। তাদের সবাইকে না পারলেও উঁচু মাপের শিল্পীদের ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।
 
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের ১০৩ তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে দু’দিনের উৎসবটি শান্তা মরিয়ম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় আয়োজন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৭
ইইউডি/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।